নদিয়ায় সাইবার ক্রাইমের নয়া ফাঁদ, লাস্যময়ীদের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল
নদিয়া,২৫ জানুয়ারি(হি.স) সরকারি কর্মীদের পর এবার ভিডিও কলে লাস্যময়ীদের ছবি দেখিয়ে রাজনৈতিক নেতাদে
নদিয়ায় সাইবার ক্রাইমের নয়া ফাঁদ, লাস্যময়ীদের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল


নদিয়া,২৫ জানুয়ারি(হি.স) সরকারি কর্মীদের পর এবার ভিডিও কলে লাস্যময়ীদের ছবি দেখিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ব্ল্যাকমেল করার টার্গেট নিয়েছে প্রতারকরা। সম্প্রতি নদিয়া জেলায় এধরনের কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। প্রতারকদের দাবিমতো টাকা না দেওয়ায় সুপার ইম্পোজ করা ভিডিও ক্লিপিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয়েছে। যদিও চক্ষুলজ্জা ও সম্মানের খাতিরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের দ্বারস্থ হতে চাইছেন না নেতারা। ঘটনার কথা জানাজানি হতে গোয়েন্দারা চিন্তায় পড়েছেন।

নতুন নতুন কায়দায় প্রতিনিয়ত অপরাধের জাল ছড়িয়ে চলেছে সাইবার অপরাধীরা। প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। তারপর বন্ধুত্ব, তারপর ফোন নম্বর আদান-প্রদান করে ভিডিও কল। সেই কল রিসিভ করতেই স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে লাস্যময়ীর অশ্লীল ছবি। ফোন কেটে দেওয়ায় আবারও ফোন। ততক্ষণে ভিডিও ক্লিপিং সুপার ইম্পোজ হয়ে গিয়েছে। এবার সেই ভিডিও ভাইরাল করার কথা বলে ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে।

জেলার বেশ কয়েকজন শিক্ষক, ব্যাঙ্ককর্মী, কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের এভাবেই ফাঁদে ফেলছে প্রতারকরা। অনেকে প্রতারণার জালে জড়িয়েছেন বুঝতে পেরেও সম্মান বাঁচাতে প্রতারকদের বাধ্য হয়ে মোটা টাকা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে চাকদহের এক ব্যাঙ্ককর্মী মোবাইলে হঠাৎ ভিডিও কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই তিনি স্ক্রিনে লাস্যময়ীর অশ্লীল ছবি দেখতে পান। তিনি বলেন, যখন ফোনটি এসেছিল, আমি ব্যাঙ্কে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলাম। বিষয়টি গোলমেলে বুঝে ফোন কেটে দিই। তারপর আমাকে এসএমএস করে টাকা দাবি করা হয়। আমিও পাল্টা জানিয়েছি, কোনওভাবেই টাকা লেনদেন করব না। তারপরই প্রতারকরা আমার ফেসবুকের কয়েকজন বন্ধুর কাছে একটি ভিডিও পাঠিয়ে দেয়। ওই ভিডিও দেখলে বিশ্বাস হবে না, সেটিকে সুপার ইম্পজ করা হয়েছে। মুহুর্তের মধ্যে এই কাজ কীভাবে সম্ভব, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। এব্যাপারে আমি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।একই অভিজ্ঞতা হয়েছে নাকাশিপাড়ার এক তৃণমূল নেতা ও একজন মাঝবয়সি শিক্ষকের।

মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর ডিসেম্বর মাসেও এধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার অভিযোগ সাইবার ক্রাইম থানায় দায়ের হয়েছিল। বর্তমানে এধরনের প্রতারণার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, সবার আগে অপরিচিত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা বন্ধ করতে হবে। কোনওভাবেই অপরিচিতদের সঙ্গে ফোন নম্বর আদান-প্রদান করা ঠিক নয়। ভিডিও কল রিসিভ করলেই একদিকে যেমন ফোন কলের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির ছবি মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, তেমনই নিজেদের ছবিও প্রতারকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তারপরই সেই ছবিকে কাজে লাগিয়ে সুপার ইম্পোজ ভিডিও তৈরি করছে সাইবার অপরাধীরা। পরে তা ভাইরাল করে দেওয়ার নাম করে টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। এধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রতারকদের হিন্দিতে কথা বলার বিষয়টি সামনে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারি কর্মী, রাজনৈতিক নেতাদেরই বর্তমানে বেশি টার্গেট করে কাজ হাসিল করতে চাইছে অপরাধীরা।

কারণ, মামলা- মোকদ্দমার কারণে সরকারি কর্মীদের চাকরি নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হতে চাইবেন না। তাই এভাবে ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইছে প্রতারকরা। আর তাদের সফ্ট টার্গেট হয়ে উঠছেন সরকারি আধিকারিকরা। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও সম্মানের খাতিরে টাকার বিনিময়ে প্রতারকদের মুখ বন্ধ রাখতে চাইবেন। তাই তাঁদেরও প্রতারণার জালে ফেলতে চাইছে অপরাধীরা। এই অপরাধের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশেষভাবে ফোন কল করছে দুষ্কৃতীরা। তাই তাদের টাওয়ার লোকেশন সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুলিশ তাদের খোঁজ চালাচ্ছে।

হিন্দুস্থান সমাচার/ সোয়েল


 rajesh pande