গোয়ালপাড়া (অসম), ১৭ জুলাই (হি.স.) : গোয়ালপাড়া জেলার অন্তৰ্গত কৃষ্ণাইয়ের পাইকান রিজার্ভ ফরেস্টে পুলিশ ও বন কর্মীদের ওপর সশস্ত্ৰ হামলা করেছে বেদখলকারী উত্তেজিত জনতা। মারমুখি জনতাকে নিরস্ত্র করতে শূন্যে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন শাকুয়ার হোসেন এবং কুতুবউদ্দিন শেখ নামের দুজন। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েকজন বেদখলকারী। এদিকে বেদখলকারী হামলাকারী মহিলা-পুরুষের পাথর ও লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন পুলিশ এবং বন সুরক্ষা কর্মীও। গোটা এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সিআরপিএফ সহ অন্য নিরাপত্তা বাহিনী। আজকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।
গত শনিবার (১২ জুলাই) কৃষ্ণাইয়ের পাইকান রিজার্ভ ফরেস্টের বিদ্যাপাড়া ও বেতবাড়ি বনাঞ্চলের ১,০৩৮ বিঘা ভূমিতে উচ্ছেদ চালিয়েছিল বন বিভাগ। সেদিন ১,০৮০টির বেশি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। দখলকৃত জমি ছাড়ার প্রশাসনিক নোটিশ পাওয়ার পর প্রায় ৭০ শতাংশ বেদখলকারী স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন।
শনিবার পরিচালিত উচ্ছেদের পর বহু পরিবার বিদ্যাপাড়ার উচ্ছেদস্থলে ফের প্লাস্টিক শিট দিয়ে তাবু তৈরি করে বসবাস করছিলেন। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে পাইকানের উচ্ছেদকৃত জায়গায় এক্সক্যাভ্যাটর (জেসিবি) সহ পুলিশ এবং বন সুরক্ষা বাহিনী নিয়ে গিয়েছিলেন বন আধিকারিকরা।
তখন অস্থায়ী তাবুর বেদখলকারীরা জেসিবি নিয়ে সুসজ্জিত পুলিশ এবং বন বিভাগের দলকে দেখে জমায়েত হতে থাকেন। তারা পুলিশ ও বন বিভাগের দল ওই অঞ্চলে প্ৰবেশ করার পর সেখান থেকে বেরোনের সব রাস্তা বন্ধ করে দেন।
এদিকে উচ্ছেদস্থলে প্ৰবেশের রাস্তা বন্ধ করতে জিসিবি চালককে সেখানে গর্ত খোদাই করার নির্দেশ দেন বন আধিকারিক জগদীশ বৰ্মণ। গর্ত খোদাইয়ের নির্দেশ দেওয়ার পর উচ্ছেদিতরা মারমুখি হয়ে ওঠেন। তারা প্রশাসনের লোকজনের দিকে লাঠি-সোঁটা নিয়ে তেড়ে আসেন। পুলিশ ও বনকর্মীদের ওপর পড়তে থাকে প্রায় চার থেকে আট ইঞ্চি মাপের বড় বড় পাথরের বৃষ্টি। উত্তেজিত বেদখলকারীরা এক্সক্যাভ্যাটরেও ভাভচুর চালিয়েছে। তখন উন্মত্ত বেদখলকারীদের নিরস্ত্র করতে শূন্যে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শাকুয়ার হোসেনের। গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন কুতুবউদ্দিন শেখ। কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে যাওয়া হয় গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন কুতুব।
অন্যদিকে পাইকানের বিদ্যাপাড়া এমই স্কুলে অগ্নিসংযোগ করে বসে একাংশ উত্তেজিত জনতা। তবে দমকল বাহিনীর তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে চারজনকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের হাসিনুর রহমান এবং আব্দুল রহিম বলে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস