শতবর্ষ পূর্ণ হল হ্যাম রেডিওর
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ১৫ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ৫৫ বছরের যূথিকা সরকার ৩০ বছরের মিনু সিং আর

 
শতবর্ষ পূর্ণ হল হ্যাম রেড

 
অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ১৫ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ৫৫ বছরের যূথিকা সরকার ৩০ বছরের মিনু সিং আর সুনীতা গওরের মধ্যে মিল একটাই। নিখোঁজ হওয়ার অনেক পরেও ওঁদের হদিশ মিলেছে হ্যাম রেডিওর দৌলতে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে সম্প্রতি নদিয়ার চাকদহ পঞ্জাবের ওয়ানিগর আর আজমগড়ের ঘরে ওঁদের তিনজনকে ফিরিয়ে দিয়েছে হ্যাম রেডিওর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব (ডব্লুবিআরসি)। গোটা দেশ আর বিশ্বের কথা বাদই দিলাম। শতবর্ষ পূর্ণ হল সেই হ্যাম রেডিওর।

ভারতে হ্যাম রেডিওর ১৮ হাজারেরও বেশি লাইসেন্সযুক্ত ব্যবহারকারী রয়েছেন। বিভিন্ন দুর্যোগে নিখোঁজ স্বজনহারাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল এই হ্যাম রেডিও প্রযুক্তি।ডব্লুবিআরসি-র সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস জানান, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে হারিয়ে যাওয়া পুণ্যার্থীদের প্রিয়জনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ নিয়েই তাঁরা সাগরমেলা-সহ বিভিন্ন জমায়েতে যান। রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে বছর ছয় আগে হ্যাম রেডিও চালানোর দায়িত্ব পেয়েছিল সাবর্নী নাগ বিশ্বাস। তখন সে ছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। এই ছয় বছরে নানা সময় মেলার ভিড়ে ব্যস্ত থেকেছেন নিখোঁজকে খুঁজে দেওয়ার কাজে। শতাধিক নিখোঁজ ঘরে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন হ্যাম-এর সাহায্যে।

দ্রুত এগিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি কিন্তু রেডিওকে অতীতের ঝুড়িতে ফেলে দিতে পারেনি। বিশেষ করে হ্যাম রেডিও কীভাবে মাঝে মাঝে অসাধারণ ভূমিকা নেয় আমাদের অনেকের ধারণার অতীত। তবে এর সঙ্গে সাধারণ রেডিওর একটা পার্থক্য আছে। হ্যাম রেডিও আসলে দ্বিমুখী রেডিও। ১৯২১ সালে প্রথম লাইসেন্স পান একজন বাঙালী। ওনার নাম অমরেন্দ্র চন্দ্র গুপ্ত। সেই হিসাবে প্রায় চোখের আড়ালেই শতবর্ষ পূর্ণ হল সেই হ্যাম রেডিওর।

এর সলতে পাকানোর কাজ অবশ্য শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। ডব্লুবিআরসি-র নেট কন্ট্রোলার সৌরভ গোস্বামী জানান “১৮৭৮ সালে জার্মান বৈজ্ঞানিক রুডলফ্ হারজ প্রথম রেডিও তরঙ্গের অস্তিত্ব অনুভব করেন। শেষে সাফল্য এলো ১৯০১ সালে ইটালীয় বৈজ্ঞানিক মার্কনীর হাত ধরে। এই বৈজ্ঞানিক প্রথম বেতার তরঙ্গ অতলান্তিক মহাসাগরের অপর প্রান্তে প্রেরণ করেন। জগদীশ চন্দ্র বসুর নামও উঠে আসে এই ব্যাপারে। আস্তে আস্তে রেডিও সবার ঘরে পৌছে গেল। মানুষ বুঝতে পারল এই বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে মানব সমাজকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা।“

সৌরভ তাঁর ‘ছোটোদের হ্যাম রেডিও পরিচিতি’-তে লিখেছেন “রেডিও হলো একমুখী এতে শোনা যাবে কিন্তু কোনও কথা অন্য কারুর কাছে পাঠাতে চাইলে পারা যাবে না। কিন্তু এই কথা ছোটো গ্রামের ঘরে বসে সারা পৃথিবীর কত জায়গায় পৌছে যেত লোকের সাথে যোগাযোগ করা যেত? কোন সিমকার্ড ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কোনও টাওয়ার বা কোনও সংস্থার সংযোগ ছাড়াই। আস্তে আস্তে এই দ্বিমুখী রেডিওর ব্যবহার বাড়তে থাকে। ভারতের ব্রিটিশ সরকার তখন এই দ্বিমুখী রেডিওর লাইসেন্সের প্রয়োজন অনুভব করে।“

প্রথম লাইসেন্সপ্রাপ্ত অমরেন্দ্র চন্দ্র গুপ্তর কল সাইন ছিল 2JK। ‘কল সাইন’ কি? সৌরভ জানিয়েছেন “গাড়ীর যেমন নং থাকে তেমনি যে ব্যক্তিকে এই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে তারও একটা নং থাকে। এই নম্বরকে ‘কল সাইন’ দিয়েই বিভিন্ন দেশের রেডিও সঞ্চালককে চেনা যায়। তিনি কোন দেশের লোক? কি নাম? কোথায় বাড়ী ইত্যাদি এই ধরনের লোককে ইংরাজীতে এ্যামেচার রেডিও অপারেটর বলা হয়। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারেরও এই রেডিও তরঙ্গ আদান প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।

আজকালকার মত কিন্তু রেডিওতে আগে কথা বলা যেতনা। সে সময় মোরসকোড-এ কথা হত। আমেরিকার বৈজ্ঞানিক স্যামুয়েল মোরস্ কিছু সাংকেতিক ধ্বনি আবিষ্কার করেন। এই ধ্বনি গুলি দিয়ে খবর আদান প্রদান করা যায়। এই ধ্বনিগুলিকেই মোর্স কোড বলা হয়। এই মোর্স কোড কিন্তু আবিস্কার হয়ে ছিল রেডিও আবিস্কারের অনেক আগে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন গবেষক অ্যালবার্ট হাইমেন বব অ্যালময় ও পিগি মুরাই একসাথে সামাজিক স্বার্থে সাধারন মানুষ যাতে এই রেডিও নিয়ে কাজ ও গবেষনা করতে পারে তার জন্য মার্কিন সরকারের কাছ থেকে অনুমতি আদায় করেন। এর আগে রেডিও শুধু সামরিক কাজে ব্যবহৃত হত। এই তিনজন মানুষের নামের পদবীরপ্রথম অক্ষর দিয়ে HAM কথাটির প্রচলন হয়েছে। কিন্তু আরও অনেক মত আছে। এই মতবাদটি আমার জানা ।

হ্যাম রেডিও কতরকম হয়? HF হাইফ্রি কোয়েন্সি / VHF ভেরী হাইফ্রিকোয়েন্সি আর UHF আলট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি। এই সবই নানা ধরনের বেতার তরঙ্গ। আবার এই ধরনের সেট হয় দুরকম একটা বেস ও আর একটা হ্যান্ডহেল্ড সেট। বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন মডেলের এই সেটগুলি হয়। এই হ্যাম সেটগুলো কোনওটা সিঙ্গল ব্যান্ড কোনটা ডুয়েলব্যান্ড আবার কোনটা অল ব্যান্ডেরও হয়। বাজারে এই সেটগুলো কিনতে পাওয়া যায় আবার তৈরীও করা যায়। এই সেটগুলোর সাথে আবার বিভিন্ন ধরনের এ্যান্টেনাও অত্যন্ত জরুরী কারন এ্যান্টেনা ছাড়া এই রেডিও গুলো অচল। বাজারে এ্যান্টেনাও বিভিন্ন ধরনের কিনতে পাওয়া যায় আবার দক্ষ্য হ্যাম অপারেটররা তৈরীও করতে পারে।

টেলিফোনের মত এতে একসাথে কথা বলা যায় না। একজনের কথা শেষ হলে ‘ওভার’ বলে সুযোগ দিলে তবেই অপর প্রান্তের মানুষটি কথা বলতে পারবে। মোরস্ কোডের ব্যবহার কমে গেলেও Q কোডের ব্যবহার কিন্তু আছে। Q কোও মোরস্ কোডের মত একধরনের কোড যার মাধ্যমে প্রশ্ন উত্তর করা ও দেওয়া যায়। তোমরা যেমন A ফর Apple পড়েছো তেমনি এখানেও A থেকে Z অবধি কিছু বাক্য রেডিওতে ব্যবহৃত হয়। C-charlie D-delta P-papa Q-quebec

সব সেটেই কি সব জায়গায় কথা বলা যাবে? সেটা ঠিক করে সেট নির্বাচন করতে হবে। দূরত্ব হিসাবে তিনটি ভাগ আমরা করে থাকি। আঞ্চলিক প্রাদেশিক বা দেশীয় এবং বিদেশ বা আর্ন্তদেশীয়। এই হ্যাম সেটগুলোর সাথে কোন অ্যান্টেনাটা ম্যাচ করবে সেটাও জানতে হবে । অ্যান্টেনার সাথে আবার অ্যান্টেনা টিউনার ও SWR মিটার ও রাখতে হয়।“

হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক


 rajesh pande