আদিবাসীদের জীবন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছে এফটিএস, ধর্ম পরিবর্তনেও রাশ
কলকাতা, ১৮ নভেম্বর (হি.স.): বৌদ্ধিক জ্ঞান ও অদম্য সাহসের জোরে, প্রযুক্তির সৌজন্যে ভারত মঙ্গলগ্রহ পর্
শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছে এফটিএস


কলকাতা, ১৮ নভেম্বর (হি.স.): বৌদ্ধিক জ্ঞান ও অদম্য সাহসের জোরে, প্রযুক্তির সৌজন্যে ভারত মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও দেশের সমাজব্যবস্থা এখনও নানাভাবে বৈষম্যে ভরপুর। এই বর্তমান সময়েও গ্রামাঞ্চলের বন্য এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আধুনিকতার মতো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-র বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সহায়ক সংস্থা ফ্রেন্ডস অফ ট্রাইবাল সোসাইটি (এফটিএস) শতাব্দী ধরে বঞ্চিত এই আদিবাসীদের শিক্ষাগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের নতুন গল্প লিখে চলেছে। এফটিএস-এর প্রচেষ্টার কারণেই আদিবাসীদের ধর্মান্তরিত করার ষড়য্ন্ত্রও থমকে গিয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীতেও বাংলা, বিহার, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে বসবাসকারী আদিবাসীদের লক্ষ-লক্ষ শিশুর জীবন জঙ্গলের অন্ধকারেই কেটে যাচ্ছিল। এখন এই আদিবাসীদের সন্তানরা জঙ্গলে জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও, সভ্য সমাজে নিজেদের মেধার প্রমাণ দিয়ে নতুন নতুন সাফল্যের গল্প লিখছে। যদিও এই অর্জনের চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল ৩২ বছর আগে ১৯৮৯ সালে। এফটিএস-এর বেঙ্গল ইউনিটের প্রধান নির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেছেন, জনজাতীয় সমাজের শিশুদের শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশের জন্য ১৯৮৯ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এফটিএস। আদিবাসীদের মাঝে থেকে কাজ করার দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল সঙ্ঘের বর্ষীয়ান নেতাদের। এর কারণ হল, খ্রিস্টান মিশনারিরা তাঁদের অর্থ, চিকিৎসা প্রভৃতির প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের খ্রিস্টান ধর্মে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছিল। এই বিপদ বুঝতে পেরে, সঙ্ঘের নেতারা আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এবং তাঁদের মূল স্রোতের ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন এবং ফ্রেন্ডস অফ ট্রাইবাল সোসাইটি (এফটিএস) প্রতিষ্ঠা করেন। তখন আদিবাসী সমাজ যা কিছু কৃষিকাজ করত অথবা কারিগরী করে কিছু তৈরি করলে তা খুবই কম দামে কেনা হত।

একক বিদ্যালয় বনবাসীদের শিক্ষার মন্দির

এফটিএস-এর বেঙ্গল ইউনিটের প্রধান নির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেছেন, আদিবাসী সমাজের প্রগতির কথা মাথায় রেখে ‘একক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এই বিদ্যালয়ের স্বরূপ এমনভাবে রাখা হয়েছিল যে একটি গ্রামের জন্য একটি বিদ্যালয় খোলা হয়েছিল এবং তাতে একজন আচার্য অর্থাৎ শিক্ষক রাখা হয়েছিল। শিক্ষিত মানুষেরা শহরে চলে যেতেন। সেজন্য যদি একটা বড় স্কুল খুলে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের কথা ভাবা হয়, তাহলে শিক্ষক পাওয়া যেত না। সেজন্য একটি গ্রামে একটি স্কুল এবং একজন শিক্ষকের প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে সারা দেশে ৬০টি একক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে ৩২ বছর পরও গোটা দেশে এই ধরনের বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৯ হাজার ৯৮৩টি। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই তিন হাজার ৫৪৯টি একক স্কুল রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের শিশুদের জাতীয়তাবাদে নিবেদিত চরিত্র নির্মাণ-সহ সব ধরনের অত্যাধুনিক শিক্ষা দেওয়া হয়। নির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে এই সমস্ত স্কুল থেকে বেরিয়ে আসা শিশুরা শুধু ভারত ও দেশের অন্যান্য রাজ্যে নয়, বিদেশেও সাফল্যের পতাকা তুলেছে।

বেতন পান না সংগঠনের কর্মকর্তারা

নির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেছেন, এফটিএস একটি নিঃস্বার্থ সংস্থা। এতে যোগদানকারীরা কোনও ধরনের আর্থিক সুবিধা নেন না। কারণ হল, সংগঠনের পক্ষ থেকে এফটিএস-এর পদাধিকারী, কর্মীদের কোনও পারিশ্রমিক অথবা বেতন দেওয়া হয় না। এটি মূলত চ্যারিটির উপর চলে এবং বিশেষ বিষয় হল যারা অনুদান নিয়ে আসে তাদের কোনও কমিশন দেওয়া হয় না। এ ছাড়া রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার থেকেও আর্থিক সাহায্য নেওয়া হয় না। তাই এই সংগঠনটি অত্যন্ত বিশেষ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক উন্নয়নে বিগত তিন দশক ধরে নীরবে কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, আমাদের শহরাঞ্চলে স্কুল নেই। তার কারণ হল, আমাদের লক্ষ্য মূলত গ্রামীণ ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা প্রদান করা।

ধর্মপ্রচারকদের ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হয়েছে

নামপ্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এফটিএস-এর একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, স্বাধীনতার পর মিশনারিরা সারা দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠী, দলিত সম্প্রদায় এবং উপজাতিদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার প্রচার শুরু করে। এ জন্য শুধু ভারত থেকে নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও ধর্মপ্রচারকদের কাছে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠানো হয়। এই অর্থ বনাঞ্চলে বসবাসকারী দলিত, বঞ্চিত, শোষিত, নিরক্ষর এবং উপজাতি সম্প্রদায়কে ভাগ করে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। অলৌকিক নিরাময়, কখনও কখনও ভাল খাবার এবং সামাজিক ব্যবস্থার অংশ হওয়ার প্রলোভনে তাঁদের অর্থের ভিত্তিতে খ্রিস্টান করা হয়েছিল। অবশেষে, স্বাধীনতার প্রায় তিন দশক পর, দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত মাড়োয়ারি সম্প্রদায়, মিশনারিদের এই লাগামহীন অসদাচরণ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয় এবং এফটিএস প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে একক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ধর্মান্তরকরণ, বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে, নিছক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষরা খুব একটা লোভী নন এবং তাদের মাটি, জাত ও পুজোর জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সঙ্ঘ এবং সহযোগী সংগঠনগুলি জনজাতিদের এই রূপে গ্রহণ করেছে এবং তাঁদের প্রকৃত রূপে রেখে উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যার ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে।

হিন্দুস্থান সমাচার। রাকেশ।


 rajesh pande