।। রাজীব দে।
চট্টগ্রাম (অসম), ৮ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : 'সনাতনীরা সুরক্ষার জন্য লড়তে জানে', চট্টগ্রামে আয়োজিত বিশাল সমাবেশ থেকে হুঙ্কার দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে সম্মিলিত সনাতনী ছাত্রসমাজ আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, মঠ-মন্দিরে হামলা ও খুলনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে কলেজছাত্র উৎসব মণ্ডলের ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সনাতনীরা যদি শান্তিতে না থাকতে পারে, তা-হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের প্রাপ্তি ব্যর্থ হবে।
সমাবেশে ইসকন পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘আমরা সনাতনীরা অবিভক্ত ভারতের ভূমিপুত্র। আমরা কোনও দেশ থেকে এখানে আসিনি। এটাও যেমন সত্য, তেমন সত্য হচ্ছে, আমরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য লড়তে জানি। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা কখনও পিছপা হবো না।’
তিনি বলেন, ‘ ‘হিন্দুরা যখন নিপীড়িত হয়, তাঁরা যখন অধিকার নিয়ে মাঠে নামে, তাঁদেরকে ‘ভারতীয়’ বা ‘আওয়ামি লিগের’ ট্যাগ দেওয়া হয়। তবে আমরা কোনও দলের গোলাম নই।’ বলেন, ‘দেশে প্রত্যেকটি মানুষের ভোটাধিকার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নাগরিক অধিকারও। বিগগত সরকারগুলোর মতো এখনও আমাদের মঠ-মন্দির ভাঙা হচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আপনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা সংখ্যালঘু নই’। যদি তা-ই হয়, তা-হলে আমাদের মন্দিরগুলো ভেঙেছে কেন? আপনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। বাঙালির সম্মান বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু আপনার সরকারের সময় আমরা সনাতনীরা যদি শান্তিতে না থাকি তা-হলে আপনার এই প্রাপ্তি ব্যর্থ হবে।’’
বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনি কথা দিয়েছিলেন, সনাতনী সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রায় এক মাস হচ্ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, একটি দাবিও পালন হয়নি, বাস্তবায়ন হয়নি।’’
সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্দেশ্যে চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, ‘আপনারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। আমরা সেই বাংলাদেশের অংশ। আমাদের বাদ দিয়ে তো নতুন বাংলাদেশ হবে না। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দয়া করে আমাদের নিয়ে প্রহসন করবেন না। হিন্দুদের ওপর এভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা হতে থাকলে বাংলাদেশের স্বাভাবিক মর্যাদা, অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ও গণতন্ত্রের বিকাশমান ধারা, এগুলো কোনও কিছুই থাকবে না।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন, তাঁরা খেয়াল করবেন, কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আমাদের মিত্র হয়ে, ফ্রেন্ড হয়ে আমাদেরকে উসকানিমূলক কথা বলছে। খুলনায় আহত হয়ে উৎসব মণ্ডল আজও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, তাঁকে সনাতন ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন উসকানিমূলক কথা বলা হয়েছে। এর বিপরীতে ১৬ বছরের সেই অপরিপক্ব নাবালক যখন তার যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে। আমরা কখনও সে ধরনের অভিব্যক্তিকে সমর্থন করি না। তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া যেত, তাকে বিচার ব্যবস্থায় নেওয়া যেত। সেই ছেলেটিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনে আক্রমণ করেছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
শুক্রবার রাতে মহানগরীর চেরাগি পাহাড় মোড় এলাকা দিয়ে গণেশ প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কদম মোবারক এতিমখানা থেকে গরম জল ছুঁড়ে মারা এবং এর পরের উদ্ভূত ঘটনার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন চিন্ময়কৃষ্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কি ধর্মীয় অনুভূতি নেই? আমাদের চামড়া কি এত মোটা যে আমাদের আরাধ্যকে নিয়ে উপহাস করবেন আপনারা? আমরা কি প্রতিবাদ করতে পারব না? গতকাল রাতে প্রতিবাদ করা হয়েছে। অতিশয় দুর্ভাগ্যের বিষয়, তখন এটাকে মসজিদ আক্রমণ করা হচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে।’
চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন ভাইকে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে তাঁদের উদ্ধার করেছে। আমরা বলতে চাই, আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে, আমার প্রাপ্য অধিকারকে আপনারা প্রহসন করে অন্য খাতে নিয়ে যাবেন না। এভাবে বারবার প্রহসন হলে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে।’
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস