
শিলচর (অসম), ২৪ নভেম্বর (হি.স.) : কাছাড় জেলার অন্তর্গত ধলাই সম-জেলা আয়ুক্তের কার্যালয় মাঠে আজ সোমবার উদ্দীপনা ও জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে অসম–মিজোরাম বর্ডার ফেস্টিভ্যাল ২০২৫। কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সাংস্কৃতিক ঐক্যের দ্বিতীয় সংস্করণে প্রতিবেশী দুই রাজ্যের বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, বরিষ্ঠ আধিকারিকগণ এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।
অসম–মিজোরাম (আন্তঃরাজ্য) সীমান্ত উৎসবে মিজোরাম থেকে উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল অংশ নেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কলাশিবের জেলা উপায়ুক্ত রবার্ট সি লালহমানগাইহা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ লালরিনপুইয়া ভারতে, অতিরিক্ত জেলা উপায়ুক্ত বি মালসাওমত্লুয়াঙ্গি, প্রজেক্ট ডিরেক্টর লালমুয়ান পুইয়া, ভাইরেংটির এসডিও (সিভিল) লালবিয়াকজাউভা এবং মামিত জেলার এসডিও। অন্যদিকে অসমের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস, কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, ধলাই সম–জেলার আয়ুক্ত রক্তিম বরুয়া, কাছাড় জেলা উন্নয়ন আয়ুক্ত নরসিং বে, সহকারী আয়ুক্ত নেইহাট হাওলাই, সহকারী আয়ুক্ত বহ্নিখা চেতিয়া, সহকারী আয়ুক্ত ফোনলালংগির চরেই, সহকারী আয়ুক্ত তথা শিলচরে অবস্থিত বরাক উপত্যকার তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিকর্তা দীপা দাস, সহকারী আয়ুক্ত (ধলাই সম-জেলা) দীক্ষা সরকার সহ বহু বরিষ্ঠ আধিকারিকগণ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য পেশ করতে ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস উৎসবটির সফল আয়োজনে তৃপ্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক বিনিময় মানুষের মধ্যে দূরত্ব দূর করে এবং অতীতের ভুল বোঝাবুঝি মুছে দেয়। তাঁর বিশ্বাস, এই উৎসব দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যতে শান্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা স্থাপনে নিয়মিত সাংস্কৃতিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিলচরের পরিমল শুক্লবৈদ্য তাঁর ভাষণে ঐক্য ও সমষ্টিগত পরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সকলকে মনে করিয়ে দেন, ‘ সবার আগে আমরা ভারতীয়।’ তিনি আহ্বান জানান, অতীতের চ্যালেঞ্জ ভুলে সহযোগিতা ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে। ভারতবর্ষে দ্রুতগতির পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি ভারতমালা প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। সাংসদ বলেন, নির্মীয়মাণ চার লেন সড়ক দুই রাজ্যের সংযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, সীমান্তবর্তী যোগাযোগ গভীরতর করা এবং দুই রাজ্যের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের নতুন অধ্যায় রচনায় সহায়ক হবে।
মিজোরাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কলাশিবের জেলা উপায়ুক্ত রবার্ট সি লালহমানগাইহা অতীতের ঘটনাগুলির পুনরাবৃত্তি না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যোগাযোগ ও প্রশাসনিক সহযোগিতাই শান্তি বজায় রাখার প্রধান উপায়। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দুই রাজ্যের মানুষকে মহান দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কাছাড় জেলা প্রশাসন এই গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদি সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে।
সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বলেন, উৎসবটি সত্যিকারের ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতিফলন। তিনি আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, অসমের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মিজোরাম থেকে আগত অতিথিদের মিলন এই উৎসবকে এক অনন্য বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান সামাজিক ও প্রশাসনিক উভয় স্তরেই বোঝাপড়া বাড়াতে সাহায্য করে, যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এর আগে স্বাগত ভাষণে কাছাড়ের জেলা উন্নয়ন আয়ুক্ত নরসিং বে দুই রাজ্যের সকল গণ্যমান্য ব্যক্তি, কর্মকর্তা এবং অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বর্ডার ফেস্টিভ্যাল দুই রাজ্যের দীর্ঘদিনের পারস্পরিক ঐতিহ্য ও প্রতিবেশী সম্পর্কের প্রতীক। উন্নয়ন আয়ুক্ত বলেন, এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম কেবল প্রশাসনিক সহযোগিতাই নয়, মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার কাজও করে। তিনি জানান, উভয় রাজ্যের উৎসাহী অংশগ্রহণ জেলা প্রশাসনের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমষ্টিগত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, উৎসবটি আগামী দিনেও শুভেচ্ছা, বিশ্বাস ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে থাকবে।
উদ্বোধনী পর্বের পর শুরু হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। এতে ভাইরেংটি ও মামিতের সাংস্কৃতিক দল ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করে। আর অসমের সাংস্কৃতিক দল অনুষ্ঠানে যোগ করে রং ও ছন্দের ছটা। দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখেছেন অসম স্টেট রুরাল লাইভলিহুডস মিশন এবং মিজোরাম স্টেট রুরাল লাইভলিহুডস মিশন-এর হস্তশিল্প এবং জীবিকা-সংক্রান্ত প্রদর্শনী, যা দুই রাজ্যের কারিগরদের উদ্যোক্তা দক্ষতাকে তুলে ধরে।
বিকালে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় সৌহার্দ্যপূর্ণ ফুটবল ও ভলিবল ম্যাচ, যা দুই রাজ্যের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। সাব-এইচকিউ ওয়াইএমএ কলাশিব, মিজোরাম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন কলাশিব জেলা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। অসম-মিজোরাম বর্ডার ফেস্টিভ্যাল শান্তি, অগ্রগতি এবং দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে সাদৃশ্য বজায় রাখার জন্য এক পারস্পরিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস