আপডেট...আলোচনা ও সংলাপের জায়গাকে মজবুত করে সমাজে সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার আহ্বান উপ-রাষ্ট্রপতি ধনকড়ের
লোকমন্থন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী ভাণ্ডার আবিষ্কারের যাত্রা : রাজ্য
VP Jagdeep call for ensure harmony and stability in society


VP Jagdeep call for ensure harmony and stability in society


লোকমন্থন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী ভাণ্ডার আবিষ্কারের যাত্রা : রাজ্যপাল অধ্যাপক মুখি

ভারত শুধু একটি জাতি নয়, এটি একটি জীবন্ত সত্তা : মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব

গুয়াহাটি, ২২ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : সংলাপ-বার্তালাপ, বিতর্ক ও আলোচনাই শাসনের প্রাণ। এ বিষয়ে, বিশেষ করে আইনসভার সমসাময়িক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সমগ্র ইকোসিস্টেমকে উন্নত করে আমাদের সমৃদ্ধ অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রভাবিত হতে হবে। আলোচনা ও সংলাপের জন্য সমৃদ্ধ স্থানকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে। বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে ‘প্রজ্ঞা প্রবাহ’ আয়োজিত চার দিবসীয় লোকমন্থন-২০২২ শীর্ষক তৃতীয় সংস্করণের পরম্পরাগত লোক-অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেছেন উপ-রাষ্ট্ৰপতি জগদীপ ধনখড়।

অসমের রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রমুখ বহু বিশিষ্ট ও সাধারণ নাগরিকদের উপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, উত্থানের দৌড়ে এবং জনসাধারণের দৃষ্টির ধ্রুবক দৃষ্টিতে, বিতর্ক, সে টেলিভিশনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় হোক, ক্যাকোফোনাস লড়াইয়ের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি মিডিয়াকে উদ্যোগ নিয়ে আত্মদর্শন করার আহ্বান জানান। অনন্য, মৌলিক এবং প্রান্তিক কণ্ঠকে মূলধারায় নিয়ে আসতে প্রচার করতে সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, লোকমন্থন-এর তৃতীয় সংস্করণ আমাদের দেশের বিভিন্ন কোণে, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে লুকিয়ে থাকা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী ঐতিহ্য অন্বেষণের ভাবনা নিয়ে পালিত হচ্ছে।

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে উপ-রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সমাজে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকার উপর জোর দিয়ে কীভাবে ঋষিরা নীতির বিষয়ে ঐতিহাসিকভাবে রাজাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সমাজে সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছিলেন তা সকলকে অবগত হওয়ার ডাক দেন। বুদ্ধিজীবীদের বিরাজমান বিষয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যদি বর্তমান সময়ে নীরবতা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি চিরতরে নীরব হতে বাধ্য।

স্বাস্থ্যকর, খোলা মনে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় বলেন, এখন সময় এসেছে, আমাদের ইকো চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার, উভয় সামাজিক কাঠামো এবং সোশাল মিডিয়া অ্যালগরিদম দ্বারা সৃষ্ট। এ থেকে বেরিয়ে আমাদের পরিস্রুত নিশ্বাস নিতে দিন। আমাদের অবশ্যই শোনার শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, অবশ্যই সংলাপের শিল্পকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে, জোরের সঙ্গে বলেন তিনি।

সুশীল সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রের তিনটি শাখা যেমন, আইনসভা, নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ, এগুলির সুসংগত ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান উপ-রাষ্ট্রপতি। বুদ্ধিজীবীদের সংলাপ ও আলোচনার সক্রিয় অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার অবশ্যই প্রস্ফুটিত হবে, বলেন উপ-রাষ্র্রপতি।

সমস্ত ভারতীয়দের মধ্যে ‘সাধারণ সাংস্কৃতিক হুমকি’কে প্রতিফলিত করে বলে তিনি লক্ষ্য করছেন। এ সম্পর্কে বলেন, আমাদের অনিন্দ্য সাংস্কৃতিক ঐক্য-এর সৌন্দর্য এবং শক্তি আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়। জাগতিক, ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলি থেকে উচ্চতর আধ্যাত্মিক দিকগুলি বীজ বপনের সময় কৃষকদের দ্বারা গাওয়া গান থেকে পরিবেশের প্রতি আমাদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, ভারতীয়তার অন্তর্নিহিত একতা অনুভব করা যায়।

অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি একটি ঐতিহ্যবাহী অসমীয়া ধর্মীয় নৃত্য পরিবেশন 'গায়ন বায়ন' প্রত্যক্ষ করেন। আজ তিনি দুটি বইও প্রকাশ করেছেন। লোকমন্থন উপলক্ষ্যে একটি স্মরণিকা এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার বক্তৃতার একটি সংকলন, যার শিরোনাম 'ইন পারস্যুট অফ এ ড্রিম'।

রাজ্যপাল অধ্যাপক ড. জগদীশ মুখি তাঁর ভাষণে বলেন, লোকমন্থন হল আমাদের দেশের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে থাকা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী ভাণ্ডারগুলিকে আবিষ্কার ও পুনঃআবিষ্কারের একটি যাত্রা। আমি নিশ্চিত, আলোচনা এবং বিবেচ্যতা খুঁজে বের করতে এ ধরনের অনুষ্ঠান খুব সাহায্য করবে। ভারতকে বিশ্বগুরু বানানোর জন্য আমাদের গর্ব পুনরুদ্ধার করতে পথনির্দেশ করতে একটি রোডম্যাপ রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর গঠিত একটি দেশ নয়। বরং এটি একটি সভ্যতা যা ৫,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। ভারত শুধুমাত্র একটি জাতি নয়, যা ১৯ শতকে অস্তিত্ব লাভ করেছে। এটি একটি জীবন্ত সত্তা। উত্তরপূর্ব মহান প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাকে গভীরভাবে সমৃদ্ধ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৫ শতকের বিশিষ্ট বৈষ্ণবসাধক, মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবই প্রথম ভারতকে অসমের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন এবং ভারতকে তাঁর মাতৃভূমি বলে অভিহিত করেছিলেন।

লোকমন্থন-২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে, ড. মনমোহন বৈদ্য, ‘প্রজ্ঞা প্রভা’র রাষ্ট্ৰীয় আহ্বায়ক জে নন্দকুমার এবং দেশের অনেক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার বেশ কিছু অধিবেশন হবে লোকমন্থনে। আগামী তিন দিন গুয়াহাটির শংকরদেব কলাক্ষেত্র চত্বর লোককাহিনির মাধ্যমে আমাদের দেশের লুকনো ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হবে।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ / অরবিন্দ


 rajesh pande