'ইন্ডিয়া ফার্স্ট' নীতির বলে ভারতকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই, ভারতকে বিশ্বগুরু হতে হবে : ডা. ভাগবত
আরএসএস সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই সময়, রুচি ও ক্ষমতা অনুযায়ী সংঘের কাজে ব্ৰতী হতে যুবশক্তির প্রতি আহ্বান সরসংঘচালকের গুয়াহাটি, ১৯ নভেম্বর (হি.স.) : ''ইন্ডিয়া ফার্স্ট'' নীতিতে ভারতকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই, ভারতকে বিশ্বগুরু হতে হবে। তবে ভারতে
ভারতমাতা পূজন (বাঁয়ে), বৌদ্ধিক পেশ করছেন আরএসএস-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত


যুব নেতৃত্ব সম্মেলন-এ যুব প্রতিনিধিবর্গ


আরএসএস সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই সময়, রুচি ও ক্ষমতা অনুযায়ী সংঘের কাজে ব্ৰতী হতে যুবশক্তির প্রতি আহ্বান সরসংঘচালকের

গুয়াহাটি, ১৯ নভেম্বর (হি.স.) : 'ইন্ডিয়া ফার্স্ট' নীতিতে ভারতকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই, ভারতকে বিশ্বগুরু হতে হবে। তবে ভারতের কোনও ‘ফরেন ন্যাশন’-এর পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়াও উচিত নয়, বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত।

রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শতবৰ্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে তিনদিনের সফরসূচি নিয়ে গত সোমবার গুয়াহাটি এসেছেন সংঘ-প্রধান ডা. মোহন ভাগবত। সফরসূচির মধ্যে নির্ধারিত কার্যসূচির আজ দ্বিতীয় দিন। আজ মঙ্গলবার হেঙেরাবাড়ির বড়বাড়িতে অবস্থিত আরএসএস-এর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সদর দফতর সুদৰ্শনালয়-এর ‘কৰ্মযোগী গৌরীশংকর চক্ৰবৰ্তী প্ৰেক্ষাগৃহ’-এ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তিন শতাধিক যুব প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘যুব নেতৃত্ব সম্মেলন’-এ বৌদ্ধিক পেশের পাশাপাশি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সংঘের উদ্দেশ্য এবং কার্যপ্রণালী সম্পর্কে বহু কথা বলেছেন সংঘ-প্রধান৷

যুব প্রতিনিধিদের সামনে বৌদ্ধিক পেশ করতে গিয়ে সরসংঘচালক বলেন, রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কল্পিত ধারণা তথা উদ্দেশ্যপ্ৰণোদিত অপপ্ৰচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত না-হয়ে সংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে নিরীক্ষণ করতে দেশ তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবশক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবত। পাশাপাশি সময়, রুচি এবং ক্ষমতা অনুযায়ী দেশ তথা সমাজ তথা সংঘের কাজে ব্ৰতী হতেও যুবশক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. ভাগবত বলেন, উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে সংঘের ভিত ক্ৰমশ শক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে জানতে হলে একেবারে ভেতরে ঢুকে পর্যবেক্ষণ-নিরীক্ষণ করা আবশ্যক। সংঘের দৈনন্দিন শাখায় না গেলে সংঘকে বোঝা যাবে না। সংঘের নীতি-আদৰ্শ এবং কৰ্মকাণ্ডের পাশাপাশি সংঘকে নিয়ে চলমান চৰ্চা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূৰ্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন ডা. ভাগবত। সরসংঘচালক বলেন, ‘সংঘ এখন এক চৰ্চার বিষয় হয়ে পড়েছে। চৰ্চা হয় হোক, তা ভালো। কিন্তু সেই চর্চা সত্য তথ্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।’

কণ্ঠশিল্পী শরৎ রাগের দেশভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান অসম তথা উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের যুব সমাজের জন্য সংঘকে বোঝার ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সরসংঘচালক ডা. ভাগবত রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বৰ্ণনা করে সংঘের প্ৰতিষ্ঠাতা তথা প্রথম সরসংঘচালক ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের প্ৰসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘সংঘের মূল উদ্দেশ্য‌ হচ্ছে ভারতকে বিশ্বগুরুর আসনে প্ৰতিষ্ঠা করা। এজন্য কেবল সমাজের উত্থান হলেই রাষ্ট্ৰের উত্থান সম্ভব। ঐক্যবদ্ধ এবং গুণবত্তা-সম্পন্ন সমাজ তৈরি হলে সম্ভব রাষ্ট্ৰের উত্থান।’

এক্ষেত্ৰে উন্নত দেশগুলির ইতিহাস অধ্যয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সব দেশ উন্নতির শিখরে যাওয়ার প্ৰারম্ভিক একশো বছর নিজ নিজ সমাজকে একতা এবং গুণবত্তার আধারে বিকশিত করেছে। ভারতের সমাজও সেভাবে হতে হবে।’

সরসংঘচালক ডা. মোহন ভাগবতের এই বক্তব্যের প্ৰতিফলন ঘটেছে সংঘের শতবৰ্ষ পূৰ্তি উপলক্ষ্যে গৃহীত ‘পঞ্চ পরিবর্তন’ কার্যক্রমকে কেন্দ্ৰ করে। ‘পঞ্চ পরিবর্তন’ যেমন ‘সামাজিক সমরসতা’, ‘কুটুম্ব প্ৰবোধন’, ‘নাগরিক কর্তব্য’, স্বদেশী ও স্বনির্ভরতা’ এবং ‘পরিবেশ সংরক্ষণ’-এর ব্যাখ্যা করে এবং পাঁচটি পরিবর্তনে পারিবারিক জ্ঞানার্জনের বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি যুবসমাজকে তাঁদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করে সমাজ ও দেশের প্রতি কর্তব্যবোধে আবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে রাষ্ট্ৰ হিসেবে ভারতের মহানুভবতার পেছনে নানা ভাষা, বিভিন্ন প্ৰান্তের একাত্মতা, বিশ্বাসের বিবিধতাকে সম্মান ও স্বীকার করার পরম্পরাকে তুলে ধরেছেন সরসংঘচালক। তিনি বলেন, ‘বৈচিত্ৰকে সম্মান দেওয়ার ভাবনা অন্য দেশে নেই। ভারতে বিবিধতাকে নিয়ে প্ৰচলিত ভাবধারা হলো, আমারটাও শুদ্ধ, তোমার স্থলে তুমিও শুদ্ধ।’ এক্ষেত্ৰে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন যারা হয়েছে তারা বিবিধতাকে হারিয়ে ফেলেছে বলে তিনি বলেন, পাকিস্তানে পঞ্জাবি এবং সিন্ধিভাষীরা উৰ্দু ভাষা ব্যবহার করেন। ডা. ভাগবত বলেন, ‘এই বিবিধতাকে যাঁরা সম্মান করেন তাঁরাই হিন্দু। এ রকম হিন্দু সমাজকে একত্ৰিত করে, এক সূত্রে গাঁথাই রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের লক্ষ্য।’

ডা. মোহন ভাগবত বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত ভারতের সমাজ সংগঠিত এবং গুণবান না-হবে, ততদিন ভারতের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। গুরু নানক, শ্ৰীমন্ত শংকরদেব প্রমুখ যুগনায়কেরাও নিজের নিজের কৰ্মকণ্ডের মাধ্যমে ভারতের এই বৈচিত্ৰতাকে সম্মান জানিয়ে একতার বাণী বিলিয়েছেন। এক কথায় বিবিধতা একতার উদ্‌যাপন।’

গুয়াহাটি মহানগরের বিভিন্ন ক্ষেত্ৰের যুব নেতৃত্বেএর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে গুণবান, চরিত্রবান, সম্পূর্ণ মানুষ গড়ার প্ৰণালী বলে এক সাবলীল বাখ্যা দিয়েছেন সরসংঘচালক ড. ভাগবত। তিনি বলেন, ‘সংঘের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় পৰ্যায়ে অরাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। ব্যক্তি নিৰ্মাণেই সমাজ পরিবৰ্তন হবে এবং সমাজ পরিবৰ্তন হলেই ব্যবস্থার পরিবৰ্তন হব।’ সংঘের শাখাগুলিতে কীভাবে ব্যক্তির গুণবত্তার উত্তরণে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিতে তিনি যুবশক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্ৰশ্নোত্তর পর্বে আন্তরিক আলাপচারিতায় দুৰ্নীতি-ভ্ৰষ্টাচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চরিত্ৰ হনন করে বলে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন সরসংঘচালক। তিনি আরও বলেন, আইনের বলে গোরক্ষার পাশাপাশি সমাজে বৈজ্ঞানিকভাব গো-পালন হলে প্ৰকৃতাৰ্থে গোরক্ষা হবে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি ফের বলেন, রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উদ্দেশ্য‌ হচ্ছে একটি শক্তিশালী ভারত গড়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'ইন্ডিয়া ফার্স্ট' নীতিতে ভারতকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। তবে ভারতের কোনও ‘ফরেন ন্যাশন’-এর পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়া উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে টেনে এনে বলেছেন, তারা তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ অনুসরণ করে। বৈশ্বিক সম্প্রীতির কথা বলা সত্ত্বেও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই স্বার্থগুলিকে প্রতিফলিত করে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়ার পরিবর্তে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি দৃঢ়ভাবে ভারতপন্থী হওয়া উচিত। আমরা যখন আমাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করব, তখন বিশ্ব কল্যাণ স্বাভাবিকভাবেই অনুসরণ করবে। একটি শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভরশীল ভারত যে কোনও প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতে আরও শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতি এবং সহযোগিতামূলক, শান্তিপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সুষম বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব সমাধানে সাহায্য করবে।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande