‘দুয়ারে কার্তিক’ আর নেই, কমেছে প্রতিমা বিক্রি!
বাঁকুড়া, ১৬ নভেম্বর (হি.স.) : গ্রাম বাংলার প্রাচীন লোকাচার ‘দুয়ারে কার্তিক’ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে কমে গেছে প্রতিমার বিক্রি, আর আনন্দ হারিয়েছেন জেলার প্রবীণেরা। সোমবার দেবসেনাপতি কার্তিকের পুজো। তার আগের দিন, রবিবার বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে কিছুটা হল
দুয়ারে কার্তিক  ফেলার রেওয়াজ কমছে, কমেছে প্রতিমা বিক্রি, হারিয়েছে আনন্দ


বাঁকুড়া, ১৬ নভেম্বর (হি.স.) : গ্রাম বাংলার প্রাচীন লোকাচার ‘দুয়ারে কার্তিক’ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে কমে গেছে প্রতিমার বিক্রি, আর আনন্দ হারিয়েছেন জেলার প্রবীণেরা। সোমবার দেবসেনাপতি কার্তিকের পুজো। তার আগের দিন, রবিবার বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে কিছুটা হলেও প্রতিমা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সংখ্যা তুলনায় নিতান্তই কম।

চকবাজারে প্রতিমা নিয়ে আসা নামো আঁচুড়ির হারাধন কুম্ভকার বললেন,“এবার মাত্র ৫৭টা নিয়ে এসেছিলাম। বিকেল পর্যন্ত অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। আগে প্রতিটি পাড়ায় ‘কার্তিক ঠাকুর ফেলা’র ধুম ছিল। এখন সেই রেওয়াজটাই হারিয়ে গেছে।”

একই সুর লালবাজারে ভাদুলের প্রতিমাশিল্পী গৌতম কুম্ভকারের গলাতেও। তাঁর কথায়, বাড়ি বাড়ি কার্তিক ফেলার রীতি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিমা বিক্রি মারাত্মকভাবে কমেছে। এতে জেলার বহু মৃৎশিল্পী ক্ষতিগ্রস্ত।

গ্রাম বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় লোকাচার, লোকবিশ্বাস, নববিবাহিত বা নিঃসন্তান দম্পতিরা কার্তিক পুজো করলে পুত্রসন্তানের প্রাপ্তি হয়। তাই পুজোর আগের রাতে পাড়ার ছেলেমেয়েরা নবদম্পতি বা নিঃসন্তান দম্পতির বাড়ির দরজায় চুপিচুপি কার্তিক ঠাকুর ফেলে রাখত। সকালে প্রতিমা দেখেই শুরু হত পুজোর আয়োজন। আর যারা প্রতিমা ফেলত, তাদের দেওয়া হত পিকনিকের খরচ— উৎসবের আনন্দ বাড়ত আরও কয়েকগুণ।

জুনবেদিয়ার ষাটোর্ধ্ব সনাতন দত্ত স্মৃতিতে এখনও সে দিনগুলো টাটকা। তিনি বলেন,

“আগে লিস্ট করে রাখতাম কোন কোন বাড়িতে কার্তিক ফেলব। পাড়ার সবাই মিলে করতাম। খুব মজা ছিল।”

মানকানালির অশোক সাঁতরা ও নিমাই কর্মকার জানালেন, এখন এই রেওয়াজ কমে যাওয়ার পিছনে রয়েছে খরচবৃদ্ধির চাপ। কার্তিক পুজোর খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারই বিরক্ত হন। পাশাপাশি, লোকাচারের অপপ্রয়োগও শুরু হয়েছিল।

যেসব বাড়িতে নববিবাহিত বা নিঃসন্তান দম্পতি নেই, এমনকি যেখানে অবিবাহিতা বা বিধবা রয়েছেন, সেখানেও কার্তিক ফেলা হত, ফলে সকালবেলা গালাগালির ঘটনাও ঘটত।

এই সব কারণে ‘দুয়ারে কার্তিক’ প্রথা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।

সবিতা নস্কর বলেন,

“এখন ছড়া গাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। আগে বলতাম—

‘মা, মা, ও মা / দুয়ার খলো / বাহির পানে চোখটি মেলো / আমি তোমার দামাল খোকা / দাঁড়ায়ে আছি একলা এক।’এসব নিয়ে কত আনন্দ ছিল! আজ নেই।”

তবে কিছু জায়গায় এখনও পরিবারের অনুরোধে বা সম্মতিতে রেওয়াজটি পালন করা হয়, কিন্তু আগের উৎসব–আনন্দ আর নেই। এক সময়ের উৎসব এখন স্মৃতির পাতায় বেঁচে আছে মাত্র।

হিন্দুস্থান সমাচার / সোমনাথ বরাট




 

 rajesh pande