
দুর্গাপুর, ২৯ ডিসেম্বর (হি.স.) : বছরের পর বছর ভোট দেওয়ার পরও রহস্যজনকভাবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে ডাকা হয়েছে দুর্গাপুরের ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে। শারীরিকভাবে অক্ষম এই বৃদ্ধাকে শুনানি কেন্দ্রে হাজির হতে বাধ্য করায় শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর জয়দেব রোডের বাসিন্দা নমিতা ঘোষাল (৭৫)। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর চলাফেরা অত্যন্ত কষ্টকর। চোখের দৃষ্টি কম, পিঠ কুঁজো, হাঁটার জন্য অন্যের সহায়তা প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও কনকনে শীতের সকালে জামাইয়ের কাঁধে ভর করেই তাঁকে পৌঁছতে হয় দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুনানিতে।
নমিতা ঘোষালের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ১১৯ নম্বর বুথে নিয়মিত ভোট দিয়ে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁকে জানানো হয়, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। সেই কারণ দেখিয়েই ভোটার তালিকায় নিজের পরিচয় প্রমাণের জন্য শুনানিতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিবারের অভিযোগ, এটি নির্বাচন কমিশনের চরম গাফিলতি এবং মানবিকতার অভাবের পরিচয়। পরিবারের সদস্য অরুণ চট্টরাজ বলেন, “আমার শাশুড়ি হাঁটতেই পারেন না। অথচ বাড়িতে যাচাই না করে তাঁকে শুনানি কেন্দ্রে ডাকা হয়েছে। এই ভোগান্তির সম্পূর্ণ দায় নির্বাচন কমিশনের।”
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার অভিযোগ করেন, “নির্বাচন কমিশন বিজেপির মনোনীত হওয়ায় সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার চক্রান্ত চলছে। শারীরিকভাবে অক্ষম প্রবীণদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে বিজেপি নেতা বুদ্ধদেব মণ্ডল বলেন, “৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের ক্ষেত্রে বাড়িতে গিয়ে শুনানি করার নির্দেশিকা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এভাবে শুনানি কেন্দ্রে ডাকা ঠিক হয়নি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের তদন্ত করা উচিত।”
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রবীণ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে শুনানি করার বিধান থাকলেও, সেই নিয়ম কেন প্রয়োগ করা হল না—তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা