রাজস্থানের মোধোপুরের সভা থেকে কংগ্রেসকে তীব্র নিশানা প্রধানমন্ত্রীর
মোধোপুর, ২৩ এপ্রিল (হি. স.) : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার রাজস্থানের টঙ্ক-সাওয়
রাজস্থানের মোধোপুরের সভা থেকে কংগ্রেসকে তীব্র নিশানা প্রধানমন্ত্রীর


মোধোপুর, ২৩ এপ্রিল (হি. স.) : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার রাজস্থানের টঙ্ক-সাওয়াই মোধোপুরের উনিয়ারাতে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং রাজ্যের জনগণের কাছে আবেদন করেছেন যে দেশের লুটপাটকারীদের একটি পাঁঞ্জাও যাতে রাজস্থান থেকে দিল্লি না আসে তা নিশ্চিত করা আপনাদের কর্তব্য।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভজন লাল শর্মা, রাজস্থানের মন্ত্রী শ্রী কিরোরি লাল মীনা এবং টঙ্ক-সাওয়াই মাধোপুর লোকসভার প্রার্থী শ্রী সুখবীর সিং জৌনপুরিয়া এবং অন্যান্য নেতারা জনসভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই হনুমান জন্মোৎসব উপলক্ষে সমগ্র দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি কংগ্রেসকে দলিত বিরোধী এবং অনগ্রসর বিরোধী বলে অভিযুক্ত করে তীব্র নিশানা করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে রামভক্ত হনুমানজির জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছে। বীর মহাবীর বজরঙ্গবলীর জন্মবার্ষিকীতে সাহসী পুরুষদের দেশ সাওয়াই-মাধোপুরে আমার আসার সৌভাগ্য হয়েছে। সভা শুরু হওয়ার পরও এখনও প্যান্ডেলে প্রচুর মানুষ আসছেন। দেশের মানুষের ভারতের জন্য একটি শক্তিশালী সরকার গড়ার আস্থা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশজুড়ে ফের একবার মোদী সরকারের স্লোগান আবারও ধ্বনিত হচ্ছে । সীমান্তে দাঁড়িয়ে সজাগ প্রহরীর মতো দেশকে রক্ষা করেছে রাজস্থান। একটি সুরক্ষিত রাষ্ট্র এবং একটি স্থিতিশীল সরকার দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা রাজস্থানের মানুষ ভালো করেই জানে। দেশে শক্তিশালী সরকার গঠন করার জন্য ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে রাজস্থানের মানুষজন একজোট হয়ে রাজ্যের ২৫ টি আসনে নিজদের আশীর্বাদ বিজেপিকে দিয়েছিল। এই ঐক্য রাজস্থানের সবচেয়ে বড় মূলধন। যখনই ভারতের মানুষ নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়েছে, তখনই দেশের শত্রুরা তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এখনও রাজস্থানের মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা চলছে, যার কারণে রাজস্থানের জনগণকে সতর্ক হতে হবে।

মাননীয় মোদী বলেছিলেন যে গত ১০বছরে, দেশ দেখেছে যে একটি স্থিতিশীল এবং সৎ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য কী করতে পারে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি । গত ১০ বছরে দেশের ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভোটারদের সঠিক ভোট দেওয়ার কারণে দেশে এত বড় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিজেপি সরকারের অধীনে, গরীবরা বিনামূল্যে রেশন পেয়েছে, স্থায়ী ঘর পেয়েছে এবং তাদের গ্যাস জ্বলেছে। ২০১৪ সালে, দেশের মানুষ মোদীকে দিল্লিতে সেবা করার সুযোগ দিয়েছিল, সেই কারণে দেশ এই অকল্পনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদি কংগ্রেস ২০১৩ এর পরেও ক্ষমতায় থাকত, তাহলে এখনও জম্মু ও কাশ্মীরে বাহিনীর উপর পাথর ছোঁড়া হত, শত্রুরা সীমান্তের ওপার থেকে এসে আমাদের জওয়ানদের শিরচ্ছেদ করে নিয়ে যেত এবং কংগ্রেস সরকার কিছুই করত না। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে ওয়ান র্যা্ঙ্ক ওয়ান পেনশন কার্যকর হতো না বা প্রাক্তন সেনারা ১ লাখ কোটি টাকা পেতো না এবং দেশে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ অব্যাহত থাকত। রাজস্থানে যারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তাদের রক্ষা করে গুরুতর পাপও করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস সরকারে থাকলে করোনার সময় কেউ বিনামূল্যে রেশন বা বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের ডোজ পেত না এবং দেশে মূল্যবৃদ্ধির জন্য হাহাকার পড়ে যেত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে দেশের বিপদের মধ্যেও নিজেদের সুবিধা খুঁজতো। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন যে ক্ষত দিয়েছে রাজস্থানের মানুষ তা ভুলতে পারবে না। মহিলাদের উপর অত্যাচারে কংগ্রেস রাজস্থানকে প্রথম স্থানে নিয়ে এসেছিল এবং কংগ্রেস নেতারা বিধানসভায় নির্লজ্জ বক্তব্য দিতেন। এসব আপত্তিকর ও নির্লজ্জ বক্তব্য কংগ্রেস নেতাদের শোভা পায় না। টঙ্কের এই অসামাজিক লোকদের কার্যকলাপের জন্য এখানকার শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিল কিন্তু এখন জনগণ শ্রী ভজন লালের সরকার গঠন করেছে এবং রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠনের পর মাফিয়া ও অপরাধীরা রাজস্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি পেপার লিক মাফিয়ারাও ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অপরাধী এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাজ্যের বিজেপি সরকার এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

মাননীয় মোদী বলেন যে, কয়েকদিন আগে কংগ্রেস শাসিত কর্ণাটকে এক দোকানদারকে মারা হয়েছিল হনুমান চালিসা শোনার জন্য। কংগ্রেসের শাসনকালে হনুমান চালিসা শোনা এবং ধর্মবিশ্বাস মেনে চলাও অপরাধ। এর শিকার হয়েছে রাজস্থান। কংগ্রেস নেতারা ভগবান রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু তাদের সমর্থকরা যারা হনুমান চালিসা শোনে তাদের আক্রমণ করা হয়। বিজেপির শাসনকালে রাজস্থান জুড়ে রামনবমী মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের আমলে রামনবমীর মিছিল নিষিদ্ধ ছিল। যারা মিছিলে পাথর ছুড়েছিল তাদের কংগ্রেস সুরক্ষা দিয়েছিল। কংগ্রেস আবার দাঙ্গা করেছিল মালপুরা, করৌলি, ছাপড়া, টঙ্ক এবং যোধপুরে। এ রাজ্যের মানুষ তাদের কখনো ক্ষমা করবে না। বিজেপি সরকার আসার পর হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কারোর নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, রাজস্থান থেকে আমার বক্তৃতায় কংগ্রেসে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস জনগণের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বিলিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। আমি যখন কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতির কথা বলছি, কংগ্রেস তখন আমাকে কটাক্ষ করছে। কংগ্রেস সত্যকে এত ভয় পায় কেন? কংগ্রেস কি তার নীতি আড়াল করার চেষ্টা করছে। গোপন এজেন্ডা ফাঁস হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেস ভয়ে আছে। কংগ্রেস ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিতে আবদ্ধ। তারা বাবা সাহেবের সংবিধানেরও তোয়াক্কা করে না। কংগ্রেস জনসাধারণের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি এবং অর্থ বাজেয়াপ্ত করার কথা বলছে। জনগণ রাজস্থান থেকে কংগ্রেসকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মাননীয় মোদী বলেন, কংগ্রেস সংবিধান নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। সংবিধান প্রণয়নের সময় ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণের প্রবল বিরোধিতা হয়েছিল, কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঠিক এর উল্টো কাজ করেছিলেন। তার বক্তব্য কারো কাছে গোপন নেই। যেখানে তিনি বলেছিলেন দেশের সম্পদের ওপর প্রথম অধিকার কার? এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, কংগ্রেসের সবসময় তোষণের চিন্তাভাবনা। ২০০৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই, এটি প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের কোটা কমিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটি ছিল ওদের একটি পাইলট প্রকল্প, যা কংগ্রেস সারা দেশে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। ২০০৪ থেকে ২০১০ এর মধ্যে, কংগ্রেস ৪ বার এই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আইনি বাধা এবং সুপ্রিম কোর্টের জন্য কংগ্রেস তার পরিকল্পনায় সফল হতে পারেনি। কংগ্রেস ২০১১ সালেও একই রকম চেষ্টা করেছিল। কর্ণাটকেও কংগ্রেস একইরকম চেষ্টা করেছিল। সংবিধান পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল সেখানেই। কিন্তু মোদী সংবিধান বোঝেন, মোদী সংবিধানের প্রতি নিবেদিত এবং মোদী এমন একজন ব্যক্তি যিনি বাবা সাহেব আম্বেদকরকে উপাসনা করেন। সত্য হল যে কংগ্রেস এবং ইন্ডি জোটের দলগুলো তাদের শাসনকালে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তাদের নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আলাদা সংরক্ষণ দিতে চেয়েছিল, এটা সংবিধানে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কংগ্রেসের এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে, এটাই মোদীর গ্যারান্টি যে দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণীর সংরক্ষণ বজায় থাকবে। ধর্মের নামে বিভক্ত হতে দেওয়া হবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, সংরক্ষণের সাংবিধানিক সময়সীমা ২০২০ সালে শেষ হয়ে গিয়ে। কিন্তু মোদী দলিত এবং আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষণ আরও ১০ বছরের জন্য বাড়িয়েছেন। কংগ্রেস কখনও উন্নয়নের ইস্যুতে নির্বাচনে লড়ে না। কংগ্রেস কয়েক দশক ধরে মানুষকে পানীয় জল থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার প্রতিটি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জলজীবন মিশন শুরু করেছিল। রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার এই প্রকল্পেও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। কংগ্রেস রাজস্থানের জন্য খুব জরুরি ইআরসিপি প্রকল্পটি মঞ্জুর করেনি। কিন্তু রাজস্থানে বিজেপি সরকার গঠনের ৩ মাসের মধ্যে, ইআরসিপি প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল, যা থেকে টঙ্ক-সাওয়াই মাধোপুরের কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধির ১১০০ কোটি টাকা সরাসরি টঙ্ক-সাওয়াই মাধোপুরের কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। রাজস্থানে গমের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যও বাড়ানো হয়েছে। দেশে আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ নিয়েও কংগ্রেসের অসুবিধা আছে। দেশের বৃহত্তম দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে সওয়াই মাধোপুরের মধ্য দিয়ে করা হয়েছে। মোদী সরকার দৌসা-গঙ্গাপুর শহরের সংযোগকারী রেললাইনের কয়েক দশকের অমীমাংসিত কাজও সম্পন্ন করেছে। এই অঞ্চলে আরও ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি মেডিকেল কলেজও তৈরি করা হচ্ছে।

মাননীয় মোদী বলেন, গত দিনগুলোয় রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। রাজস্থানের মানুষ আমাকে তাদের আশীর্বাদ দিয়েছে। এই আশীর্বাদই আমার পুঁজি, দেশের মানুষের স্বপ্নই আমার স্বপ্ন। গত ১০ বছরে যে কাজ করা হয়েছে তা কেবল একটি ট্রেলার মাত্র। দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটি বিকশিত ভারতের স্বপ্নপূরণ করতে, আমার প্রতিটি মুহূর্ত দেশের জন্য উত্সর্গীকৃত। তাই আমি ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার জন্য ২৪x৭ কাজ করছি। তিনি সমস্ত বিজেপি প্রার্থীকে ২৬ এপ্রিল বিপুল ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য রাজস্থানের সমস্ত ভোটারদের আবেদন জানান।

হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ / সোনালি




 

 rajesh pande