

- রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ হলো বৈচিত্র্যের মধ্যে ভারতকে এক সূত্ৰে গাঁথার এক পদ্ধতির নাম : সরসংঘচালক
- হিন্দুদের তিন সন্তান নীতির ওপর জোর সংঘ-প্ৰধানের
গুয়াহাটি, ১৮ নভেম্বর (হি.স.) : প্রত্যেক ব্যক্তি, যিনি ভারতকে ভালোবাসেন, নিজের দেশ ভাবেন এবং নিজেকে একজন ভারতীয় বলে গর্ব বোধ করেন, তাঁর উপাসনা পদ্ধতি যা-ই হোক না-কেন, তিনিই হিন্দু। গুয়হাটিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত।
রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শতবৰ্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে গুয়াহাটির হেঙেরাবাড়ির বড়বাড়িতে অবস্থিত আরএসএস-এর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সদর দফতর সুদৰ্শনালয়-এর ‘কৰ্মযোগী গৌরীশংকর চক্ৰবৰ্তী প্ৰেক্ষাগৃহ’-এ আজ মঙ্গলবার আমন্ত্ৰিত বিশিষ্ট সাহিত্যিক, পত্র-পত্রিকা এবং বিভিন্ন সাময়িকীর সম্পাদক ও প্রবন্ধকার, সংবাদ প্ৰতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, শিল্পপতি, আইনজীবী সহ পাঁচ শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘প্ৰবুদ্ধ নাগরিক সম্মেলন’-এ বৌদ্ধিক পেশের পাশাপাশি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কথাগুলি বলেছেন সংঘ-প্রধান৷ মতবিনিময় করতে গিয়ে তিনি সংঘের সভ্যতাগত দৃষ্টিভঙ্গি, সমসাময়িক জাতীয় সমস্যা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
প্ৰাসঙ্গিক বক্তব্যে তিনি বলেন, হিন্দু শব্দ শুধু ধার্মিক পরিভাষা নয়, হাজার হাজার বছরের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ভারতের পরিচয় হিন্দু। হাজারো বছরের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট একটি সভ্যতার পরিচয় হিন্দু। ‘ভারত এবং হিন্দু, একে অপরের সমার্থক, হিন্দু কোনও ধর্ম নয়। হিন্দুরা একটি সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।’ তাই ভারতকে আলাদাভাবে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার দরকার নেই। গোটা বিশ্বের নজর এখন ভারতের দিকে। ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সমগ্র বিশ্বকে পথ দেখাতে পারে, বলেন মোহন ভাগবত।
সংঘের মূল দর্শনের কথা বলতে গিয়ে ডা. ভাগবত বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ হলো বৈচিত্র্যের মধ্যে ভারতকে এক সূত্ৰে গাঁথার এক পদ্ধতির নাম। সংঘ কারও বিরোধিতা বা ক্ষতি করার জন্য কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সংঘ দেশকে মহাশক্তি নয়, বিশ্বগুরুর আসনে অধিষ্ঠিত করতে প্ৰতিষ্ঠিত হয়েছে। প্ৰতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজকে সংগঠিত করতে এবং অবশ্যই ব্যক্তি তথা কাৰ্যকৰ্তা নির্মাণ করতে।
ডা. হেডগেওয়ারের জীবনদর্শনের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, সংঘ কোনও প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন সংস্থার নির্দেশে পরিচালিত হয় না।
ডা. ভাগবত বিশদভাবে সংঘের শতবৰ্ষ পূৰ্তি উপলক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রম ‘পঞ্চ পরিবর্তন’ ‘যেমন সামাজিক সমরসতা’ (সামাজিক সম্প্রীতি), ‘কুটুম্ব প্ৰবোধন’ (পারিবারিক জাগরণ), ‘নাগরিক কর্তব্য’, স্বদেশী ও স্বনির্ভরতা’ এবং ‘পরিবেশ সংরক্ষণ’-এর ব্যাখ্যা করেছেন। সমাজে ‘পঞ্চ পরিবর্তন’, অৰ্থাৎ পাঁচটি পরিবর্তনে পারিবারিক জ্ঞানার্জনের বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় প্রতিটি পরিবারকে তাঁদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করা এবং পরিবারের নতুন প্রজন্মকে তাঁদের সমাজ ও দেশের প্রতি কর্তব্যবোধের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিচালিত করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতিককালে সমাজে রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে বোঝার মানুষ ক্ৰমশ বাড়ছে। তাই সংঘের নাম সমাজে আজ প্ৰসিদ্ধ। হলে কী, এখনও বহু সংখ্যক মানুষ সংঘের মূল ভাবধারা কিংবা কাৰ্যপ্ৰণালী সম্পৰ্কে অবগত হতে পারেননি। তাই সকলকে ঘনিষ্ঠভাবে সংঘকে বোঝার চেষ্টা করা উচিত। কেবল একজন স্বয়ংসেবককে দেখে তাঁদের কাৰ্যপদ্ধতি দেখে সংঘকে বুঝে নিয়েছেন বলে মনে করেন বহু মানুষ। এই বোঝা সম্পূৰ্ণ নয়। তাই সংঘকে নিকট থেকে বুঝতে হলে দৈনন্দিন শাখায় যাওয়ার আহ্বান জানান সরসংঘচালক।
মতবিনিময়কালে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ডা. ভাগবত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অবদানেরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। প্রচলিত ন্যারেটিভ খণ্ডন করে সংঘ-প্রধান বলেন, আরএসএস-এর প্রথম সরসংঘচালক ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার অসহযোগ আন্দোলনের সময় কারাবাস করেছেন। একইভাবে মহারাষ্ট্র, বিহার সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে রাষ্ট্রের অগণিত স্বয়ংসেবক তাঁদের আত্মবলিদানে মাতৃভূমিকে সমৃদ্ধ করেছেন।
তিনি বলেন, ভারত এবং উত্তরপূর্বের বৈচিত্র্য আমাদের ঐক্যের প্রতিফলন। বীর লাচিত বড়ফুকন, মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের প্রসঙ্গ টেনে তিনি নবপ্রজন্মকে তাঁদের রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করে মহান ওই সকল মনীষীদের অনুকরণ করার আহ্বান জানান।
অসম সহ গোটা দেশে অবৈধ অনুপ্ৰবেশ সম্পৰ্কে উদ্বেগ প্ৰকাশ করে এ বিষয়ে তিনি সমাজ ও সরকারের গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন। অসমের জনবিন্যাস পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দুদের তিন সন্তান নীতির ওপরও জোর দিয়েছেন সংঘ-প্ৰধান। এছাড়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রতি কিছু সীমাবদ্ধতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছেন তিনি। অসম সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান ধর্মান্তর সম্পর্কে সচেতন হতে জনতার প্রতি আহ্বান জানান ডা. ভাগবত। এদিন উপস্থিত বিশিষ্ট নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্মবোধে রাষ্ট্ৰ নিৰ্মাণে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সরসংঘচালক।
প্ৰসঙ্গত, তিনদিনের সফরসূচি নিয়ে গতকাল সোমবার গুয়াহাটি এসেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত। আগামীকাল (১৯ নভেম্বর) সকাল ১০:০০টায় অনুষ্ঠিত হবে যুব সম্মেলন। যুব সম্মেলনে নিৰ্বাচিত বেশ কয়েকজন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পপতি প্রমুখদের উপস্থিতিতে আজকের মতো বৌদ্ধিক প্ৰদান এবং মতবিনিময় করবেন সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত৷ ২০ নভেম্বরে তিনি মণিপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস