ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা বিষয়ক আলোচনাসভা লরেটো কলেজে
কলকাতা, ১৪ নভেম্বর (হি.স.): লরেটো কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগ এবং সোশিওলজি, হিউম্যান রাইটস ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এবং কলেজের আইকিউএসি-র সহযোগিতায় ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা বিষয়ক এক সেমিনারের হয়ে গেল। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলে
ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা বিষয়ক আলোচনাসভা লরেটো কলেজে


কলকাতা, ১৪ নভেম্বর (হি.স.): লরেটো কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগ এবং সোশিওলজি, হিউম্যান রাইটস ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এবং কলেজের আইকিউএসি-র সহযোগিতায় ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা বিষয়ক এক সেমিনারের হয়ে গেল। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা মৌ দাশগুপ্ত বেদ ও প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানপরম্পরার প্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রজ্ঞার শিকড় নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি তুলে ধরেন।

অধ্যাপিকা দাশগুপ্ত বক্তৃতার শুরুতে বেদের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, বেদ প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চার অন্যতম উৎস। বিশেষ করে ঋগ্বেদ মূলত মৌখিক পরম্পরায় রচিত, যার এক হাজারেরও বেশি স্তোত্র কেবল ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং প্রাচীন ভারতের সাংস্কৃতিক, দার্শনিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিফলন। তিনি বলেন, বেদ জ্ঞানের সাধনায় মানবজাতির “অতুলনীয় নিষ্ঠার” প্রতীক।

তিনি আরও জানান, বৈদিক যুগে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে জ্ঞান অর্জনের ধাপ হিসেবে দেখা হতো। সেই সময় বর্ণব্যবস্থা যোগ্যতা ও শিক্ষার উপর নির্ভর করত। বিশ্বামিত্রের মতো ব্যক্তিত্ব সেই যুগের উদার মানসিকতার উদাহরণ। “ঋত” বা মহাজাগতিক নিয়মকে তিনি প্রকৃতি ও নৈতিকতার চিরন্তন সত্য হিসেবে বর্ণনা করেন। অধ্যাপিকা দাশগুপ্ত বলেন, বেদের গূঢ় ও বহুমাত্রিক প্রকৃতি একাধিক ব্যাখ্যার সুযোগ দেয়, যা চিন্তার বহুত্বকে উৎসাহিত করে। বেদ থেকে কীভাবে ভারতীয় জ্ঞানব্যবস্থার বিভিন্ন শাখা বিকশিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপিকা দাশগুপ্ত বেদাঙ্গ—শিক্ষা, ব্যাকরণ, ঋতুচর্চা প্রভৃতির উল্লেখ করেন। যেগুলি প্রাচীন ভারতের ভাষাতাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক অর্জনের প্রমাণ। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, পাণিনির “অষ্টাধ্যায়ী” বিশ্বখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক লিওনার্ড ব্লুমফিল্ডের কথায় “মানব বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন”। “শুল্বসূত্র”কে তিনি প্রাচীন জ্যামিতি ও পরিমাপবিজ্ঞানের প্রাথমিক নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেন। এছাড়াও চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব ও সংগীতের শিকড়ও বৈদিক সাহিত্যে নিহিত—যেমন জীবকের চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান এবং সামবেদের সংগীতচর্চার ঐতিহ্য। তিনি উল্লেখ করেন, বেদের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি আজও প্রাসঙ্গিক। পরবর্তী কালে মহাভারত ও রামায়ণের মতো মহাকাব্যের মাধ্যমে সেই জ্ঞান আরও বৃহত্তর সমাজে প্রসারিত হয়। এই রচনাগুলি বেদের নৈতিক ও দার্শনিক সত্তাকে সহজভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। ভারতীয় দর্শনের প্রকৃত শক্তি তার উদারতা ও সহনশীলতায় নিহিত—তবে এর বিরোধী মতও কখনও পরিত্যক্ত হয়নি, বরং বৃহত্তর আলোচনায় স্থান পেয়েছে। এই আলোচনাসভায় পড়ুয়া ও শিক্ষকরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ




 

 rajesh pande