দেশকে ভালোবাসার গান ‘বন্দে মাতরম’
বিশেষ লেখা—সার্ধশতবর্ষে বন্দে মাতরম্‌/২ *অধ্যাপক ডঃ পবিত্র সরকার* (শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, প্রাক্তন উপাচার্য) কলকাতা, ৮ নভেম্বর (হি.স.) : উনবিংশ শতকে দেশপ্রেমের মূলত দুটো ধারা দেখা দিয়েছিল। ১) তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রতি ভালোবাসা, ২) সার্বিকভা
ডঃ পবিত্র সরকার


বিশেষ লেখা—সার্ধশতবর্ষে বন্দে মাতরম্‌/২

*অধ্যাপক ডঃ পবিত্র সরকার*

(শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, প্রাক্তন উপাচার্য)

কলকাতা, ৮ নভেম্বর (হি.স.) : উনবিংশ শতকে দেশপ্রেমের মূলত দুটো ধারা দেখা দিয়েছিল। ১) তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রতি ভালোবাসা, ২) সার্বিকভাবে দেশের প্রতি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথমটির কথা অর্থাৎ বাংলার স্বাধীনতার কথা ভেবে ‘বন্দে মাতরম’ রচনা করেছিলেন।

১৭ জন ঘোড়সওয়ার নিয়ে বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ জয়ে সাহিত্য সম্রাটের প্রতিক্রিয়া ‘মৃণালিনী’ উপন্যাসেও রয়েছে। ১৮৬৯-এ বিকল্প ইতিহাস উপন্যাসে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাঁর মনে দেশপ্রেম তীব্র হয়ে ওঠে সে সময়। ১৮৭৫-এ

‘বন্দে মাতরম’ রচনা, ১৮৮৪ নাগাদ ‘আনন্দমঠ’-এ তার ব্যবহার— বাংলাই ছিল তাঁর মনযোগের মূল বিষয়।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বন্দে মাতরম’-এ সুর দিয়েছিলেন। সেই গান প্রচলিত হয় কংগ্রেস অধিবেশনের আগে উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসাবে। গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গগনেন্দ্রনাথ সেই ছবি এঁকেছিলেন। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের আদি পর্বেও উদ্দীপনা যুগিয়েছিল এই গান। সংগ্রামের মূল মন্ত্র হয়ে উঠেছিল মা’কে পুজো করি— এই ভাবনা।

১৯৩৭ নাগাদ ভারতের ভবিষ্যৎ জাতীয় সঙ্গীত কী হবে তা নিয়ে ধন্দ দেখা দেয়। জওহরলাল নেহরু এবং সমমনস্করা বলেন, ভারত হিন্দু-মুসলমানের দেশ। ‘বন্দে মাতরম’-এ দেবী দূর্গাকে বরণ করা হয়েছে, এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত না করাই ভালো। তাঁরা ‘জনগনমন অধিনায়ক’ গানটিকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীদের একাংশ দাবি করেন, গানটির মূল লক্ষ্য ছিল রাজা পঞ্চম জর্জের বন্দনা।

সমবেতসংগীত হিসাবে জনগনমন তুলনাহীন। আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষা-র বিভাগীয় প্রধান রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তরা

‘জনগনমন অধিনায়ক’-র প্রতি ওই গানের প্রতি অপবাদের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেন। কিছুটা উগ্র জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বড় ভূমিকা হিসাবে ‘বন্দে মাতরম’ গৃহিত হয় জাতীয় স্তোত্র হিসাবে।

বিতর্ক যাই থাকুক, ‘বন্দে মাতরম’-এর মতো জনপ্রিয় গান ক’টি আছে সন্দেহ। শিল্পী-গবেষক দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই গানে ১০৫বার সুরারোপ হয়েছে। রবীশঙ্করও সুর দিয়েছেন আকাশবানীর জন্য। দেশপ্রেমের চেতনায় অনস্বীকার্য অবদান ‘বন্দে মাতরম’-এর। অদূর ভবিষ্যতে তা ম্লান হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।

দেশকে ভালোবাসার গান ‘বন্দে মাতরম’। ‘বন্দে মাতরম’-এর দেড়শ বছর হল ভেবে ভালো লাগছে।

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande