আমাদের সংবিধান - আমাদের স্বাভিমান
নয়াদিল্লি, ২৫ নভেম্বর (হি.স.): আমাদের সংবিধান - আমাদের স্বাভিমানের যাত্রা মূল বিষয় বৃহত্তম সংবিধান প্রচারাভিযান: ‘হামারা সংবিধান হামারা সন্মান’ অভিযানটি ভারতের সংবিধানের ৭৫-তম বছর উপলক্ষ্যে অভূতপূর্ব জন-অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৩,৭০০টিরও বে
আমাদের সংবিধান -  আমাদের স্বাভিমান


নয়াদিল্লি, ২৫ নভেম্বর (হি.স.): আমাদের সংবিধান - আমাদের স্বাভিমানের যাত্রা

মূল বিষয়

বৃহত্তম সংবিধান প্রচারাভিযান: ‘হামারা সংবিধান হামারা সন্মান’ অভিযানটি ভারতের সংবিধানের ৭৫-তম বছর উপলক্ষ্যে অভূতপূর্ব জন-অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৩,৭০০টিরও বেশি ইভেন্টের মাধ্যমে এক কোটিরও বেশি নাগরিককে একত্রিত করেছে।

তৃণমূল স্তর থেকে ডিজিটাল সংযোগ:

এই উদ্যোগটি ২.৫ লাখেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত, আকাঙ্খী জেলা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছে, একইসঙ্গে মাইগভ অঙ্গীকার, কুইজ এবং সৃজনশীল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আরও অসংখ্য নাগরিককে যুক্ত করেছে।

সূচনা

২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস। এদিনটি ১৯৪৯ সালে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এটি ন্যায়, স্বাধীনতা, সমতা এবং সৌভ্রাতৃত্বের নীতিগুলিকে তুলে ধরে।

সংবিধানের ৭৫-তম বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে, প্রথমে 'হামারা সংবিধান হামারা সন্মান' (২০২৪) এবং পরে 'হামারা সংবিধান - হামারা স্বভিমান' (২০২৫) এই দেশব্যাপী অভিযান শুরু হয়।

এই উদ্যোগগুলির মূল লক্ষ্য হল, সংবিধানের মূল্যবোধগুলিকে সাধারণ মানুষের জন্য সরল করা, আইনি স্বাক্ষরতা বাড়ানো এবং ন্যায় সহায়তার মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে সংবিধান সম্পর্কে গভীর সচেতনতা ও গর্ব তৈরি করা।

এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্য - জনগণের চেতনায় সংবিধানের দৃশ্যমান উপস্থিতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এর সৃষ্টির কঠোর পরিশ্রম তুলে ধরে নাগরিকদের মধ্যে গর্বের অনুভূতি সৃষ্টি করা।

১৩,৭০০-টির বেশি ইভেন্টে এক কোটিরও বেশি নাগরিকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি আইনি স্বাক্ষরতা ও স্বভিমানকে ক্রমাগত শক্তিশালী করছে।

এটি শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন গঠনে প্রতিটি ভারতীয়কে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার জন্য এই উদ্যোগটি একটি অনুঘটক হয়ে উঠেছে।

এই দেশব্যাপী অভিযানটি তিনটি প্রধান উপঅভিযানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছিল:

১.সবকো ন্যায় - হর ঘর ন্যায় (Sabko Nyay - Har Ghar Nyaya): সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ।

২.নব ভারত নব সংকল্প (Nav Bharat Nav Sankalp): নতুন ভারতের জন্য প্রতিশ্রুতি এবং অঙ্গীকার।

৩.বিধি জাগৃতি অভিযান (Vidhi Jagriti Abhiyaan): আইনি স্বাক্ষরতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।

সবকো ন্যায়, হর ঘর ন্যায় (Sabko Nyay, Har Ghar Nyaya)

এই অভিযানটি তৃণমূল স্তর থেকে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে আদালত, আইনি সহায়তা পরিষেবা এবং আইনি কাঠামোর সংস্কার সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করা হয়, যার লক্ষ্য প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে কর্তব্যের বোধ জাগ্রত করা। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তিনটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ চালু করা হয়েছিল।

সবকো ন্যায়: পঞ্চ প্রাণ শপথ

পঞ্চ প্রাণ শপথের মূল বিষয়গুলি হল :

উন্নয়ন-মুখী দেশ

দাসত্বের মানসিকতা দূরীকরণ

আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব

ঐক্য ও সংহতির প্রতি অঙ্গীকার

সকল নাগরিকের মধ্যে কর্তব্যের বোধ জাগানো।

সচেতনতা বাড়াতে QR কোড ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তা সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গ্রাম্য স্তরের উদ্যোগীরা ২.৫ লাখেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে মানুষকে শপথ নিতে উৎসাহিত করে এই আন্দোলনকে গ্রামীণ স্তর পর্যন্ত প্রসারিত করেছেন।

ন্যায় সেবা মেলা: রাজ্য-স্তরের আইনি পরিষেবা মেলা

এটি ২৫-টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলার প্রধান লক্ষ্য ছিল আইনি সহায়তা ক্লিনিকগুলির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকল্পগুলি এবং টেলি-ল' পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি ৮৪ লক্ষেরও বেশি নাগরিকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

ন্যায় সহায়ক: গোষ্ঠীভিত্তিক আইনি বার্তাবাহক

ন্যায় সহায়করা হলেন গোষ্ঠীভিত্তিক আইনি বার্তাবাহক, যারা ব্লক ও জেলা স্তরে ঘরে ঘরে বিচার বিভাগের পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা দেন এবং ১৪,৫৯৮-টিরও বেশি মামলা নথিভুক্ত করেছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মাসিক 'বিধি বৈঠক' সেশনের মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে আইনি সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।

নব ভারত নব সংকল্প

এটি হল মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে, বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে, পঞ্চ প্রাণ নীতি এবং সংবিধানের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পিত একটি উদ্যোগ।

এই অভিযানে চারটি অংশগ্রহণমূলক কার্যকলাপ রয়েছে:

বিধি জাগৃতি অভিযান

বিধি জাগৃতি অভিযানের লক্ষ্য হল, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষদের তাদের আইনি অধিকার এবং সেগুলি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে শিক্ষিত করা।এটি আইনের অধীনে নাগরিকদের প্রাপ্য বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করে, যার মধ্যে রয়েছে সামাজিক কল্যাণ সুবিধা, ইতিবাচক পদক্ষেপের নীতি এবং প্রান্তিক মানুষগুলির জন্য আইনি সুরক্ষা।

এই উপ-অভিযানটি তিনটি রূপান্তরকারী উদ্যোগ নিয়ে গঠিত:

গ্রাম বিধি চেতনা

ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন গ্রামে আইনি সচেতনতা কার্যক্রমের আয়োজন করেছিল এবং তৃণমূল স্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছিল। এই উদ্যোগে ১০,০০০ এরও বেশি সুবিধাভোগীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছিল।

বঞ্চিত বর্গ সম্মান অভিযান

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিভাগটি IGNOU এবং দূরদর্শনের সাথে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার সম্পর্কিত অনলাইন কর্মশালা/ওয়েবিনার আয়োজন করেছে।

বঞ্চিত বর্গ সম্মান অভিযানের অধীনে, নিচে উল্লেখিত ৭টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল:

অধিকারের সম্মান (শিশু, মহিলা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তফসিলি জাতি, রূপান্তরকামী এবং প্রবীণ নাগরিক)।

যত্ন ও সুরক্ষার প্রয়োজন এমন শিশুরা।

মহিলার শালীনতা ভঙ্গ করা।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি।

তফসিলি জাতিদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প।

রূপান্তরকামীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প।

প্রবীণ নাগরিকদের আইনি সহায়তা ও সচেতনতা।

মহিলা অংশীদারিত্ব

এই উদ্যোগে লিঙ্গ-ভিত্তিক বিষয়গুলি নিয়ে অনলাইন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল বৃহত্তর সচেতনতার জন্য, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে আইনি চেতনা তৈরি করতে এবং জ্ঞান দিয়ে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করতে সহায়ক হয়েছে।

জাতীয় আইন স্কুল অফ ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি (বেঙ্গালুরু), বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ প্রফেশনাল স্টাডিজ (ভিআইপিএস), জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (দিল্লি) ইত্যাদির মত বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলি মহিলাদের প্রতি সহিংসতার বিষয়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর গ্রাম স্তরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং মাইলফলক

২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি অভিযানটি চালু হওয়ার পর, অভিযানের বিকেন্দ্রীভূত প্রচার নিশ্চিত করার জন্য চারটি আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিকানের (রাজস্থান) - ৯ মার্চ, ২০২৪

২০২৪ সালের ৯ মার্চ, রাজস্থানের বিকানেরে আইন ও বিচার মন্ত্রক ‘হামারা সংবিধান - হামারা সন্মান’ অভিযানের প্রথম আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এই অনুষ্ঠানে ভারতের ৫০০-টি আকাঙ্খী ব্লকের জন্য ন্যায় সহায়ক উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়, যা তৃণমূল স্তরে আইনি পরিষেবা পৌঁছে দেবে। এছাড়া টেলি-ল’ রাজস্থান বুকলেট এবং ভয়েসেস অফ বেনিফিশিয়ারিস-এর বিশেষ মহিলা সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।

প্রয়াগরাজ (উত্তর প্রদেশ) - ১৬ জুলাই, ২০২৪

হামারা সংবিধান 'হামারা সন্মান’ অভিযানের দ্বিতীয় আঞ্চলিক অনুষ্ঠানটি ২০২৪ সালের ১৬ই জুলাই প্রয়াগরাজের এলাহাবাদ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত হয়েছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে হামারা সংবিধান হামারা সন্মান পোর্টালের সূচনা করা হয়, যা একটি ব্যাপক ডিজিটাল জ্ঞান স্টেশন হিসাবে পরিকল্পিত। এটি নাগরিকদের তাদের মৌলিক অধিকার, কর্তব্য এবং সাংবিধানিক সুরক্ষা সম্পর্কে সহজলভ্য সংস্থান সরবরাহ করে। প্রায় ৮০০ জন অংশগ্রহণকারী সশরীরে এবং ডিজিটাল মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

গুয়াহাটি (অসম) - ১৯ নভেম্বর ২০২৪

আইন ও বিচার মন্ত্রকের অধীনে বিচার বিভাগ কর্তৃক ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর আইআইটি গুয়াহাটি অডিটোরিয়ামে এই অভিযানের তৃতীয় আঞ্চলিক পর্বটি আয়োজিত হয়েছিল।

এই অনুষ্ঠানে তিনটি নতুন সামগ্রী -পডকাস্ট, কমিক বই এবং সংবিধান কাট্টা চালু করা হয়।

সংবিধান কাট্টা: একটি পত্রিকা, যেখানে দৈনন্দিন জীবনে ভারতের সংবিধানের প্রভাব তুলে ধরা ৭৫-টি গল্প রয়েছে।

কমিক বই: এতে টেলি-ল' এবং ন্যায় বন্ধু কর্মসূচির সুবিধা নিয়ে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করেছেন এমন ১০ জন সুবিধাভোগীর বাস্তব গল্প রয়েছে।

পডকাস্ট: টেলি-ল' এবং ন্যায় বন্ধু কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত করার ভূমিকা নিয়ে আটটি পডকাস্ট প্রকাশ করা হয়।

এই অনুষ্ঠানে প্রায় ১৪০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।

কুম্ভ (প্রয়াগরাজ, উত্তর প্রদেশ) - ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

এই বছরব্যাপী অভিযানটি ২০২৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তার চূড়ান্ত অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিল, যা প্রয়াগরাজের আরায়েল ঘাটে পরমার্থ ত্রিবেণী পুষ্পে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলার সময় আয়োজিত হয় এবং এটি ছিল হামারা সংবিধান - হামারা সন্মান-এর চতুর্থ আঞ্চলিক অনুষ্ঠান।

এই অনুষ্ঠানে ‘হামারা সংবিধান হামারা সন্মান’ অভিযানের একটি সাফল্য পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। প্রায় ২০০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানটি দেশব্যাপী লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছিল।

এই ইভেন্টটি সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতি সচেতনতা, ঐক্য এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের শক্তিশালী অঙ্গীকারকে পুনরায় নিশ্চিত করে।

উপসংহার

'হামারা সংবিধান’ অভিযানটি ভারতের বৃহত্তম সাংবিধানিক প্রচার উদ্যোগগুলির মধ্যে অন্যতম, যা আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে তৃণমূল স্তরে সংবিধানের মূল্যবোধগুলিকে (ন্যায়, স্বাধীনতা, সমতা) প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এই অভিযানটি ১৩,৭০০-টিরও বেশি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক কোটিরও বেশি নাগরিককে একত্রিত করেছে এবং বর্তমানে 'স্বভিমান' পর্যায়ে এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নাগরিকদের মধ্যে দেশের সংবিধান সম্পর্কে গভীর গর্ববোধ জাগানো।

এই বিষয়ে জানিয়েছে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ




 

 rajesh pande