‘বন্দে মাতরম্‌’- আধুনিক ভারতে এর প্রাসঙ্গিকতা
বিশেষ লেখা—সার্ধশতবর্ষে বন্দে মাতরম/৩ *ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়* (উপাচার্য, ভাষাবিদ, পরামর্শদাতা-সাহিত্য আকাদেমী) কলকাতা, ৮ নভেম্বর (হি.স.): একটি গান কখনো কখনো ইতিহাসকে শুধু স্মরণ করায় না, ইতিহাসকে *ঘটিয়ে* তোলে। “বন্দে মাতরম্‌” সেইরকম এক অমর উচ্
ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়


বিশেষ লেখা—সার্ধশতবর্ষে বন্দে মাতরম/৩

*ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়* (উপাচার্য, ভাষাবিদ, পরামর্শদাতা-সাহিত্য আকাদেমী)

কলকাতা, ৮ নভেম্বর (হি.স.): একটি গান কখনো কখনো ইতিহাসকে শুধু স্মরণ করায় না, ইতিহাসকে *ঘটিয়ে* তোলে। “বন্দে মাতরম্‌” সেইরকম এক অমর উচ্চারণ, যেখানে সুরের চেয়ে শক্তি, ভাষার চেয়ে দর্শন, আর শব্দের চেয়ে জাতির চেতনাই অধিক উচ্চারিত। মহর্ষি বঙ্কিমচন্দ্র শুধু একটি গান রচনা করেননি- তিনি *একটি জাতির আত্মাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন*। “বন্দে মাতরম্‌” ভারতের স্বাধীনতা-সাধনাকে ভাষা, সুর ও সাহসে একত্র করেছিল; আর এজন্যই তা আজও প্রাসঙ্গিক, শাশ্বত।

এই গানটি মাতৃভূমিকে দেবী-রূপে উপলব্ধি করেছে- *মাটি নয়, মা; ভূমি নয়, ভক্তির প্রতিমা।* বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ”-এর সন্ন্যাসীসমাজ যখন ‘বন্দে মাতরম্‌’ উচ্চারণ করে উঠে দাঁড়ায়, পাঠকের মনে এক অদৃশ্য শক্তি প্রবাহিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- *“বন্দে মাতরম্‌ আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য।”* কারণ এখানে দেশপ্রেম কেবল রাজনীতি নয়- একটি *আধ্যাত্মিক অনুশাসন*।

আজকের প্রজন্মকে প্রশ্ন করতে দেখি- এই শতাব্দীতে ‘বন্দে মাতরম্‌’ কি শুধু ইতিহাসের প্রতীক? উত্তর- না। আজও এ উচ্চারণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দেশপ্রেম শুধু পতাকা উত্তোলন নয়, *রাষ্ট্রকে মর্যাদা দেওয়া, সমাজকে মানবিক করা, এবং সংস্কৃতিকে আত্মপরিচয়ে স্থাপন করা*। ‘বন্দে মাতরম্‌’ তাই একটি আবেগ নয়, *একটি দায়িত্ব*।

বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় স্মৃতি ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসে। বিদেশি ভাষা, বাজার ও সংস্কৃতির ভিড়ে নিজের মাটির গন্ধে অনেকে আর মন ভেজাতে ভুলে যায়। সেখানে “বন্দে মাতরম্‌”- একটি অন্তর-শক্তির আহ্বান- আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: *“তুমি শুধু নাগরিক নও, তুমি সন্তানের মতো এই ভূমির ঋণগ্রস্ত।”*

এই গান কোনো ধর্ম, ভাষা বা সম্প্রদায়ের জন্য নয়- *সমস্ত ভারতবাসীর আত্মগান।* মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা যতদিন থাকবে, “বন্দে মাতরম্‌” ততদিন *নিত্যনতুন অর্থে জীবন্ত থাকবে*। রাজনীতি বদলায়, সরকার বদলায়- কিন্তু *মা’র প্রতি শ্রদ্ধা বদলায় না।* তাই আজও, যখন শিশু প্রথমবার এই সুরে কণ্ঠ মেলায়, মনে হয়- একটি জাতি আবার নবজন্ম নিচ্ছে।

‘বন্দে মাতরম্‌’- দেহের নয়, *আত্মার স্বাধীনতার গান।*

কারণ স্বাধীনতা যদি সংগ্রাম হয়, তবে তার *প্রথম শব্দ- বন্দে মাতরম্‌*।

আমি গর্বিত যে এই অমর গীত একজন বাঙালির কলম থেকেই জন্ম নিয়েছে।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande