
বাঁকুড়া, ৮ নভেম্বর (হি.স.) : একের পর এক সাপের উপস্থিতি বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া ও ছাতনা ব্লকে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। শনিবার এই বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভও দেখা গিয়েছে।
শালতোড়া ব্লকের ঢেঁকিয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় ৬ ফুট লম্বা একটি ও সাপ দেখতে পান গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে শালতোড়া বন দফতরের কর্মীরা সাপটিকে ধরে পর্যবেক্ষণের পর নিরাপদে জঙ্গলে ছেড়ে দেন। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগের দিন বুধবার ছাতনার এথানী এলাকায় ধান কাটতে গিয়ে জমিতে প্রায় ১৫ ফুট লম্বা ও ৩০ কেজি ওজনের ময়াল সাপ দেখা যায়। বিশাল আকারের এই ভারতীয় রক পাইথনের উপস্থিতি জানতে পেরে গ্রামবাসীরা ভিড় জমান ও মোবাইলে ছবি তুলেন। বন দফতরের পক্ষ থেকে সাপটিকে ধরা হয় এবং নিরাপদে পুনঃস্থাপন করা হয়।
এদিকে, সাপের উপদ্রব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাই ডিয়ার এন্ড ওয়াইল্ডস্ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শালতোড়া ও তিলুড়ি এলাকায় নাটক ও গানের আয়োজন করেছে।
অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার, যখন ছাতনার সরবেড়িয়া গ্রামের ১২ বছর বয়সী কিশোর সন্দীপ রানা ধানক্ষেত দেখতে যায়, সেই সময় তাকে বিষধর সাপে কামড়ায়।
পরিবারের অভিযোগ, কিশোরকে প্রথমে নিকটবর্তী ছাতনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার বদলে অভিভাবক ডেকে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিশোরকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিশোরের মৃত্যু হয়। মৃত কিশোরের পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাসিন্দারা দাবি করেছেন, প্রকৃত তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্ষোভের চাপের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এখনও এলাকায় মোমবাতি মিছিলসহ প্রতিবাদ চলছেই।
উল্লেখযোগ্য, স্থানীয় বন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শালতোড়া ব্লকে ২০২৪–২৫ সালে প্রায় ৫০টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। সাপগুলির মধ্যে ছিল ২৭ ভারতীয় কোবরা, ৯ পাইথন/অজগর, ২ কমন স্যান্ড বোয়া, ৫ শঙ্খিনী, ১ ইন্ডিয়ান ক্রেইট, ১ ব্ল্যাক কোবরা, ৪ র্যাট স্নেক ও ১ কমন ক্রেইট।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শিল্পীরা জানান, সাপ চাষের জমিতে ঢুকে পড়ছে, যা কিছুটা ফসল ক্ষয় কমাতে সাহায্য করছে। তবে তারা স্থানীয়দের সচেতন থাকার আবেদন জানিয়েছেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সোমনাথ বরাট