অসমের সরকারি কর্মচারীদের সততা ও সামাজিক ন্যায়ের মূর্তি হয়ে ওঠার আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ১ লক্ষ চাকরি, স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা প্রসঙ্গ হিমন্তবিশ্বের ‘অসম
Chief Minister Dr Himanta B Sarma hoisted the N-Flag in Guwahati


Chief Minister Dr Himanta B Sarma hoisted the N-Flag in Guwahati


Chief Minister Dr Himanta B Sarma hoisted the N-Flag in Guwahati


Chief Minister Dr Himanta B Sarma hoisted the N-Flag in Guwahati


Chief Minister Dr Himanta B Sarma hoisted the N-Flag in Guwahati


স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ১ লক্ষ চাকরি, স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা প্রসঙ্গ হিমন্তবিশ্বের

‘অসম থেকে শুরু হবে উচ্চ-নিম্নের বৈষম্য দূর প্রক্রিয়া’

‘দেশে ১৮৫৭ সালে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরুর প্রায় তিন দশক আগে অসমে ব্রিটিশ-বিরোধী আগুন জ্বলেছিল’

‘সপ্তাহখানেকের মধ্যে ১ লক্ষ সরকারি চাকরি সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে দিতে চলেছে অসম’

গুয়াহাটি, ১৫ আগস্ট (হি.স.) : 'যে অসমে সরকারি কর্মীরা টাকা দাবি করেন, সেই অসম জ্যোতি-বিষ্ণুর কল্পনার অসম নয়'। খানাপাড়ায় তেরঙা পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে সরকারি কর্মীদের সততা, ন্যায় ও সামাজিক ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক হওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

৭৬-তম স্বাধীনতা দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমি দেখছি, দুর্নীতির অভিযোগে টাকা নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন সরকারি আধিকারিক। এগুলো কীসের টাকা? কারও পেনশনের টাকা, কারও লাইসেন্সের টাকা, কারও রেশনের টাকা। এই অসম, যেখানে সরকারি কর্মচারীরা মানুষকে শোষণ করেন, এমন একটি অসম যেখানে সরকারি কর্মচারীরা সমস্ত কিছুর জন্য অর্থ দাবি করে, এটি জ্যোতিপ্রসাদ, বিষ্ণু রাভা, গোপীনাথ বরদলৈয়ের কল্পনার অসম নয়। আজ আমি এই তিরঙ্গা পতাকার তলা থেকে অসমের সরকারি কর্মীদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, সততা, ন্যায় ও সামাজিক ন্যায়ের মূর্তি হয়ে উঠুন। ’

মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে ঢেকিয়াজুলির ঘটনাও স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে অমি শোণিতপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, দরঙের ধুলায় অঞ্জলি তিরু নামের এক বালিকা-পরিচারিকা খুনের ঘটনা খতিয়ে দেখা। গ্রামে গিয়ে শুনলাম, ১৩ বছরের পরিচারিকাকে কীভাবে অত্যাচার করেছে বাড়ির মালিক মানে যার বাড়িতে মেয়েকে কাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল, তার চোখ খোলা ছিল।’ মুখ্যমন্ত্রী হাতজোড় করে অনুরোধ করছেন, ‘আপনারা যে মেয়েটিকে বাড়িতে কাজ করতে নিয়ে আসবেন বা এনেছেন, তাকে আপনার মেয়ের মতো ভালোবাসুন। পুলিশ কী করেছে, তদন্ত করছে কী-করেনি, সেটা আলাদা বিষয়। তবে আমি অসমের মানুষকে অনুরোধ করব, যে মেয়েটি কাজ করতে এসেছে, সে আমার মেয়ে নয়, তা মোটেও ভাববেন না, তাকে কি আমার মেয়ে বলে ভাবতে পারি না? সে তো আমারই মেয়ে। মানবিকতার খাতিরে এই চেতনা আসা দরকার।’

এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা কোনও শিশুশ্রমিক ব্যবহার করব না। যদি ১৪-ঊর্ধ্ব বয়সি রাখি, তা-হলে সেই মেয়ে বা ছেলে শোষণের শিকার হতে পারে না। আমাদের ছেলে বা মেয়ে যে স্কুলে পড়তে যাচ্ছে, সেই একই স্কুলে কাজের মেয়ে বা ছেলেকে পড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকতে হবে। আপনার ১৪ বছরের মেয়ে স্কুলে যাবে, আর অন্য ১৪ বছরের মেয়েটা বাড়িতে বাসন মাজবে, এমন সমাজের দরকার নেই আমাদের। এ ধরনের সমাজ কোনও আধুনিক জাতি গঠন করে না। অসমের মানুষকে অনুরোধ করব, হাতজোড় করে, বাড়িতে কাজে নিয়ে আসা মেয়েকেও আপনার মেয়ের মতোই ভালোবাসুন, সেই অনুরোধ করছি। যে ছেলে বা মেয়েকেটিকে বাড়িতে কাজ করতে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে শিক্ষিত করে তুলুন। আপনি সেই পিতামাতার দুর্দশা এবং দারিদ্র্যকে সম্মান করুন। তাঁদের সন্তানদেরও মানবসম্পদে পরিণত করুন।’

এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তবে সরকার কঠোর হবে। এর জন্য বিশেষ আইন আনা হবে। ১৪ বছরের যে কোনও মেয়ের মৃত্যু হলে তার সাজা ফাঁসির দড়িতে হবে, এ সম্পর্কে আইন সংশোধন করবে আমার সরকার। তবে সরকার আইন সংশোধন করলেও তা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে, আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর।

দিন কয়েক আগে মঙ্গলদৈয়ে সংগঠিত এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কয়েকদিন আগে টিভিতে দেখলাম, ২০ বছর আগে অন্য সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করে এক ব্যক্তি মারা গিয়েছিল। তখন গ্রামের মানুষ লাশ স্পর্শ করতে বের হয়নি, তাঁর সৎকারও করতে দেননি। বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমরা কোন অসমে বসবাস করছি, এখনও উঁচু ও নিচু জাতির ভেদাভেদ আছে, মৃতদেহে কি মানুষের জাত আছে? মৃত দেহ কি কে ব্রাহ্মণ, কে কলিতা, কে কোচ চেনা যায়? মৃতদেহ নিয়ে এমন অবর্ণনীয় ভূমিকা আমাদের জাতিকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। আমরা কোন অসমে বাস করছি? আজ তিরঙ্গা পতাকার তলায় দাঁড়িয়ে মঙ্গলদৈয়ের সেই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনার জন্য প্রশংসার একটি শব্দও থাকতে পারে না, সংশোধনই সবচেয়ে বড় মন্ত্র হতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আমি অসমের গ্রামেগঞ্জে বসবাসকারী মানুষের কাছে আবেদন করব, আমাদের বিশাল সনাতন সভ্যতা-সংস্কৃতি কেবল বর্ণ, উচ্চ ও নিম্ন ব্যবস্থার কারণে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই উচ্চ ও নিম্ন ব্যবস্থা যদি না থাকত, যদি বর্ণব্যবস্থার অস্তিত্ব না থাকত, তা-হলে সর্বশক্তিমান জাতি হিসেবে আমাদের ভারত সর্বদাই বিশ্বের বুকে উজ্জ্বল হয়ে উঠত। অসম থেকে আমরা শুরু করব, উচ্চ-নিম্নের বৈষম্য দূর করব। আমি প্রতিটি মানুষের বিপদের সময় তার পাশে থাকব। আমরা মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে অসমকে জাগিয়ে তুলব।

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ১ লক্ষ চাকরি, স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা প্রসঙ্গও এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব। শহরবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, বছরে একবার করে হলেও নিজের গ্রামে যান। আপনার সন্তানদের গ্রামে নিয়ে যান, মানবতার মূল্যবোধ শিখবে।

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে সারা জীবন উৎসর্গ করে দেশপ্রেমের বিরল নজির সৃষ্টিকারী প্রত্যেক শহিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামীকে প্রণাম জানান মুখ্যমন্ত্রী। ড. শর্মা বলেন, দশকের পর দশক দাসত্ব এবং অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের কারণে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা ভারতের নীল আকাশে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই ভারত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ভারতের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ভারতীয় সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতকে জ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর ভাষণে বলেন, 'আমরা সকলেই এই মহান ভারতীয় সভ্যতার সন্তান। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও এই সভ্যতার বার্তাবাহক। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সময় ভারতীয় সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে প্রত্যেক ভারতীয়ের সচেতন হওয়া উচিত।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বিদ্রোহের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরুর আগে থেকেই অসমে ব্রিটিশ-বিরোধী আগুন জ্বলেছিল। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ আমাদের দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। তার প্রায় তিন দশক আগে ব্রিটিশরা অসমে শাসন করতে এসেছিল, কিন্তু ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করেছিল অসমের আদিবাসী বিদ্রোহ। অসমে ব্রিটিশ-বিরোধী লড়াইয়ের এক অনন্য অধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতেই রচনা হয়েছিল।

অন্যদিকে, ভারতের স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম হিসেবে পরিচিত সিপাহি বিদ্রোহের আগুন ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গ অতিক্রম করে অসমের সীমান্তে প্রজ্বলিত হয়। সেই সময়, মণিরাম দেওয়ান উচ্চ ও মধ্য অসমের জায়গায় জায়গায় বিদ্রোহ করার জন্য জনগণকে সংগঠিত করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছিলেন। মণিরাম দেওয়ান ও তাঁর সহযোগী পিয়ালী বরুয়াকে ১৮৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। অসমে ব্রিটিশ-বিরোধী লড়াইয়ের আর একটি অধ্যায় হল কৃষক বিদ্রোহ, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈয়ের নেতৃত্বে আধুনিক অসমের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু একই সঙ্গে ১৯৫০-এর দশকের বিধ্বংসী ভূমিকম্প, দেশভাগ, অসমের পরিবহণ ব্যবস্থা ধ্বংস এবং স্বাধীনতার আগে ভয়াবহ প্রব্রজন ইত্যাদি নানা কারণে অসমকে অস্থিতিশীল করে তুলে। পরবর্তী সময়ে অসমে বিদেশি বহিষ্কার আন্দোলন, বিভিন্ন আন্দোলন এবং বলতে গেলে, সহিংস আন্দোলন আধুনিক অসম নির্মাণেও মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিন্তু গত ৭৫ বছরে অসম উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন গতিতে এগিয়েছে। গত ৭৫ বছরে ভারতে এমন একটি রাজ্যও নেই, যারা একযোগে সন্ত্রাস, যুগপৎ বন্যা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, ক্রমাগত বিভিন্ন আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছে, গত কয়েক বছরে শান্তির নতুন দূত হয়ে উঠেছে অসম। অসমের মোট দেশজ উৎপাদন ৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। আমাদের রাজ্যে উন্নয়ন ও রূপান্তরের এক নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে, বলেন হিমন্তবিশ্ব।

মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের এই ৭৫ বছরে আমাদের রাজ্যকে ভারতের অন্যতম সেরা রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ভারতকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে আগামী ২৫ বছরকে অমৃতকাল হিসেবে পালন করার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতার ৭৬-তম বর্ষ উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের জাতির অমৃতযুগ শুরু হয়ে গেছে। আগামী ২৫ বছরে সবাই নিষ্ঠার মনোভাব নিয়ে কাজ করব। আমরা অসমকে ভারতের অন্যতম সেরা রাজ্য হিসাবে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব।’

‘মোদীজির নেতৃত্বে নতুন স্বপ্ন তৈরি করে গত এক বছরে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা এগিয়েছি। বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অসমের মানুষও বন্যা কবলিতদের আরও একবার জীবন সংগ্রাম শুরু করার প্রেরণা জুগিয়েছেন। আমি অসমের বন্যাকবলিত মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁদের পাশে থাকার পুনর্বার সংকল্পের কথা ঘোষণা করছি’, বলেন তিনি।

ভূমি, আদিবাসী সমস্যা ইত্যাদি প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, গত এক বছরে অসমের জাতীয় জীবনে উন্নয়নের নতুন প্ৰবাহ দেখেছি। ‘মিশন বসুন্ধর’-র মাধ্যমে ৭ লক্ষ মানুষের ভূমি-সমস্যা সমাধান হয়েছে। ‘মিশন সদ্ভাবনা’-র মাধ্যমে সরকারি কাৰ্যালয়ে জমা নথিপত্ৰ প্ৰাণ পেয়েছে। হাজারো সমস্যা সমাধান হয়েছে। এছাড়া ‘মিশন ভূমিপুত্ৰ ’-এর মাধ্যমে অসমের আদিবাসী-জনজাতি জনসাধারণ তাঁদের স্বাধিকার ও গরিমা ফিরে পেয়েছেন। বড়ো চুক্তি, কারবি চুক্তির মাধ্যমে শান্তির এক নতুন শৌধ নিৰ্মিত হয়েছে। অসমের প্ৰশাসন ব্যবস্থাকে জনতার কাছে নিয়ে যাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা করছি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল আর্কিটেকচারের মাধ্যমে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার সংকল্প নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম আমাদের সরকার সহায়কমূল্যে অসমের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে রাজ্যের কৃষি অর্থনীতিকে নতুন জীবন দিয়েছে। অরুণোদয়-এর মতো প্রকল্পগুলিকে আরও বেশি করে জনবহুল এবং সর্বব্যাপী করার সিদ্ধান্ত অসমের দরিদ্রদের আত্মবিশ্বাসের এক নতুন বিশ্বাসের সাথে আবদ্ধ করেছে। তিন হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর সংকল্প রাজ্যকে আধুনিক স্তরে নিয়ে যাচ্ছে। অসমকে সব ক্ষেত্রেই স্বনির্ভর করে তোলার পথে আমরা, বলেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

উন্নয়নের খতিয়ান তুলে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, আমরা অসমে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। গুয়াহাটি ও উত্তর গুয়াহাটির মধ্যে নির্মিত নতুন সেতু হোক কিংবা কালিয়াভোমরার উপর নির্মিত নতুন সেতু, মাজুলিতে নির্মিত ব্রহ্মপুত্রের উপর সেতু বা পলাশবাড়ি-শুয়ালকুচির উপর সেতু, কিংবা নারেঙ্গি-কুরুওয়ার উপর নতুন ব্রহ্মপুত্র সেতু হোক কিংবা কাজিরঙায় ৩২ কিলোমিটার এলিভেটেড করিডর বা ২৪টি মেডিক্যাল কলেজের স্বপ্ন কিংবা ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন, এ সব বাস্তবায়ন করে আজ আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে নতুন অসম গড়তে বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে চলেছি।

ড. শর্মা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন আরোগ্য যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বলে ইউনিভার্সেল হেল্থ কেয়ার বা সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে ২৭ লক্ষ গরিব মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প প্রদান করে। আমরা অসমের রেশন কার্ড সহ ৫৮ লক্ষ পরিবারের জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আগামী সপ্তাহে অসম আরও এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, 'আমরা ১ লক্ষ সরকারি চাকরি সুষ্ঠু ও সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে দিতে চলেছি। ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে ৩০ হাজার সরকারি চাকরি দিতে সক্ষম হয়েছি। সেপ্টেম্বর মাসে আমরা ১০ হাজার চাকরি দেব। সমান্তরালভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জন্য প্রায় ৩০ হাজার সরকারি চাকরি প্রদানের লক্ষ্যে আমাদের মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা এই মাস থেকে শুরু হবে। অসম ছাড়া ভারতের কোনও রাজ্যে এ ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১ লক্ষ চাকরি দেওয়ার নজির এখনও নেই।

তিনি বলেন, 'আমরা অসমকে একটি আধুনিক, শক্তিশালী, অর্থনৈতিক বুনিয়াদে নির্মিত এক মহান রাজ্যে হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে উজ্জ্বল করে তুলতে চাই। আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে চাইছি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অসমে চার হাজার হাইস্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। এই সব হাইস্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে আগামী বছর থেকে অসমিয়ার পাশাপাশি সমান্তরালভাবে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠক্রম শুরু হবে। আমরা এই স্কুলগুলি পুনর্নির্মাণের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছি। এই ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আমরা অসমের প্রতিটি হাইস্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আধুনিক শিক্ষার পরিপূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে পরিকাঠামো নির্মাণের এগিয়ে যাব।

বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সৌরশক্তি ও সবুজশক্তিতে সমৃদ্ধ হতে চাই। ২০৩৫ সালের মধ্যে চেষ্টা করেছি যাতে সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অসম একটি মহাশক্তি হয়ে ওঠে। শিশুদের উন্নত শিক্ষা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেক সফল ব্যক্তিকে একেকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র অ্যাডপ্ট করার আহ্বান জানান।

জৈব চাষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জৈব চাষ একটি বড় অস্ত্র। ইতিমধ্যে অসমের আনারস পৌঁছে গিয়েছে দুবাইয়ে, তেজপুরের লিচু গেছে লন্ডনের বাজার, কারবি আংলং-এর আদা বিশ্ববাজার দখল করতে পেরেছে। অসমের কৃষকরা যাতে জৈব চাষে মনোনিবেশ করেন তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ / অরবিন্দ


 rajesh pande