অসমের সাথে মেঘালয়ের সদ্যস্বাক্ষরিত সীমান্ত মউ প্রত্যাহার করা হবে, শিলঙে বহু প্রতিশ্রুতি সংবলিত ইস্তাহার প্রকাশ করে দাবি তৃণমূল নেতা অভিষেকের
মেঘালয়ের জনগণের দ্বারা বহিরাগতবিহীন একটি সরকার গঠন করা, পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচে মহিলাদের মাসিক ভাতা প্রদ
In Shuillong, TMC manifesto published by TMC GS A Banarjee


মেঘালয়ের জনগণের দ্বারা বহিরাগতবিহীন একটি সরকার গঠন করা, পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচে মহিলাদের মাসিক ভাতা প্রদানের অঙ্গীকার

শিলং, ২৪ জানুয়ারি (হি.স.) : ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রদেশ নেতৃবৃন্দ এবং সাংসদ ডেরিক ও'ব্রায়েনকে সঙ্গে নিয়ে অসমের সাথে মেঘালয়ের সদ্যস্বাক্ষরিত সীমান্ত মউ প্রত্যাহার করা, মেঘালয়ের জনগণের দ্বারা বহিরাগতবিহীন একটি সরকার গঠন করা, পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচে মহিলাদের মাসিক ভাতা সহ বহু প্রতিশ্রুতি সংবলিত ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ মঙ্গলবার শিলঙে ইস্তাহার প্রকাশ করে অভিষেকের দাবি, মেঘালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) একমাত্র বিকল্প শক্তি। কেবলমাত্র টিএমসিই রাজ্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। মেঘালয়ের উন্নয়নে ১০টি প্রতিশ্রুতির প্রস্তাব রাজ্যবাসীর ব্যাপক স্বস্তি দেবে, দাবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, আজ প্রকাশিত ইস্তাহারকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করবেন না, এটা টিএমসির অঙ্গীকার।

ইস্তাহারের মাধ্যমে আজ একাধিক সামাজিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়ের উন্নয়নে যে সব অঙ্গীকার করা হয়েছে, সেগুলি যথাক্রমে :

প্রচুর সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ অর্থনীতি :

১। জিডিপির বহর দ্বিগুণ করতে এবং দারিদ্র্যমুক্ত মেঘালয় নিশ্চিত করতে আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।

২। পরবর্তী পাঁচ বছরে কার্যকরী এমএসএমই-র সংখ্যা ১.৩ লক্ষ ইউনিটে উন্নীত করতে বার্ষিক ৪,০০০ নতুন এমএসএমই যোগ করা হবে (বর্তমান বার্ষিক বৃদ্ধির চার গুণ)।

৩। কোনও ব্যক্তির জীবিকা যাতে বিপন্ন না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক ও টেকসই খনি-নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে খনি পুনরায় চালু করা হবে।

একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি :

১। মেঘালয় যুব ক্ষমতায়ন (এমওয়াইই) প্রকল্পের অধীনে আগামী পআঁচ বছরে তিন লক্ষ চাকরি তৈরি করা হবে এবং ২১-৪০ বছর বয়সি প্রত্যেক বেকার যুবক-যুবতীকে ১,০০০ টাকা করে মাসিক (বছরে ১২ হাজার) ভাতা দেওয়া হবে।

২। ডিজিটাল শিক্ষার সুবিধার্থে রাজ্যের সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক এবং কলেজ ছাত্রদের জন্য এক লক্ষ ল্যাপটপ।

৩। পর্যটন ক্ষেত্রে নিয়োজিত সকল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাঁদের পরিষেবাগুলিকে সরকার-নিবন্ধিত জবকার্ডের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ২,৫০০ টাকা মাসিক সাম্মানিক প্রদান করা হবে।

সমৃদ্ধ মেঘালয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নারী :

১। মেঘালয় ফিনানশিয়াল ইনক্লুশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট (এমএফআই ডব্লিউই) স্কিমের অধীনে নিশ্চিত সর্বজনীন আয় সমর্থন হিসাবে প্রতি পরিবারের একজন মহিলাকে প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা (বার্ষিক ১২ হাজার টাকা) সরাসরি স্থানান্তর।

সকলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা :

১। শারীরিকভাবে সক্ষম (পিডব্লিউডি), একক মা, বিধবা এবং প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করে সমস্ত সামাজিক কল্যাণ পেনশন প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা (বার্ষিক ১২,০০০ টাকা) করা হবে।

২। একটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প যেমন, মেঘালয় অসংগঠিত সেক্টর প্রশিক্ষণ এবং ক্ষমতায়ন প্রকল্পের বলে সমস্ত ২.৮ লক্ষ অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, মেয়াদি জীবন বিমা এবং ভবিষ্যনিধি তহবিলের সুবিধা প্রদান করা হবে।

৩। মেঘালয় বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের অধীনে কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা সহায়তা, মৃত্যু সুবিধা, বিবাহ সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী পেনশনের জন্য অনুদানে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি।

৪। সকলের জন্য ই-রেশন কার্ড এবং প্রতিটি যোগ্য পরিবারকে পিডিএস সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আওতাভুক্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সমস্ত জেলায় পুনঃসমীক্ষা। রেশন কিটগুলিতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি চার থেকে আট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে (আলু, ছোলা, রান্নার তেল এবং লবণ অন্তর্ভুক্ত করে)।

ভালো উৎপাদন খুশি কৃষক :

১। ₹একটি নতুন গ্রামীণ মেঘালয়ের জন্য কৃষক সহায়তা (এফএআরএম) প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত কৃষকদের ১০,০০০ টাকা করে বার্ষিক আর্থিক সহায়তা।

২। উৎপাদন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত কৃষকদের ওয়ান স্টপ সহায়তার জন্য রাজ্যের সমস্ত জেলায় এফএআরএম কেন্দ্র।

৩। কৃষকদের শূন্য ক্ষতি নিশ্চিত করতে এফএআরএম শস্য বিমা পলিসি চালু করে সমস্ত ফসল (হর্টিকালচার শস্য সহ) অন্তর্ভুক্ত করবে।

সকলের জন্য সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা :

১। প্রসবপূর্ব এবং প্রসবোত্তর পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রতিটি ব্লকে মা ও শিশুর যত্ন কেন্দ্র।

২। রাজ্যের সমস্ত পিএইচসি এবং সিএইচসিগুলিতে বিশেষজ্ঞ, কর্মী এবং সরঞ্জামের ঘাটতি ১০০ শতাংশ পূরণ করে কার্যকর করা হবে।

৩। মেঘালয়ে নতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা এবং রাজ্য জুড়ে মানসম্পন্ন তৃতীয় স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিশ্চিত করা।

৪। মেঘালয় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের (এমএইচআইএস) অধীনে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি, ২০ শতাংশ ভরতুকি দিয়ে সমস্ত ওষুধ সরবরাহ করার জন্য প্রতিটি ব্লকে একটি করে ৬০টি ওষুধের দোকান খোলা হবে।

শিশুদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা :

১। বই এবং সংশ্লিষ্ট সামগ্রীর খরচ মেটানোর জন্য সরকার-পরিচালিত স্কুলগুলিতে নিবন্ধিত সমস্ত স্কুলশিশুদের পরিবারকে বার্ষিক ১,২০০ টাকা সরাসরি স্থানান্তর।

২। প্রতিটি ব্লকে একটি মডেল স্কুল, সমস্ত জেলায় স্কুল পরিকাঠামোর অবিলম্বে আপগ্রেডেশন এবং রাজ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য আসন সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে।

বাসিন্দাদের জন্য শক্তিশালী নাগরিক সুবিধা :

১। সমস্ত বাড়িতে পাইপযুক্ত পানীয় জলের সংযোগের সুবিধা।

২। সমস্ত পরিবারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো তৈরি করতে মেঘালয় বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিকে পুনর্জীবিত করে কার্যক্ষম করা হবে।

৩। মেঘালয়ের সমস্ত ৬,৪৫৯টি গ্রামের রাস্তাকে মোটর চলাচলের যোগ্য করতে পাকা করে সমস্ত আবহাওয়াপোযোগী রাস্তায় উন্নীত করা হবে।

৪। শিলং রিং রোড প্রকল্প (পূর্ব ও পশ্চিম বাইপাস সংযোগকারী) শহরের ক্রমাগত যানজট কমানোর জন্য মিশন মোডে সম্পন্ন করা হবে।

মেঘালয়ের গৌরব সঙ্গীত, খেলাধুলা, সংস্কৃতি এবং পর্যটন :

১। ব্লক স্তরে প্রতিভা শনাক্তকরণ, প্রশিক্ষণ এবং প্রচারের জন্য গঠন হবে মিশন স্পোর্টস। প্রতিটি জেলায় একটি করে অত্যাধুনিক বহুমুখী স্টেডিয়াম স্থাপন করা হবে।

২। রাজ্যে প্রথম স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি স্থাপন, ২২টি নিবন্ধিত স্টেট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন ও তাদের অধীনে সমস্ত স্বীকৃত স্পোর্টস ক্লাবকে সহায়তা করা হবে।

৩। স্থানীয় সঙ্গীতকে বিশ্ব মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে রাজ্যের সঙ্গীতশিল্পীদের প্রচারের জন্য মেঘালয় মিউজিক প্রমোশন বোর্ড গঠন করা হবে।

৪। প্রতিটি জেলায় সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত হটস্পট চিহ্নিতকরণ ও প্রচারের মাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক পর্যটন সার্কিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। হোমস্টে স্থাপন এবং অন্যান্য টেকসই পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়কে 2 লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদ-মুক্ত ঋণ প্রদান করা হবে।

ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ও পবিত্র ভূমির সম্মান :

১। প্রবর্তিত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমুন্নত রাখতে এবং রক্ষা করার জন্য স্বশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি) এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রামপ্রধানদের সাথে পরামর্শ করে একটি সামগ্রিক গ্রাম প্রশাসন বিল আনা হবে।

২। সমস্ত আইনি ভাড়াটেদের একটি বিস্তৃত রেজিস্ট্রি নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য জুড়ে মেঘালয় রেসিডেন্টস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট (এমআরএসএসএ), ২০১৬ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

৩। সংবিধানের অষ্টম তফশিলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে খাসি ও গারো ভাষাগুলিকে অবিলম্বে স্বীকৃতির জন্য সংসদে বেসরকারি সদস্য বিল।

৪। অসমের সাথে মেঘালয়ের সদ্যস্বাক্ষরিত সীমান্ত মউ প্রত্যাহার করা হবে এবং সমস্ত কৌশলগত সীমান্ত এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।

তৃণমূল কংগ্রেস আরও যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলি :

১। আমরা জনগণের দ্বারা এবং মেঘালয়ের জনগণের জন্য একটি সরকার গঠন করব যা বহিরাগত শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না।

২। রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) বাস্তবায়নের দাবি অধ্যয়ন ও সমাধানের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে।

ইস্তাহার প্রকাশের পর এক সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মেঘালয়ে ক্ষমতায় এলে তাঁরা কী কী করবেন সব শুনিয়েছেন। মেঘালয়ের উন্নয়নে ১০টি প্রতিশ্রুতির প্রস্তাব রাজ্যবাসীর ব্যাপক স্বস্তি দেবে। তাঁর দল প্রতিশ্রুতির খেলাপ করে না, পশ্চিমঙ্গে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল টিএমসি, সবটাই বাস্তবায়ন হয়েছে। তাঁর দাবি, আজ যে ইস্তাহার প্রকাশ করা হয়েছে তাকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বলে ভাবা ঠিক হবে না, এটা টিএমসির অঙ্গীকার।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ / অরবিন্দ




 

 rajesh pande