।। রাজীব দে ।।
‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সর্বজনীন মূল্যবোধে বিশ্বাসী’
ঢাকা, ২ নভেম্বর (হি.স.) : আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ আমাদের দেশের (বাংলাদেশ) জনসাধারণের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার বার্তা প্রচার করে আসছে। আমরা সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সর্বজনীন মূল্যবোধে বিশ্বাসী। বলেছেন ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ কয়েকজন শীর্ষ পদাধিকারী।
আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-র সভাকক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বক্তব্য পেশ করে বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আমাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অসত্য হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি আমরা। তাঁর বক্তব্য শুধু আমাদের সংগঠনকেই আঘাত করেনি, বরং এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহনশীলতা এবং সামাজিক ঐক্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের অযাচিত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দেশের শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর।’’
তাঁরা বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে (সাংবাদিককুল) জনাব মাহমুদুর রহমানকে অবহিত করতে চাই, তিনি যদি তাঁর বক্তব্য পরিহার করে দুঃখ প্রকাশ করে জাতির কাছে ক্ষমা চান, তা-হলে আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাব, অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়াচ্ছে। যেমন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে যে ছবি বা পতাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন।
প্রকৃতপক্ষে ইসকন-এর কোনও নিজস্ব পতাকা নেই। যে পতাকাটি দেখানো হয়েছে তার সাথে ইসকন-এর কোন সম্পর্ক নেই। ইসকন বাংলাদেশ তার সকল কর্মকাণ্ডে আইন ও শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং বাংলাদেশে শান্তি, সহনশীলতা ও ধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য দৃঢ়নিষ্ঠ। তাই এ-ধরনের মিথ্যা গুজবের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক সংগঠনের বিরুদ্ধে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
‘ইসকন একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন। ইসকন বাংলাদেশ বরাবরই সকলের প্রতি মানবিক সহমর্মিতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা প্রচার করেছে এবং জাতীয় সম্প্রীতি ও ঐক্যের পক্ষে কাজ করছে। সুতরাং, এ সব মিথ্যা প্রচারণা শুধু বাংলাদেশ ইসকন-এর ভাবমূর্তিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করেনি বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ইসকন-এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে। তাই আমরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
‘সেই সাথে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তাঁরা যেন এ ধরনের ভিত্তিহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সহায়তা করে।
সভাপতি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ন্যায্য আট দফা দাবির প্রতি আমরা সংহতি প্রকাশ করি। পাশাপাশি, আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং সনাতনীদের প্রতিমা, বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনা করে অব্যাহতি দেওয়া এবং ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অনতিবিলম্বে সনাতন ধর্মাবলম্বী সহ দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, হামলা বন্ধ করার জন্য বর্তমান প্রশাসনের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ করছি।’
‘পাশাপাশি যারা গুজব ছড়িয়ে অথবা ইসকনকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’ বলেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাগত সম্ভাষণ ও মুখবন্ধমূলক বক্তব্য পেশ করেছেন ইসকন বাংলাদেশ-এর সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছে সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কোষাধ্যক্ষ, ইসকন বাংলাদেশ; বিমলাপ্রসাদ দাস, সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি, ইসকন বাংলাদেশ; পার্থসারথী কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি, ইসকন বাংলাদেশ এবং চিন্ময় গদাধর দাস ব্রহ্মচারী, সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি, ইসকন বাংলাদেশ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস, সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি, ইসকন বাংলাদেশ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস