ত্রিপুরা : আসন্ন উপনির্বাচন ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মহড়া, বলেছেন মানিক সরকার
আগরতলা, ২৮ মে (হি.স.) : ত্রিপুরার চারটি আসনে অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনকে ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মহড়
ত্রিপুরা : আসন্ন উপনির্বাচন ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মহড়া, বলেছেন মানিক সরকার


আগরতলা, ২৮ মে (হি.স.) : ত্রিপুরার চারটি আসনে অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনকে ২০২৩ সালে বিধানসভা নির্বাচনের মহড়া দিতে চাইছে সিপিএম। তাই দলীয় কর্মীদের ভোকাল টনিক নিয়ে উদ্বুদ্ধ করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। সিআইটিইউ-এর দু দিনের রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রকাশ্য জনসভায় সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ৫২ মাসের বিজেপি জোট সরকারের শাসনে ত্রিপুরার চরম দুর্দশা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই, ঘরে বসে না থেকে অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ। তিনি জোর গলায় সকলের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

এদিন ত্রিপুরার বিরোধী দলের নেতা বলেন, ভারতের পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-নেতৃত্বাধীন সরকার অষ্টম বছর পূর্ণ করে নবম বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ প্রত্যক্ষ করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রচার করছে এবং কর্পোরেটদের পক্ষে রয়েছে। মানিকের কটাক্ষ, কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল এবং সরকার অত্যন্ত সন্দেহজনক এবং আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভারতীয় সংবিধানের মূল বিষয়গুলি ধ্বংস করার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছে।

সাথে তিনি যোগ করেন, প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কোথাও কোনও নতুন চাকরি নেই, ফলে মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁর অভিযোগ, আরএসএস-নিয়ন্ত্রিত বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার রেগা প্রকল্প বন্ধ করতে চাইছে। কারণ কর্পোরেটরা সরকারকে চাপ দিয়েছিল, ওই প্রকল্পে তাদের ক্ষতি হবে। ত্রিপুরার তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার দিল্লিতে সংসদের সামনে প্রতিবাদ করেছিল। পরে কেন্দ্র রেগায় বরাদ্দ হ্রাস করে প্রকল্পের জন্য বাজেটে বরাদ্দ অর্থ থেকেও রাজ্যকে বঞ্চিত করেছে।

আজ ব্রিটিশদের সাথে বিজেপির তুলনা টেনে সিপিআইএম পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার বলেন, ‘ব্রিটিশরা ভারতে বিভাজন ও শাসননীতি গ্রহণ করেছিল। সেই সময় ভারতীয়দের একটি অংশ ব্রিটিশদের তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করেছিল। বর্তমান সরকার মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে স্বাধীনতার পূর্বেকার একই নীতি গ্রহণের চেষ্টায় রয়েছে।’

তাঁর কথায়, ‘দেশের সর্বোচ্চ জনগোষ্ঠী শ্রমিক শ্রেণির মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠছে। ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি নেতাদের দ্বারা লোকদের একটি অংশ প্ররোচিত করেছিল এবং বৃহত্তর লোকদের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা হয়েছিল। এখানে সিআইটিইউ শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে এবং দেশজুড়ে অন্যান্য শ্রমজীবী সংস্থাগুলি তাদের স্লোগানকে সমর্থন দিয়েছে।’ তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, ‘ধ্বংসাত্মক শক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন এবং প্রয়োজনে পাল্টা আক্রমণ করুন।’

বিরোধী দলনেতা শ্রমজীবী অংশের মানুষের উপর কোনও ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করার সাথে সন্ত্রাস থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন। তাঁদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করুন। তাঁদের ক্ষতি করবেন না। বরং শোষণমুক্ত সমাজের জন্য সময়ের কী প্রয়োজন তা জনগণকে ব্যাখ্যা করুন।

এদিন তিনি বলেন, দেশের মানুষ ও ত্রিপুরার মধ্যে পরিবর্তনগুলি সহজেই তুলনা করে দেখা যায়। ত্রিপুরার মানুষ গত ৫২ মাস ধরে বর্তমান সরকারকে দেখছেন এবং বুঝতে পারছেন রাজ্যবাসী প্রতিটি ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁর কটাক্ষ, প্রাক-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি প্রতারণার ফাঁদ ছিল। তাঁর দাবি, মানুষ আজ সবই উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং আগামী উপনির্বাচনে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মানিক সরকার বলেন, উপনির্বাচনকে ঘিরে প্রতিযোগিতার ময়দান তৈরি হয়ে গেছে। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগে উপনির্বাচনকে মহড়া হিসেবে দেখতে হবে। তাঁর আহ্বান, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করুন এবং প্রতিটি গ্রামেগঞ্জে সকলের সাথে কথা বলুন। ত্রিপুরার মানুষ ক্ষমতাসীন দলের উপর আস্থা হারিয়েছেন। তাঁদের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে।

হিন্দুস্থান সমাচার / সন্দীপ / সমীপ


 rajesh pande