
আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর (হি.স.) : উত্তরাখণ্ডে ত্রিপুরার ছাত্র অ্যাঞ্জেল চাকমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে উত্তাল জনমত। আগরতলার উত্তর গেট, সিটি সেন্টার ও বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ মানুষের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা, মোমবাতি মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন উত্তর গেট এলাকায় মোমবাতি মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহার উদ্দেশ্যে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যেখানে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এদিকে, চারটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন আগরতলার সিটি সেন্টারের সামনে পৃথকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। বক্তারা ঘটনাটিকে জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলা বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে, তিপ্রা মথা পর্টির ছাত্র সংগঠন তিপ্রা ইন্ডিজিনাস স্টুডেন্টস ফেডারেশন (টিআইএসএফ) রবিবার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান থেকে রাজবাড়ি গেট পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করে অ্যাঞ্জেলের প্রতি সুবিচারের দাবিতে। স্লোগান, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এই আন্দোলনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান।
তিপ্রা মথা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা পলাতক হামলাকারীর সন্ধান দিতে সহায়ক তথ্যদাতাকে নিজের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। তিনি উত্তরাখণ্ড পুলিশের মাত্র ২৫,০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, “এটাই কি অ্যাঞ্জেলের জীবনের মূল্য?”
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা এবং সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপের দাবি করেছেন। উত্তরাখণ্ড পুলিশের এডিজিপি জানান, ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, একজন হামলাকারী এখনও পলাতক।
প্রসঙ্গত, ৯ ডিসেম্বর অ্যাঞ্জেল চাকমা ও তাঁর ভাই মাইকেল চাকমা হামলাকারীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর আক্রমণের শিকার হন। মাইকেল গুরুতরভাবে আহত হন এবং অ্যাঞ্জেলকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ২৬ ডিসেম্বর অ্যাঞ্জেলের মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা দুই ভাইকে লক্ষ্য করে জাতিগত গালিগালাজ করছিল—ফলে ঘটনাটি বিদ্বেষমূলক অপরাধের ইঙ্গিত বহন করছে।
উল্লেখ্য, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমাও ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে ন্যায়বিচারের দাবি করেছেন। ত্রিপুরা এবং উত্তরাখণ্ডে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ও ছাত্র সংগঠনও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। অ্যাঞ্জেলের মৃত্যুর পর ত্রিপুরায় ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে চাপ বাড়ছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ