
হাফলং (অসম), ২০ ডিসেম্বর (হি.স.) : এআইইউডিএফ বিজেপির বিটিম বলে অভিযোগ করে এই দলের সঙ্গে ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় বিধানসভা নির্বাচনে মিত্রতা করবে না কংগ্রেস, বলেছেন দলের প্রদেশ নেতা রিপুণ বরা।
আজ শনিবার হাফলঙে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে অসম প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্ৰী মীরা বড়ঠাকুর, বিধায়ক নরুল হুদা, এপিসিসি-র সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ পাল, দলীয় নেতা বিদ্যাসিং রংপিকে সঙ্গে নিয়ে বক্তব্য পেশ করছিলেন রিপুণ বরা। রিপুণ বলেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে কোনও ভাবেই কংগ্রেসের মিত্রতা হচ্ছে না। বলেন, তিনি যখন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ছিলেন তখন এআইইউডিএফ বিজেপি-বিরোধী ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে এআইইউডিএফ বিজেপির বিটিমে পরিণত হয়েছে। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এআইইউডিএফ-র সঙ্গে মিত্রতায় যাবে না বলে স্পষ্ট করেছেন রিপুণ বরা।
গৌরব গগৈ পাকিস্তানি এজেন্ট বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে একহাত নিয়ে বলেন, গৌরব গগৈ যে পাকিস্তানি এজেন্ট, এনিয়ে ভারতের এজেন্সি আজ পর্যন্ত কিছু বলেনি। ভারতের র-এর মতো এজেন্সিও এ সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কিছু বলেনি। কেবল অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা গৌরব গগৈকে পাকিস্তানি এজেন্ট বলে আসছেন। এটা কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাজ নয়, এই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।
তিনি বলেন, গৌরব গগৈ যদি পাকিস্তানি এজেন্ট হতেন, তা-হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় গৌরব গগৈকে কীভাবে বিরোধী উপ-দলনেতার আসনে বসার অনুমতি দেন? এই প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে রিপুণ বলেন, যদি সত্যি সত্যি গৌরব গগৈ পাকিস্তানি এজেন্ট হয়ে থাকেন, তা-হলে কেন্দ্রীয় সরকার কেন দেশের আইন অনুসারে গৌরব গগৈয়ের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি?
রিপুণ বরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পকেটে কাগজ আছে, গৌরব গগৈ পাকিস্তানি এজেন্ট, এ সব কথা বলে থাকেন। এভাবে প্ৰদেশ কংগ্ৰেস সভাপতি গৌরব গগৈ এবং কংগ্রেসকে ব্ল্যাকমেইলিং করা যাবে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, গৌরব গগৈ ও কংগ্রেসের কথা চিন্তা করে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর পরামর্শ, তিনি কংগ্রেস ও গৌরব গগৈয়ের চিন্তা ছেড়ে বিজেপিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চিন্তা করুন।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বরাবর বলেন, কংগ্রেসে তাঁর এজেন্ট রয়েছে এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সব খবর তিনি পেয়ে থাকেন, এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে রিপুণ বলেন, বিজেপির অন্দরেও কংগ্রেসের এজেন্ট রয়েছে এবং বিজেপির অভ্যন্তরীণ সব খবর আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু এ সব তথ্য আমরা প্রকাশ্যে আনি না।
এদিন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা বলেন, ডিমা হাসাও জেলা সহ রাজ্যের ৩৫টি জেলায় অসম প্রদেশ কংগ্রেস ‘রাইজর পদুলি রাইজর কংগ্রেস’ কর্মসূচি নিয়ে এসেছে।
অসম প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্ৰী মীরা বড়ঠাকুর, বিধায়ক নরুল হুদা, অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ পাল, কংগ্রেস নেতা বিদ্যাসিং রংপিকে নিয়ে শুক্রবার তিনি হাফলং এসে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে মত বিনিময় করে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান রিপুণ বরা। তিনি বলেন, মোট ১৭টি সংগঠন এবং ৩১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বরা বলেন, ডিমা হাসাও জেলার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমস্যার বিষয়টি ২০২৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে সন্নিবিষ্ট করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, এখানকার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করার পর যে সব সমস্যা জানা গেছে তা হচ্ছে, এখানকার জনগোষ্ঠীয় মানুষের রাজনৈতিক সুরক্ষার জন্য সংবিধানের (২৪৪) ক অনুচ্ছেদ অনুসারে পৃথক স্বশাসিত রাজ্যের দাবি সহ ডিমা হাসাও জেলায় দুটি বিধানসভা আসন ও একটি লোকসভা আসনের দাবি। তাছাড়া পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সব জাতি-জনগোষ্ঠীর সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব প্রদান। তাছাড়া জুম ক্ষেতের আধুনিকরণের মতো বিষয় সহ জলের সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জলের সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে রিপুন বরা বলেন, জলজীবন মিশন প্রকল্প ডিমা হাসাও জেলায় চূড়ান্ত ফ্লপ হয়েছে। এই প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ডিমা হাসাও জেলায় বেশিরভাগ মানুষ জুম ক্ষেত করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কমলা, আদা, বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদন করেন। তার জন্য ভালো বাজার নেই। নেই যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থা। তাছাড়া ডিমা হাসাও জেলায় মহিলারা সুরক্ষিত নন। রাতে নিরাপদে মহিলারা চলাচল করতে পারেন না। মহিলাদের ওপর অপরাধ ডিমা হাসাও জেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সব বিষয়ও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে সন্নিবিষ্ট করা হবে।
হিন্দুস্থান সমাচার / বিশাখা দেব