
কলকাতা, ১৪ ডিসেম্বর (হি.স.): লিওনেল মেসিকে দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপে শনিবার রণক্ষেত্র হয়েছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন| হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটেও ফুটবলের ভগবানকে একঝলক দেখতে না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন একাংশ। কারণ এদিন মাঠে মেসি এলেও তাঁকে ঘিরে থাকেন বিভিন্ন মহলের বিশিষ্টজনেরা। আর তার ফলেই একঝলকও মেসিকে চাক্ষুষ করার সুযোগ হয়নি আমজনতার। এসব কিছুর মধ্যেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল টলিউডের অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলির পোস্ট করা ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা শুভশ্রীর সেই ছবিতে দেখা গিয়েছিল মেসির সঙ্গে পোজ দিতে। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে উঠেছিল নিন্দার ঝড়। এই আবহে স্ত্রী তথা অভিনেত্রী শুভশ্রীর পাশে দাঁড়ালেন তাঁর স্বামী তথা তারকা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।
রবিবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, প্রথমেই বলি, গতকাল যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের অরাজকতা অনভিপ্রেত। এটা ফুটবল এবং ফুটবলপ্রেমী বাঙালির অসম্মান। এই অরাজগতার সম্মুখীন আমরা আগেও হয়েছি ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান ম্যাচে। তারপরেও কেন এত বড় ইভেন্টের কাঠামোগত সচেতনতায় ফাঁক থেকে গেল? আয়োজকেরা কী মেসি-র জনিপ্রিয়তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না? আমি অবশ্যই চাইবো দোষীরা শাস্তি পাক। বাঙালির আবেগ আহত হয়েছে গতকাল।
গতকালের অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তরফে শুভশ্রী গাঙ্গুলী। এবং এই অরাজকতা মাঝে নিজের উপস্থিতির খেসারত দিতে হচ্ছে ওকে। ওর অপরাধ সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসি-র সঙ্গে ছবি পোস্ট করা। যেখানে হাজার হাজার মানুষ দাম দিয়ে টিকিট কিনে নিজের স্বপ্নের নায়ক-কে একবারের জন্য দেখতে পেলেন না, প্রতারিত হলেন, বঞ্চিত হলেন, তাদের এই ক্ষোভ আসবেই৷ কিন্তু কিছু রাজনৈতিক নেতা যারা গোটা ঘটনার আগে পরে না থেকেও মন্তব্য ছুড়ছেন - ' একজন সিনেমার নায়িকার ওখানে থাকার কী দরকার? ', তাদের উদ্দেশ্যে বলি, শুভশ্রী গাঙ্গুলীকে কতটুকু চেনেন আপনারা? অভিনেত্রী বলে তিনি মেসির ভক্ত হতে পারেন না? একজন মানুষের লিঙ্গ, পেশা, সম্পর্কের নিরিখে একাধিক সামাজিক পরিচয় থাকে। ঠিক তেমনই শুভশ্রী মা, কখনও বোন, কখনও স্ত্রী, কখনও অভিনেত্রী, কখনও বন্ধু, কখনও আবার কারো ফ্যান। সব কিছুর উপর তিনি একজন মানুষ। কিন্তু এক্ষেত্রে মানবিকতার সমস্ত পরিসীমা পেরিয়ে অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙুলী-কে টার্গেট করে মিম তৈরি করছেন, ট্রোল করছন, একটা অল্টারনেট ন্যারাটিভ তৈরি করছেন রাজনৈতিক নেতারা এবং কিছু সংখ্যক মিডিয়া। গতকাল কিন্তু মিডিয়ার অনেক মানুষ উপস্থিত ছিল মাঠে। তারা কী করছিলেন? তারাই বা আড়ালে থেকে যাচ্ছেন কেন? এদিকে পরিচিত মুখ বলে একজন অভিনেত্রীর শারিরীক গঠন থেকে, তিনি বিধায়কের স্ত্রী, তাঁর সন্তান - পরিবার সব কিছুই সমালোচনায় বিষয় হয়ে উঠছে। কেন? তিনি একজন নারী বলে? বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অভিনেত্রী বলে? যদি কোনো বলিউডের পরিচিত মুখ থাকতেন, আপনাদের ন্যারেটিভ এমনই হত?
যারা ট্রোল করছেন তারা ভুলে যাচ্ছেন একজন মানুষের প্রতি, একজন নারীর প্রতি তাদের এই ব্যবহার থেকে যাবে আগামীর জন্যে। তাদের এই ব্যবহার থেকেই শিক্ষা নেবে আগামী প্রজন্ম। প্রতিবাদ আর অপমান দু'টো বিষয়ে বিস্তর ফারাক সেটা বোঝা এবং বোঝানো বিশেষ প্রয়োজন। গতকালের অরাজকতা, মাঠের মধ্যে যা কিছু হয়ে গেছে তার সঙ্গে শুভশ্রীর কোনো যোগাযোগ নেই। তিনিও আপনাদের মতই ফুটবলের মহাতারকাকে দেখতে গেছিলেন! শুভশ্রীও নিজেও গতকালের গোটা ঘটনাটি ভীষণভাবে আহত।
কালকরে অরাজকতা বাংলার অপমান। বাঙালির অপমান। আমাদের উচিত কালকের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। আগামীকে শুধরাতে গেলে আমাদের সকলের একসাথে শেখা প্রয়োজন। আলোচনা সমালোচনায় সমাধান উঠে আসুক। ট্রোল কালচারে নয়।
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ