

শিলচর (অসম), ১ নভেম্বর (হি.স.) : আগামী ৫ নভেম্বর বিকাল ৩-টায় শিলচর পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রতিধ্বনিত হবে পাঁচ হাজার কণ্ঠে সুধাকণ্ঠ ভূপেন হাজরিকার অমর সৃষ্টি ‘মানুষ মানুষের জন্য...’। মহান সংগীতগুরু, ভারতরত্ন ড. ভূপেন হাজরিকার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত হবে এই ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান। মানুষের ঐক্য, প্রেম, মানবতা ও সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা বহন করবে এই মিলনোৎসব, যেখানে যোগ দেবেন জেলার নানা স্তরের মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, এনসিসি, এনএসএস, এএসএলআরএম দল, চা-বাগান শ্রমিক, সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিককুল।
আজ শনিবার শিলচরে অবস্থিত বরাক উপত্যকার তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, আজ শিলচরে জেলা আয়ুক্তের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে জোলাশাসক মৃদুল যাদবের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতি বৈঠক। বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের পদস্থ আধিকারিকগণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের সূচনা করেন অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত (সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগ) ফিলিস হ্রাংসাল। তিনি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, ‘ড. ভূপেন হাজরিকার সংগীত আমাদের সমাজকে মানুষে মানুষে বন্ধনের বার্তা দেয়। তাঁর সৃষ্টি চিরকাল আমাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।’
অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল ৩-টায় জেলাশাসক, বিশিষ্ট অতিথি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পুষ্পার্পণ দিয়ে। এর পরই মঞ্চে উঠবেন পাঁচ হাজার অংশগ্রহণকারী। এক সঙ্গে তাঁরা পরিবেশন করবেন ‘মানুষ মানুষের জন্য...’ গান। পাশাপাশি পরিবেশিত হবে ১৭ মিনিটের এক ‘গ্র্যান্ড কোরাস মেডলি’, যা প্রথমবার শোনা গিয়েছিল গুয়াহাটির শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে।
উল্লেখ্য, শিলচরের পাশাপাশি কাছাড়ের লক্ষ্মীপুর সম-জেলায় একই সময়ে আয়োজিত হবে সমান্তরাল অনুষ্ঠান। সেখানে অংশ নেবেন আরও ৫০০ জন শিল্পী। ৪ নভেম্বর শিলচর পুলিশ প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে গানের মহড়া। প্রশাসনের উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী সবাইকে দেওয়া হবে ডিজিটাল স্বাক্ষরিত অংশগ্রহণের শংসাপত্র। পরে জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে শংসাপত্রগুলি পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিভাগকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক বিদ্যালয়গুলির সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন; শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাকে (ছেলেদের সাদা শার্ট, মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক) উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষকেও অংশগ্রহণকারীর তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বিভাগ প্রস্তুত করছে কঠোর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা। স্বাস্থ্য বিভাগ রাখবে অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসা সহায়তা, আর তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় দেখবে সংবাদ প্রচার ও প্রচারমূলক কাজ। খাদ্য, গণবণ্টন ও ভোক্তা বিষয়ক বিভাগ অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরবরাহ করবে রিফ্রেশমেন্ট প্যাকেট।
রাজ্য সরকারের এসওপি অনুযায়ী জেলা আয়ুক্ত থাকবেন এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল সমন্বয়কারী। স্থানীয় শিল্পী ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা পরিবেশন করবেন ড. হাজরিকার বিখ্যাত গানগুলো। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে এক মানববন্ধন গঠন ও ‘মানুষ মানুষের জন্য...’ গানের সম্মিলিত পরিবেশনার মাধ্যমে। উপস্থিত সকলকে সাদা পোশাকে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে শান্তি, পবিত্রতা ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে।
৫ নভেম্বর বিকেল ৩-টায় অনুষ্ঠেয় অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথির আসন অলঙ্কৃত করবেন অসম সরকারের খাদ্য, গণবণ্টন ও ভোক্তা বিষয়ক, খনি ও খনিজ সম্পদ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়।
সভার শেষে জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বলেন, ‘ড. ভূপেন হাজরিকার গান আমাদের সমাজকে এক সুরে বেঁধে দেয়। তাঁর সংগীত আজও সীমান্ত ও বিভাজনের ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। এই অনুষ্ঠান কেবল তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং তাঁর মানবিক মূল্যবোধ, ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবে।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর সম-জেলার কমিশনার ধ্রবজ্যোতি পাঠিক, ধলাই সম-জেলার কমিশনার রক্তিম বরুয়া, সহকারী কমিশনার বহ্নিখা চেতিয়া, দীপা দাস, অঞ্জলি কুমারী এবং পুলিশ বিভাগের পদস্থ আধিকারিকগণ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস