জাতীয় মৃগী রোগ সচেতনতা দিবস পালিত
কলকাতা, ১৭ নভেম্বর (হি. স.) : প্রতি বছরের মতো এদিনও জাতীয় মৃগী রোগ সচেতনতা দিবস পালন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে নাগরিক সচেতনতা বের হয় পদযাত্রা ও মিছিল। বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ও আজকের দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে রাজ্য জুড়ে পালিত হয়। ন্য
জাতীয় মৃগী রোগ সচেতনতা দিবস


জাতীয় মৃগী রোগ সচেতনতা দিবস


কলকাতা, ১৭ নভেম্বর (হি. স.) : প্রতি বছরের মতো এদিনও জাতীয় মৃগী রোগ সচেতনতা দিবস পালন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে নাগরিক সচেতনতা বের হয় পদযাত্রা ও মিছিল। বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ও আজকের দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে রাজ্য জুড়ে পালিত হয়। ন্যাশনাল এপিলেপসি অ্যাওয়ারনেস ডে উপলক্ষে সচেতনতার বার্তা দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ১৭ নভেম্বর এই দিনটিতে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গেই সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে তা পালিত হয়ে থাকে। ন্যাশনাল এপিলেপসি অ্যাওয়ারনেস ডে উপলক্ষে এ বছরের থিম “ মাই এপিলেপসি জার্নি - এর মাধ্যমেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সঠিক ধারণা তৈরি করা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান। এই প্রসঙ্গে খ্যাতনামা স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ড. সৌরভ হাজরা জানান যে, এই রোগ থেকে মুক্তি বা নিরাময় পাওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন - চিকিৎসকদের মতে, এপিলেপসি বা মৃগী রোগ কোনও অভিশাপ নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ চিকিৎসাযোগ্য স্নায়ুবিক ব্যাধি। সময়মতো রোগ নির্ণয়, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া ও সঠিক সচেতনতার মাধ্যমেই অধিকাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

(ক) সিজার কী ও তা কেন হয় ?

ড. সৌরভ হাজরা জানান, সিজার বা ফিটস মূলত মস্তিষ্কে অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের ফলে হয়। এতে রোগীর আংশিক বা সম্পূর্ণ জ্ঞান হারানোর পাশাপাশি শরীরের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গে অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া দেখা দিতে পারে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’বার বা তার চেয়ে ও বেশি অপ্ররোচিত সিজার হলে তাকে এপিলেপসি আক্রান্ত বলা হয়ে থাকে।

(খ), ভারতে রোগের ব্যাপকতার হদিশ

বিশ্বে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মানুষ এপিলেপসিতে আক্রান্ত, যার মধ্যে ভারতের অংশ প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ কিনা এক - ষষ্ঠাংশ। পশ্চিমবঙ্গে এ রোগের বার্ষিক হার প্রতি এক লক্ষ জনের মধ্যেই ৩৮–৪২ জন। জন্মের সময় দেরিতে কান্না, বিকাশজনিত সমস্যা, সংক্রমণ, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত, রক্তে শর্করা বা সোডিয়ামের পরিবর্তন - সব রোগের গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি - কারক।

(গ), এপিলেপসি নিয়ে মিথ ও বাস্তবতা -

এপিলেপসি নিয়ে সমাজে বহু ভুল ধারণা বিরাজমান। যেমন - রোগটি ছোঁয়াচে, অশুভ শক্তির প্রভাব, রোগীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না বা বিয়ে - সন্তান নেওয়া উচিত নয়। চিকিৎসকদের মতে, এসব কুসংস্কার ভুল। আধুনিক চিকিৎসায় অধিকাংশ রোগী কর্মক্ষম, স্বাভাবিক জীবন চালাতে সক্ষম।

তিনি জানান, - “জুতো বা লোহার গন্ধ নাকে শুকিয়ে দিলেই সিজার থেমে যায়” এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ অ-বৈজ্ঞানিক। এপিলেপসি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ওষুধ, প্রয়োজনে সার্জারি ও সঠিক চিকিৎসা - অনুসরণ।

(ঘ), সিজারের সময় করণীয় ও বর্জনীয় পরামর্শ ।

রোগীর পাশে থেকেই সাহায্য করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে নিরাপদ স্থানে শুইয়ে মাথার নিচে নরম কিছু রাখা, গলার টাইট জামা ঢিলে করে দেওয়া ও এক পাশে ঘুরিয়ে দেওয়া এসব জরুরি পদক্ষেপ। তবে মুখে কিছু ঢোকানো, জোর করে চেপে ধরা বা সিজারের মাঝেই মুখে ওষুধ দেওয়া এমন সব পদ্ধতি বিপজ্জনক ও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

(ঙ), চিকিৎসায় রোগমুক্তির সম্ভাবনা

চিকিৎসকদের অভিমত, সঠিক চিকিৎসায় প্রায় ৭০ শতাংশ রোগী সিজার - ফ্রি জীবনে ফিরতেই পারেন। আধুনিক সার্জারি ও নতুন ধরনের ওষুধ রোগ - নিয়ন্ত্রণকে আরও সহজ করেছে। প্রায় ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই রোগ - প্রতিরোধযোগ্যও বট।

(চ), সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

এপিলেপসি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য - ভার্যের ০.৫ শতাংশ দখল করলেও রোগের চেয়ে বড় সমস্যা সমাজের কুসংস্কার ও বৈষম্য। অনেক রোগী লজ্জা বা ভয়ের কারণে চিকিৎসার পথে এগোতে পারেন না। চিকিৎসকদের মতে, পরিবার ও সমাজের বোঝাপড়া থাকলে একজন রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

ড. সৌরভ হাজরার সচেতনতা বার্তা - “ন্যাশনাল এপিলেপসি ডে - এর লক্ষ্য কুসংস্কার দূর করা, রোগীদের পাশে দাঁড়ানো ও সময়মতো চিকিৎসার গুরুত্ব পৌঁছে দেওয়া। এপিলেপসি লুকিয়ে রাখার নয়, বুঝে এগিয়ে চলার নাম। পরিবার ও সমাজ সচেতন হলে একজন রোগীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন”। এমনটাই বলেন ড. হাজরা।

হিন্দুস্থান সমাচার / শুভদ্যুতি দত্ত




 

 rajesh pande