
বড়দোয়া (নগাঁও, অসম), ২৯ ডিসেম্বর (হি.স.) : জাতির পরিচয় যদি না থাকে, তা-হলে উন্নয়নের কোনও মূল্য নেই, বটদ্রবায় বিশাল সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
নগাঁও জেলার অন্তর্গত বড়দোয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতে বটদ্ৰবা প্ৰকল্প 'শ্ৰীমন্ত শংকরদেব আবিৰ্ভাব ক্ষেত্ৰ'-এর উদ্বোধনের পর আয়োজিত প্রায় ৬৫ লক্ষ ভক্ত-জনতার সমাবেশে উদাত্ত ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি অসমিয়া জাতির জন্য একটি পবিত্র দিন। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-জি।’
‘ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতা’-র তীব্র সমালোচনা করে আক্রমণাত্মক সুরে ড. শর্মা বলেন, ‘আমি অসমের ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষ জনগণকে বলতে চাই, অসম মহান সাধক শ্রীমন্ত শংকরদেব এবং শ্রীমন্ত মাধবদেবের দেশ। তাঁদের নামের সাথে অন্য কারো নাম যুক্ত করা যাবে না। আমাদের গুরু শংকরদেব ও মাধবদেব। আমাদের গুরু শংকরদেব-আজান ফকির হতে পারেন না। শংকর-মাধবের সঙ্গে আর কারও নাম সংযুক্ত করা হবে না। সূর্য-চন্দ্র যতদিন থাকবে, ততদিন আমাদের দুই গুরুদেব জীবিত থাকবেন। কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রীমন্ত শংকরদেব এবং আজান ফকিরকে তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রমাণ করতে এক নিঃশ্বাসে শংকর-আজানের নাম একসঙ্গে জুড়ে প্রচার করেন। এ ধরনের প্রচারের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমাদের গুরুদেব হলেন মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব এবং শ্রীমন্ত মাধবদেব। আমরা তাঁদের মতো একই নিঃশ্বাসে অন্য কারও নাম নিতে দেব না। শংকর এবং মাধব অসমিয়া সমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁদের আদর্শ অনন্তকাল ধরে অনুসরণ করা হবে।’
ড. শর্মা বলেন, ‘অসমিয়া জাতি আজ সংকটে। আমাদের জাতিকে বাঁচিয়ে রাখার সংকল্প এই ক্ষেত্র থেকে আমাদের নিতে হবে। শংকর-মাধবের জীবনদর্শন যারা বুঝে না, সেই সব মানুষ আমাদের পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের এই জন্মভূমি আগে অপরিচিত (বাংলাদেশি) মানুষজন দখল করে রেখেছিল।’
জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বড়দোয়া থান থেকে ওই সব মানুষকে উচ্ছেদের দাবি আপনারাই তুলেছিলেন। আমার সরকার তাদের উচ্ছেদ করে এই ভূমিকে বেদখলকারীদের কবজা থেকে মুক্ত করেছে। আজ দেশের মধ্যে অন্যতম একটি আধ্যাত্মিক ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত বড়দোয়া থান-এ আগত ভক্ত-মানুষজনের কোনও মাশুল দিতে হয় না। আবির্ভাব (জন্মভূমি) ক্ষেত্রে শংকরদেবের দর্শন নিয়ে আলোচনা করব। দুই গুরুজনার সৃষ্টিরাজি আবির্ভাব ক্ষেত্রে আলোচনা হবে।’
বলেন, ‘উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের জাতির পরিচয় ও অস্তিত্বও টিকে থাকতে হবে। জাতির পরিচয় না থাকলে উন্নয়নের কোনও মূল্য নেই। উন্নয়ন ও জাতি এক সঙ্গে থাকলে অসমিয়া জাতি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হবে। ১.৪৫ লক্ষ বিঘা ভূমি আমরা জাতির জন্য মুক্ত করেছি। অপরিচিত মানুষদের আমরা শান্তিতে থাকতে দেব না...’ বরদোয়া থেকে এই সংকল্প নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অসমে কোনও অপরিচিত মানুষের কাছে জমি বিক্রি না করতে, চাকরি (বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) না দিতে, এমন-কি জাতির বড় প্ৰতিষ্ঠানে অপরিচিত লোকদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সত্র (আধ্যাত্মিকস্থল) ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে অপরিচিত লোকদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যথায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস