শিলচর রেলস্টেশনে অসমিয়া ভাষায় সরকারি পোস্টার, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
শিলচর (অসম), ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে সম্প্রতি অসমিয়া ভাষায় লিখিত একটি সরকারি প্র
শিলচর রেলস্টেশনে অসমিয়া ভাষায় সরকারি পোস্টার, প্রতিবাদে বিক্ষোভ


শিলচর (অসম), ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে সম্প্রতি অসমিয়া ভাষায় লিখিত একটি সরকারি প্রকল্পের পোস্টার লাগানো নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বরাক ডেমোক্র্যাটিক যুব ফ্রন্ট (বিডিওয়াইএফ) এবং সারা বাঙালি ছাত্র যুব সংস্থা (এবসো)-র সদস্যরা। আজ রবিবার শিলচর রেলস্টেশন চত্বরে জমায়েত হয়ে উভয় সংগঠনের পদাধিকারী ও সদস্যরা প্রথমে অসমিয়া ভাষায় লিখিত সরকারি পোস্টারটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেন। এর পর তাদের প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেশন চত্বর।

বিক্ষোভ স্থলে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে যুবফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন, একাদশ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৬১ সালে ত্রিভাষা সূত্র সরকারি ভাবে গৃহীত হয় যে তাতে স্পষ্টতই সরকারি কাজকর্মে ও প্রচার ইত্যদিতে বরাকে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এই ব্যাপারটি বর্তমান সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু তার পরও সরকারি তরফে বার বার এখানে অসমিয়া ভাষায় পোস্টার ইত্যাদি লাগানো মোটেই ভুলবশত নয়। এর পেছনে কু-উদ্দেশ্য রয়েছে। কল্পার্ণব বলেন, দিশপুরের কর্তাব্যক্তিরা এভাবে পেছন দিক দিয়ে বরাককে গোয়ালপাড়া বানাতে চাইছেন।

প্রসঙ্গক্রমে কল্পার্ণব বলেন, কিছুদিন আগে বিজেপি বিধায়ক পরমানন্দ রাজবংশী বরাকে এসে প্রাথমিক স্তরে অসমিয়া বাধ্যতামূলক করার যে কথা বলেছেন সে সবও একই পরিকল্পনার অঙ্গ। কল্পার্ণব বলেন, সরকার দিশপুরের কর্তাদের তরফে এভাবে জোর করে অসমিয়াকরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, বরাকের জনগণ তাই বাধ্য হয়ে ভাষার প্রশ্নে স্পর্শকাতর হয়ে ওঠেছেন। তিনি আরও বলেন, ভেতরে ভেতরে এ সব অপচেষ্টা আর প্রকাশ্যে দুর্গাপূজায় এসে প্যান্ডেলে প্যান্ডলে ঘোরাঘুরি করলে‌ কখনও বরাকের বাঙালিদের হৃদয় জয় করা যাবে না। কল্পার্ণব বলেন, এই উপত্যকায় অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপিত হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পরও স্নায়ুরোগ বা হৃদরোগের কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এজন্য অসংখ্য লোককে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিতে হয়েছে, কত রোগী শিলং বা গুয়াহাটিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পথে মাঝরাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।

মহাসড়কের কাজ ঝুলে আছে। মাল্টি-মডেল লজিস্টিক পার্কের জন্য জমির বন্দোবস্ত হয়নি আজ পর্যন্ত। ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায় ইদানীংকালে নতুন অনেকগুলো মেডিক্যাল কলেজের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অথচ করিমগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজের কাজের কোনও অগ্রগতি নেই। ২০২১-এ দাঁড়িয়ে এ সব জাতিবিদ্বেষের মতো সংকীর্ণ চিন্তা বাদ দিয়ে সরকারকে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারও হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে বরাকে এভাবে পেছন থেকে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দিতে গেলে তার ফল মোটেই ভালো হবে না। এ সব‌ কিছুতেই মানা হবেনা এবং এ সবের প্রতিরোধে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামবে বিডিএফ-এর যুবফ্রন্ট।

ছাত্র সংস্থা এবসো-র কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি রাজু দেব বলেন, যে রেলস্টেশন চত্ত্বর একাদশ শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সেখানে ভাষা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এইসব অবিবেচক কাজ ধিক্কারযোগ্য। তিনি বলেন, এ সব অবিলম্বে বন্ধ না হলে আবার ১৯৬১ সালের আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। উভয় সংগঠনের সদস্যরা এদিন বরাকের জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, যে কোনও স্থানে অসমিয়া ভাষায় পোস্টার নজরে পড়লে একইভাবে নিজের উদ্যোগে তা নষ্ট করে ছিড়ে ফেলতে হবে। এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশে বিডিএফ যুবফ্রন্টের পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব, দেবরাজ দাসগুপ্ত, হৃষীকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য এবং এবসো-র অসম রাজ্য কমিটির সভাপতি অজিত দাস, রাজু দেব, রাজীব দাস, মিঠু দাস, সমর দাস, টিপুল দাস, হারাধন দত্ত প্রমুখ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

হিন্দুস্থান সমাচার / বিশু / সমীপ


 rajesh pande