গুয়াহাটি, ২৩ নভেম্বর (হি.স.) : অসম বিধানসভার পাঁচ আসনে উপনির্বাচনের ভোটগণনা শেষে পাঁচ আসনেই ক্ষমতাসীন বিজেপি মিত্রজোট সরকারের শরিক দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। উপনিৰ্বাচনে দুরমুশ রকিবুল হুসেইনের দুর্গ কংগ্রেসের সামাগুড়িতে। সামাগুড়িতে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বিজেপির কাছে ছিল এক চ্যালেঞ্জিং ফ্যাক্টর।
কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে পাঁচ আসনের ভোটগণনা শুরু হয়েছিল। নিৰ্বাচন কমিশন সূত্রে প্ৰাপ্ত সৰ্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গণনা শেষে ১১ নম্বর তফশিলি জাতি সংরক্ষিত ধলাইয়ে কংগ্রেস প্রার্থী ধ্ৰুবজ্যোতি পুরকায়স্থকে ৯,০৯৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিজেপির নীহাররঞ্জন দাস। নীহাররঞ্জন দাস পেয়েছেন ৬৯,৯৪৫ এবং ধ্ৰুবজ্যোতি পুরকায়স্থ পেয়েছেন ৬০,৮৪৭টি ভোট। ধলাইয়ে মোট ভোটার ১,৯৭,৬৪২ জন।
এদিকে ব্যাপক নির্বাচনী হিংসা-জর্জরিত ৮৮ নম্বর সামাগুড়িতে কংগ্রেস প্রার্থী তথা সাংসদ রাকিবুল হুসেইনের ছেলে তানজিল হুসেন বিজেপি-প্রার্থী দিপলুরঞ্জন শর্মার কাছে ২৪,৮২০ ভোটের ব্যবধানে পরাস্ত হয়েছেন। দিপলুরঞ্জন শর্মা পেয়েছেন ৮১,৩২১টি ভোট, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তানজিল হুসেন পেয়েছেন ৫৬,৮২০টি ভোট। আজ সকালে ভোটগণনা শুরুর পর থেকে দিপলুরঞ্জন এগিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ রাউন্ড গণনার পর থেকে তানজিল হুসেন প্রায় চার হাজারের বেশি ভোটে লিড নিতে থাকেন। তবে শেষ দুই রাউন্ডের গণনায় ঘুরে যায় সব হিসাব। দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন বিজেপি-প্রার্থী দিপলুরঞ্জন শর্মা। সামাগুড়িতে মোট ভোটার ১,৮০,৮৫৪ জন।
প্রসঙ্গত, সামাগুড়ি আসনে ৬৫ শতাংশের বেশি মুসলমান ভোট। ওই আসনে ২০২১ সাল থেকে লাগাতার বিজয়ী হচ্ছিলেন কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা রকিবুল হুসেন। এবার লোকসভা নির্বাচনে ধুবড়ি আসনে সাংসদ (পরাজিত) এআইইউডিএফ-সুপ্রিমো বদরউদ্দিন আজমলকে ১০,১২,৪৭৬ ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে জয়লাভ করেন কংগ্রেস প্রার্থী রকিবুল হুসেন। রকিবুল সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর দুর্গ সামাগুড়ি শূন্য হয়ে পড়েছিল। তিনি তাঁর দুর্গ ধরে রাখতে সক্ষম হবেন দাবি করে ছেলে তানজিল হুসেনকে কংগ্ৰেসের টিকিট দিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়েছিলেন। মুসলমান অধ্যুষিত সামাগুড়িতে হিন্দু প্ৰাৰ্থী দিপলুরঞ্জন শর্মাকে টিকিট দিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল বিজেপি।
অন্যদিক ৭৭ নম্বর বিহালিও ছিল বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জিং। ১,৩২,৫৭৯ ভোটারের বিহালিতে ৯,০৫১ ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ন্ত বরাকে পরাজিত করেছেন বিজেপির দীগন্ত ঘাটোয়াল। দিগন্ত ঘাটোয়াল পেয়েছেন ৫০,৯৪৭টি ভোট এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জয়ন্তের ঝুলিতে পড়েছে ৪১,৮৯৬টি ভোট।
প্রসঙ্গত, বিহালিতে বিজেপি-ছুট জয়ন্ত বরাকে টিকিট দিয়েছিল কংগ্রেস। ওই আসনে দলীয় প্রার্থীকে বিধানসভায় পাঠাতে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছিলেন সাংসদ গৌরব গগৈ, সাংসদ প্রদ্যুত বরদলৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা সহ দিগগজ নেতারা। বিহালি আসনে বিরোধী ‘অসম সম্মিলিত মঞ্চ’-এর অন্যতম শরিক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী, সংক্ষেপে সিপিআই-এমএল) তাদের মনোনীত প্রার্থী দেওয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তাদের জোট প্রার্থীর জন্য বিহালি না ছেড়ে আটমকা অসমে বিরোধী জোট ‘অসম সম্মিলিত মঞ্চ’-এর সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়ে দেন। ফলে বিহালিতে একক শক্তিতে ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয় কংগ্রেস। বিজেপি প্ৰাৰ্থী দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যান।
৩২ নম্বর বঙাইগাঁওয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিজেপির জোটশরিক অসম গণ পরিষদ (অগপ)-এর দীপ্তিময়ী চৌধুরী। দীপ্তিময়ী পেয়েছেন ৭৪,৭৩৪টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের ব্রজেনজিত সিংহের ঝুলিতে পড়েছে ৩৯,৫৭০টি ভোট। ব্যবধান ৩৫,১৬৪। মোট ভোটার ১,৮২,৩৫৪ জন।
উল্লেখ্য, দীপ্তিময়ী চৌধুরী অসম গণ পরিষদ-এর প্রবীণ অপ্রতিরোধ্য নেতা, ১৯৮৫ সাল থেকে বঙাইগাঁও আসনে লাগাতার আটবারের বিধায়ক তথা সদ্য-নির্বাচিত বরপেটার সাংসদ ফণীভূষণ চৌধুরীর সহধর্মিণী। ফণীভূষণ চৌধুরীর স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে অবলম্বন করে বঙাইগাঁও আসন ধরে রাখতে তাঁর পত্নী দীপ্তিময়ী চৌধুরীকে টিকিট দিয়েছিল অগপ।
এদিকে ৩১ নম্বর তফশিলি জনজাতি সংরক্ষিত সিঁদলিতে বিজেপি জোটশরিক ইউপিপিএল-এর নির্মলকুমার ব্রহ্ম ৩৭,২২৭ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিপিএফ-এর শুদ্ধকুমার বসুমতারিকে পরাজিত করেছেন। নির্মলকুমার পেয়েছেন ৯৫,২৪৩ এবং শুদ্ধকুমার বসুমতারি পেয়েছেন ৫৮,২২৭টি ভোট। সিঁদলি কেন্দ্ৰে মোট ভোটার ২,১৭,২৩৬ জন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস