পুজোর প্রস্তুতিতে অনিশ্চয়তা, চিন্তার ভাঁজ উদ্যোক্তােদের কপালে
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ২৪ সেপ্টেম্বর (হি স)। পুজোর মুখে খামখেয়ালি আবহাওয়া ঘুম কেড়ে নিয়েছে পুজোর উদ্
পুজোর প্রস্তুতিতে অনিশ্চয়তা, চিন্তার ভাঁজ উদ্যোক্তােদের কপালে


অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ২৪ সেপ্টেম্বর (হি স)। পুজোর মুখে খামখেয়ালি আবহাওয়া ঘুম কেড়ে নিয়েছে পুজোর উদ্যোক্তাদের। তাঁদের সবার প্রশ্ন এক— মন্ডপের কাজ শেষ হবে কী করে? শুক্রবার রোদ্দুর উঠলেও শীঘ্রই ফের দুর্যোগের আশঙ্কার ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দুশ্চিন্তার কারণ সেটাই।

কুমারটুলি সর্বজনীন দুর্গোৎসব আহ্বায়ক দেবাশিস ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে জানান, “এবছর করোনার জন্য কাজ শুরু হতে অনেকটা দেরি হয়েছে। বিধি মেনে খোলামেলা মন্ডপ হবে। তার মধ্যে এই বৃষ্টি সমস্ত কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজ কিভাবে শেষ হবে বুঝে উঠতে পারছিনা।“

‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি তথা দক্ষিণ কলকাতার নামী পুজো বোসপুকুর শীতলামন্দিরের সম্পাদক কাজল সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, “কাজের খুব একটা সমস্যা হচ্ছেনা। আমরা আগেই প্রস্তুত ছিলাম। বাইরের কাজের সময বৃষ্টি হলে খুব অসুবিধার সম্মুখীন হব।“

সম্মিলনী-র সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত বসু জানান, “এবার আমাদের ৬৩-তম পুজো। এই প্রতিকূল আবহাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও দূর্বিসহ করে তুলেছে। একে তো মানুষ করোনার সাথে লড়াই করে আজ ক্লান্ত। তার উপর জেঁকে বসেছে এই অবিরাম বৃষ্টি। মানুষ পুজোর আগে আজ ঠিকভাবে কাজকর্ম করতে পারছেনা। তার উপর জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে নাজেহাল অবস্থা। সর্বশেষ আবার জমা জলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। মানুষের দূর্ভোগের আর শেষ নেই।“

চক্রবেরিয়া সার্বজনীন দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক গোরা রায়চৌধুরী জানান, “আমাদের পুজোর এবার ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৯-এ বাজেট ছিল ২৩ লক্ষ টাকা। গতবার অতিমারির জন্য তা কমে হয় ৬ লক্ষ টাকা। এবার ১৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।“

নলিনী সরকার ষ্ট্রিট সার্বজনীন দুর্গোৎসবের কোষাধ্যক্ষ সোমক সাহা জানান, “আবহাওয়া প্রতিকূল অবস্থা হওয়াতে অন্য কমিটির মতো আমাদের ও মন্ডপ নির্মাণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের আরও সমস্যা হচ্ছে এই কারণে যে আমাদের কিছু অংশ সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে তার জন্য আমাদের শ্রমিক-মজুরি খাতে বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সরঞ্জাম জলে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রতিমার রঙ শুকোতে দেরী হচ্ছে। সঠিক সময়ে আমরা মন্ডপ নির্মাণ করতে পারবো কিনা কোনও রকম আশ্বাস কাউকে দেওয়া যাচ্ছে না।“

কলকাতার আর এক বিখ্যাত উদ্যোক্তা ‘সমাজসেবী সঙ্ঘ’-র পুজোর এবছর ৭৫ পূর্ণ হচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরিজিৎ মৈত্র জানান, “আমরা কাজ শুরু করেছি আগস্টের শেষে। এমনিতেই হাতে সময় খুব কম ছিল কারণ করোনা আবহে অনেক রকম প্রতিকূলতা নিয়ে এবারের দুর্গাপুজো হচ্ছে। তার মধ্যে এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, মনে হচ্ছে মা দুর্গা জাহাজে আসছেন। জানিনা কাজ শেষ হবে কি না। দিন রাত কাজ করে মণ্ডপ শেষ করতে হবে। চিন্তা হচ্ছে, এবার এতো কম সময় ও অল্প বাজেট নিয়ে পুজো, সেখানে বৃষ্টির জন্য মণ্ডপের ক্ষতি হয়ে গেলে খরচা বাড়বে। যাঁরা কাজ করছেন তাদের ওভারটাইম দিতে হবে। সব মিলিয়ে এখন আমাদের রাতের ঘুম উড়ে গেছে।“

দক্ষিণ কলকাতার নামী পুজো সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির এবার ৭২-তম বর্ষ। সংগঠনের সভাপতি পার্থ প্রতীম রায় (বুলা) জানান, “এমনিতেই এবার লকডাউন ও অতিমারির কারণে পুজোর স্বাভাবিক প্রস্তুতি শুরু করতে কলকাতার সমস্ত ক্লাবের মত আমাদেরও দেরি হয়ে গেছে। আমরা অনিশ্চয়তা নিয়ে শুরু করেছি। কুমোরটুলিতেও প্রতিমা তৈরির কাজ অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক কারণে পুজোর প্রস্তুতি, মন্ডপ তৈরি সহ সমস্ত কাজের জন্যে ন্যূনতম ৪০ দিনের মত সময় পেয়েছি। এতো কম সময়ের মধ্যে সাবেকি মন্ডপ তৈরি করা গেলেও থিমের মন্ডপ তৈরি খুবই কঠিন কাজ।পার্থ প্রতীমবাবু জানান, “কলকাতার কিছু কমিটির মত আমরাও সময় নির্দিষ্ট করে, এবছরের জন্য থিম্ এর প্যান্ডেলই শুরু করেছি। এই সময় গত কয়েক দিন প্রকৃতি বিরূপ থাকার কারণে আমাদের মন্ডপ তৈরির কাজে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মন্ডপ তৈরির জন্যে নিযুক্ত কর্মীর এবার খুবই অভাব। কোনও কর্মী এবার বাড়ি থেকে যাতায়াত করে কাজ করতে পারছেনা। কারন লোকাল ট্রেন স্বাভাবিক চলাচল করছে না। বেশির ভাগ লোক জনকে থেকে কাজ করতে হচ্ছে। তার পর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে আমরা পুজো সংগঠকরা খুবই চিন্তিত। ঠাকুর তৈরির কাজও দেরিতে শুরু হওয়ার দরুণ, কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। সর্বোপরি এবারের পুজোর কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করাটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে অর্থনৈতিক সংকট তো আছেই। কী হবে আমরা বলতে পারছি না।“

হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক


 rajesh pande