
কলকাতা, ২৯ ডিসেম্বর(হি.স.): ২০২৫ সাল বিশ্বজুড়ে মহিলা ক্রীড়াবিদদের জন্য স্মরণীয় বছর। এবছর মহিলাদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা, দর্শক সংখ্যায় হয়েছে রেকর্ড। ভারতের মেয়েরা প্রথমবার জেতে বিশ্বকাপ। ইউরোপিয়ান ফুটবলে মহিলাদের খেলায় বেড়েছে রেকর্ড দর্শক। যুক্তরাষ্ট্রে মহিলাদের বাস্কেটবল লিগ ডব্লিউএনবিএ হয়েছে সম্প্রসারিত।
ভারতের মহিলাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মুহূর্ত:
বৈশ্বিক পর্যায়ে ক্রিকেট বছরের অন্যতম সেরা মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। কারণ, ভারতের মেয়েরা প্রথম মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছে। এই বিজয় ভারতজুড়ে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে। সেদিন মুম্বইয়ের রাস্তাগুলোতো বটেই, সারা দেশ জুড়ে উৎসবে রূপ নিয়েছিল ভারত। আতশবাজিতে আকাশ আলোকিত হয়েছিল। সেদিন ভারতের জনতা গভীর রাত পর্যন্ত নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন।
এদিকে সেদিন দেশজুড়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ড্রয়িং রুম পর্যন্ত ক্রিকেট প্রেমিরা টেলিভিশনের পর্দার সামনে ভিড় করেছিলেন, যা একটি সাংস্কৃতিক মাইলফলক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এই জয় ভারতের শীর্ষ মহিলা ক্রিকেটারদের ব্র্যান্ড ভ্যালুকে আকাশচুম্বী করে তুলেছে।
ইউরোপজুড়ে ফুটবল ভাঙছে বাধা:
২০২৫ সালে মহিলা ফুটবলের ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা অব্যাহত ছিল, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সুইজারল্যান্ডে আয়োজিত ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। ফাইনাল ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই টুর্নামেন্টের টিকিট বিক্রির পরিমাণ ২০২২ সালের আসরকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আর এটা প্রমাণ করে বিশ্ব ফুটবলে মহিলা ফুটবলের অগ্রগতি ঘটছে।
তাছাড়া আয়োজক সুইজারল্যান্ড প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে সবার নজর কেড়েছে। মূলত স্কিইং এবং টেনিস খেলোয়াড় তৈরির জন্য পরিচিত দেশটি। কিন্তু তাদের এই সাফল্য বিশ্ব মহিলা ফুটবলে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
শুধু মাঠের ভেতর নয়, মাঠের বাইরেও মহিলাদের রেকর্ড:
বিশ্ব ফুটবলে মহিলাদের দল বদলে আর্সেনাল লিভারপুল থেকে কানাডিয়ান ফরোয়ার্ড অলিভিয়া স্মিথকে ১০ লক্ষ পাউন্ডে নিয়ে মহিলা ফুটবলের দলবদলের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর এর ফলে তিনি হলেন সাত অঙ্কের (মিলিয়ন পাউন্ড) ঘরোয়ানা স্পর্শ করা প্রথম মহিলা ফুটবলার।
নতুন উচ্চতায় পৌছে গেছে মহিলাদের দর্শক সংখ্যা:
২০২৫ সালে দর্শকদের উপস্থিতির রেকর্ড নাটকীয়ভাবে ভেঙে গেছে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে আয়োজিত মহিলা রাগবি বিশ্বকাপে। ৪ লক্ষ ৪০ হাজারেরও বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছিল—যা ২০২১ আসরের তুলনায় তিন গুণ। টুইকেনহ্যামে অনুষ্ঠিত ফাইনালটি ৮১,৮৮৫ জন দর্শক মাঠে বসে দেখেছিলেন, যা মহিলা রাগবি ম্যাচের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
দেখা যাচ্ছে , মোট দর্শকদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন মহিলা, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রথমবারের মতো মহিলা রাগবি ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে এই টুর্নামেন্টের টেলিভিশন দর্শক সংখ্যা ৫.৮ মিলিয়নে পৌঁছেছিল।
ডব্লিউএনবিএ এবং নতুন লিগগুলোর অগ্রযাত্রা:
ডব্লিউএনবিএ আরও সম্প্রসারণ এবং প্রভাবের ইঙ্গিত দিয়ে বছর শেষ করেছে। লিগটি ১৩টি দলে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ১৫টি ও ২০৩০ সালের মধ্যে ১৮টি দলে পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ডাব্লুএনবিএর আ'জা উইলসন। তিনিই একটি দাপুটে মরসুম পার করেছেন। তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারবার ডব্লিউএনবিএ এমভিপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এবং তৃতীয়বার বছরের সেরা রক্ষণাত্মক খেলোয়াড় ও ফাইনাল এমভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে লাস ভেগাস গত চার মরসুমের মধ্যে তাদের তৃতীয় শিরোপা জিতেছে। টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাঁর উপস্থিতি এবং নাইকির প্রচার তাঁর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তাছাড়া ২০২৫ সালে বেশ কিছু নতুন লিগ যাত্রা শুরু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আনরাইভালড থ্রি-অন-থ্রি মহিলা বাস্কেটবল লিগ, মহিলা পেশাদার বেসবল লিগ, মহিলা লিগ ওয়ান ভলিবল এবং কানাডার নর্দার্ন সুপার লিগ। এতে ২০২৫ সাল প্রমাণ করে গেল মহিলা ক্রীড়াঙ্গন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / শান্তি রায়চৌধুরি