পৌড়াষ্টমীতে রাঢ় বাংলার উৎকল সমাজে পুঁড়া পূজার উৎসবমুখরতা
বাঁকুড়া, ১২ নভেম্বর (হি.স.) : পৌড়াষ্টমী মানেই রাঢ় বাংলার উৎকল পরিবারগুলির এক বিশেষ দিন। বুধবার বাঁকুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলিতে পালিত হলো এই প্রাচীন লোকাচার ‘পুঁড়া’ বা ‘পঁঢ়ুয়া’ পুজো।ওড়িয়া ভাষায় ‘পুঁড়া’ শব্দের অর্থ ‘প্রথম’। অর্থাৎ পরিবারের জীবিত প্রথম স
পৌড়াষ্টমী তে বাঁকুড়া মেতে পুঁড়া লোকাচারে


পৌড়াষ্টমীতে রাঢ় বাংলার উৎকল সমাজে পুঁড়া পূজার উৎসবমুখরতা


বাঁকুড়া, ১২ নভেম্বর (হি.স.) : পৌড়াষ্টমী মানেই রাঢ় বাংলার উৎকল পরিবারগুলির এক বিশেষ দিন। বুধবার বাঁকুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলিতে পালিত হলো এই প্রাচীন লোকাচার ‘পুঁড়া’ বা ‘পঁঢ়ুয়া’ পুজো।ওড়িয়া ভাষায় ‘পুঁড়া’ শব্দের অর্থ ‘প্রথম’। অর্থাৎ পরিবারের জীবিত প্রথম সন্তানকে উৎসর্গ করেই পালিত হয় এই পুজো। তবে অনেক উৎকল পরিবারে অষ্টম সন্তানকেও পুঁড়া হিসাবে পুজো করা হয়, কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দৈবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান।

জগন্নাথভক্ত উৎকল সমাজের মতে, প্রথম বা অষ্টম সন্তান ‘প্রৌঢ়’ বা ‘পুঁড়া’ সংসারের মূল আশীর্বাদ। পিনাকী রঞ্জন মহান্তি জানান, “আমাদের পরিবারের প্রথম সন্তানকে প্রতি বছর পুঁড়া বসানো হয়। এতে সন্তান নিজের দায়িত্ব ও পারিবারিক বন্ধনের মূল্য শেখে।” এই দিনে বাড়ির উঠোনে তুলসীমঞ্চের সামনে হয় বিশেষ আয়োজন। পিঁড়ি সাজানো হয় ধানের শিষ, কাঁচা হলুদ, সিঁদুর, গাঁদাফুল, কুলপাতা, চালবাটা ও দূর্বা দিয়ে। তাতে রাখা হয় ‘উখুল’ গরুর গোবর দিয়ে তৈরি ছোট ঠাকুর ও ঠাকুরাণী। ছেলেদের জন্য ৯টি, মেয়েদের জন্য ৭টি ‘উখুল’ বসানো হয়। এরপর পঞ্চদেবতা গণেশ, সূর্য, শিব, বিষ্ণু ও দুর্গার পুজো হয়। সবশেষে ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা করে সন্তানদের মঙ্গল কামনা করা হয়। মেয়েরা পরে নতুন ঘুনসী, মাথায় গাঁদাফুলের মালা। সকালে ঘি ও কাঁচা হলুদ বেটে স্নান করানো হয় পুঁড়া সন্তানদের। বাড়িতে তৈরি হয় পিঠে, ক্ষীর, গুড় পোলাও, মিষ্টি আর পাকা কলা, নারকেল ও আটা দিয়ে তৈরি ‘আরসা পিঠে’।

উৎকল সম্প্রদায়ের মতে, এই লোকাচার শুধুই আচার নয়, সামাজিক বার্তা বহন করে। ছেলে বা মেয়ে, উভয়ই সমানভাবে পরিবারের প্রথম আশীর্বাদ। মেঘা মাহান্তি বলেন, “আমি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। প্রতি বছর এই দিনে পুঁড়া বসানো হয় আমাকে। এটা আমাদের সংস্কৃতির এক সুন্দর দিক যেখানে লিঙ্গভেদ নেই, আছে ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ।”প্রসঙ্গত , বাঁকুড়া জেলার প্রায় তিনশোরও বেশি গ্রামে বসবাসকারী উৎকল পরিবারের মধ্যে সৎপথী, মিশ্র, পণ্ডা, পতি, মহাপাত্র, মোহান্তি, পাঠক, কর, ত্রিপাঠী প্রমুখ পদবীর পরিবারগুলোয় আজও একই আন্তরিকতায় পালন করা হয় পৌড়াষ্টমীর এই পুঁড়া পরব।

হিন্দুস্থান সমাচার / সোমনাথ বরাট




 

 rajesh pande