অজয় নদে অবৈধ বালির রমরমা কারবার, বেপরওয়া বালি বোঝাই লরি যাতায়াতে আতঙ্কে গ্রামবাসীরা
দুর্গাপুর, ৩ নভেম্বর (হি. স.) : শারদ উৎসব মিটতেই নদী গর্ভে বালি উত্তোলনের হিড়িক শুরু। রাতের অন্ধকারে অজয় নদের বুক চিরে অবাধে চলছে বালি উত্তোলন। কোথাও ''লোকাল নির্মাণে''-এর নাম করে দিনরাত ট্রাক্টরে করে চলছে বালি পাচার। আবার কোথাও রাতের অন্ধকারে ল
অজয় নদে অবৈধ বালির রমরমা কারবার, বেপরওয়া বালি বোঝাই লরি যাতায়াতে আতঙ্কে গ্রামবাসীরা


দুর্গাপুর, ৩ নভেম্বর (হি. স.) : শারদ উৎসব মিটতেই নদী গর্ভে বালি উত্তোলনের হিড়িক শুরু। রাতের অন্ধকারে অজয় নদের বুক চিরে অবাধে চলছে বালি উত্তোলন। কোথাও 'লোকাল নির্মাণে'-এর নাম করে দিনরাত ট্রাক্টরে করে চলছে বালি পাচার। আবার কোথাও রাতের অন্ধকারে লরি ডাম্পার ট্রাক্টরে চলছে বালি পাচার। আর তাতেই বেহাল হয়ে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। বেপেরওয়া ট্রাক্টর যাতায়াতে আতঙ্কে গ্রামবাসী। এমনই নজিরবীহিন ঘটনা কাঁকসার বনকাটি, সাতকাহানি ও লাউদোহার গৌরবাজার মাধাইপুরে। অভিযোগ, শাসকদল ও পুলিশের মদতে চলছে অবৈধ বালির রমরমা কারবার। আবার পুলিশের জালে ধরা পড়লে মাঝপথেই রফা করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব বিজেপি। প্রশ্নের উঠেছে ভূমি রাজস্ব দফতরের ভূমিকায়।

প্রসঙ্গত, বর্ষার মরশুমে নদীতে বালি তোলা, মোরাম ও মাটি খাদান চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। কারন এই সময় নরম মাটিতে ধস প্রবণতা ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা ও শারদ উৎসব মিটতেই একেবারে নতুন কায়দায় চলছে বালি পাচার। 'লোকাল নির্মাণে'র নামে চলছে বালি উত্তোলন। তারপর নদী থেকে কিছুটা দুরে ওয়েব্রীজে মজুত করা হচ্ছে। এবং সেখান থেকে ডাম্পার লরিতে বোঝাই হয়ে কলকাতায় যাচ্ছে। অজয় নদেরকাঁকসার শিবপুর, কাজলাডিহি, কোটালপুকুর, পেয়ারাবাগান ঘাটে দিনরাত চলছে বলি পাচার। কমপক্ষে ৫০ টি ট্রাক্টর নদী থেকে বালি তুলে ১১ মাইল মোড়ে ওয়েব্রীজে মজুত করছে। তারপর সেখান থেকে লরি ও ডাম্পারে বোঝাই হয়ে শহরে যাচ্ছে। একইরকমভাবে বুদবুদের দামোদরে রনডিহা, শাকুড়ি, মুন্সীপুর, শালডাঙা ঘাটে অবাধে চলছে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন ও পাচার। দিনরাত কমবেশী ৪০ টি ট্রাক্টর রমরমিয়ে অবৈধ বালির চোরা কারবার চালাচ্ছে ওই এলাকায়। শালডাঙা ক্যানেল পাড় এলাকায় মজুত করছে। সেখান থেকে লরিতে ও ডাম্পারে বোঝাই করে শহরে যাচ্ছে। একইরকমভাবে লাউদোহার মাধাইপুর, গৌরবাজারে অজয় নদীর ওপর একাধিক অবৈধ বালিঘাট চলছে। এছাড়াও পান্ডবেশ্বরেও একইরকমভাবে অজয় নদীর ওপর রমরমিয়ে চলছে অবৈধ উপায়ে বালি পাচারের রমরমা কারবার। ওয়েব্রীজের আড়ালে চলছে এই বালি কারবার। দিনরাত শখানেক ট্রাক্টরে করে গৌরবাজারে গজিয়ে ওঠা ওয়েব্রীজে বালি মজুত করা হচ্ছে। গৌরবাজারের অবৈধ বালি বোঝাই লরি ডাম্পার গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে সোজা উঠছে কাঁকসার শিবপুর মলানদীঘিতে। তারপর সেখান থেকে মুচিপাড়ায় জাতীয় সড়কে ওঠে। গত পরশু দিন লাউদোহা পুলিশ দুটি বালি বোঝাই লরি ও ট্রাক্টর ধরে মামলা দায়ের করে। এদিকে অবৈধ বালি পাচারের প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির অভিযোগ, 'শাসকদল, পুলিশ ও প্রশাসনের মদতে চলছে অবৈধ বালির লুটতরাজ। বালি কয়লা বন্ধ হলে তৃণমূলের পার্টি অফিসগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।' সোমবার বিজেপি নেতা তথা পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জীতেন্দ্র তেওয়ারী সমাজ মাধ্যমে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে পোষ্ট করেছেন। তাতে লেখা আজ ভোর সাড়ে চারটে নরেনের প্রিয় গৌড়বাজারের অঞ্চলে তিনটি অবৈধ বালির গাাড়ি ১৬ চাকা ডাম্পার, থানায় ধরে নিয়ে গেছে। সেটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নরেনের বাহিনী দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এদিন কোন বালি বোঝাই লরি আটক হয়নি। গত পরশুদিন দুটি বালির গাাড়ি আটক হয়েছিল। মামলা হয়েছে। আর তাতেই জল্পনা শুরু হয়েছে।এদিন বিজেপি নেতা জীতেন্দ্র তেওয়ারী বলেন, গাড়ি আটক করেছিল। হয়তো বালির গাড়ি আটক করে মাঝপথেই পুলিশ রফা করে নিয়েছে। এদিকে অবৈধ বালি পাচারে প্রশ্ন উঠেছে ভূমি রাজস্ব দফতরের ভূমিকায়। অর্থনৈতিক সঙ্কটে যখন রাজ্য। তখন কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান হচ্ছে রাজ্যের। জানা গেছে, বালি উত্তলোনে যেমন ভূমি রাজস্ব দফতরের নিয়ম মেনে অনুমতি নিতে হয়। তেমনই বালি মজুত করতে হলেও রয়েলটি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়। আর এসবের তোয়াক্কা না করে অবাধে চলছে অবৈধ বালির চোরা কারবার। তার জেরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান হচ্ছে। এছাড়াও বালির গাড়ি যাতায়াতে বেহাল হয়ে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। বেপরওয়া বালি বোঝাই ট্রাক্টর যাতায়াতে আতঙ্কিত কাঁকসার বনকাটি, সাতকাহানিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, দিনরাত অনবরত বালির গাড়ি যাতায়াতে ভেঙে পড়েছে রাস্তা। সুষ্ঠভাবে যাতায়াত করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। কাঁকসার বনকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাবাসুম খাতুন বলেন,গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছে। রাতের দিকে বালির ট্রাক্টর চলছে। বালি বোঝাই ট্রাক্টর যাতায়াতে ভেঙে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। ভারী গাড়ি যাতায়াতে রাস্তা বেশীদিন টেকসই হচ্ছে না। যদিও এবিষয়ে ভূমি রাজস্ব দফতর কোন মন্তব্য করতে চায়নি।

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande