গুয়াহাটি, ১ জুন (হি.স.) : ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধসে বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার রাজ্য। ওই রাজ্যের বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০।
গত প্রায় চারদিনের অবিরাম বর্ষণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার রাজ্য বন্যা এবং ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুৰ্যোগের কবলে পড়েছে। অসম, মণিপুর, অরুণাচল প্ৰদেশ এবং মিজোরাম থেকে এখন পৰ্যন্ত ২৫ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির আধিকারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকারি সূত্রের খবর, অরুণাচল প্ৰদেশে ভূমিধসে কম করেও নয় (৯) জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে পূর্ব কামেং জেলার বানা-সেপ্পা ১৩ নম্বর জাতীয় সড়কে লাগোয়া পাহাড় থেকে এক বড়সড় ভূমিধসে চার চাকার একটি মারুতি ফ্রঁক্স যাত্রীবাহী গাড়ি পাশে গভীর খাদে পড়ে। এতে দুটি পরিবারের দুটি ছোট শিশু, দুই মহিলা সহ সাতজনের করুণ মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া, নিম্ন সুবনশিরি জেলায় সংঘটিত আরেক ভূমিধসে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিম কামেং জেলার বালিপাড়া-চারিদুয়ার-তাওয়াং সড়কে সংঘটিত ভূমিধসে কয়েকটি গ্রামের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু যাত্রী রাস্তায় আটকে রয়েছেন বলে খবর। ভূমিধসে মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় মেচুকা উপত্যকা ভারতের বাকি অংশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
অসমে আজ রবিবার এ খবর লেখা পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী বন্যার কবলে পড়ে তিন এবং ভূমিধসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গোলাঘাট, লক্ষ্মীপুর এবং কামরূপ (মেট্রো) জেলায় মৃত্যুর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গোলাঘাটে নিহতদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। কামরূপ মেট্ৰো জেলা সদর গুয়াহাটির দাঁতালপাড়ায় শনিবার ভোরে গার্ড ওয়ালের চাপায় ১০ বছরের এক বালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ভূমিধসের কারণে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে।
অসমর ১৭টি জেলা বন্যার কবলে পড়েছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলি যথাক্রমে ধেমাজি, দক্ষিণ শালমারা, লখিমপুর, ডিব্ৰুগড়, গোলাঘাট, দরং, নগাঁও, কারবি আংলং, কারবি আংলং পশ্চিম, কামরূপ (গ্রামীণ), বিশ্বনাথ, তিনসুকিয়া প্রভৃতি।
সংহারী বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে অসমে প্ৰায় ৫৮,০৯১ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২৬,৪৮৭ জন পুরুষ, ২০,২৩৮ জন মহিলা এবং ১১,৩৬৬ জন শিশু রয়েছে।
মণিপুরেও বন্যা এবং ভূমিধসে পাহাড়ি জেলা সেনাপতি, তামেংলং, ননে এবং ফেরজাওলে প্ৰলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ইমফল নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে ইমফল পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকা জলে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা কৰ্তৃপক্ষ, ভারতীয় সেনা এবং আসাম রাইফেলস-এর জওয়ানরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইমফল পূর্ব এবং পশ্চিম জেলার মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ এবং নানাভাবে সক্ষম মানুষজন সহ কম করে ৮০০ জনকে উদ্ধার করেছেন।
ভারতীয় সেনা এবং আসাম রাইফেলস অপারেশন জলরাহাটের ২ নম্বর অভিযানের বলে মণিপুরের বন্যা কবলিত অঞ্চল থেকে প্ৰায় ৮০০ জন সাধারণ নাগরিককে উদ্ধার করেছে। এছাড়া ইমফলে অবস্থিত ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র একটি দলকে বন্যার কবল থেকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপদে দ্রুত নিরাপদে উদ্ধার করেছে আসাম রাইফেলস।
শনিবারের প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ইমফলের রাজপথ দিয়ে জল প্রবাহিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় ব্যাহত হয়েছে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
মিজোরামেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংহারী বন্যা পরিস্থিতির ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় চার (৪) জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেলা দুৰ্যোগ মোকাবিলা কৰ্তৃপক্ষের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চাম্পাইয়ে হড়কা বন্যা একটি পরিবারের তিন (৩) জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সেরচিপেও আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। রাজ্যের একাধিক জেলায় ভূমিধসে বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ধসের ধ্বংসস্তূপের নীচে আবদ্ধ হয়ে আছেন একজন। তাঁকে উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।
মিজোরামের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা লংত্লাইয়ে চারটি দুটি নির্মীয়মাণ আরসিসি ভবন এবং দুটি আসাম টাইপের বাড়ি ধসে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির মধ্যে রয়েছে হ্লুপুই নামে এক মহিলার মালিকানাধীন একটি হোটেল।
ধসের সময় হোটেলটিতে ২১ জন অতিথি ছিলেন। ইয়ং লাই অ্যাসোসিয়েশনের ফিনান্স সেক্ৰেটারি এডেন লালরামওয়াইয়ার জানান, ১৫ জন অতিথি এবং মালিক পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। একজন অতিথিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, পাঁচ অতিথি মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাগরিক বলে জানান এডেন। তিনি এখনও নিখোঁজ। তাঁকে উদ্ধার করতে অভিযান চলছে। রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁদের উদ্ধার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
আরেকটি বাড়ি ধসে একজন বয়স্ক ব্যক্তি এবং তাঁর সহকারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাঁদের কোমরে আঘাত সহ আহত অবস্থায় নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে।
এদিকে মিজোরামের রাজ্যপাল অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ভিকে সিং এবং রাজযের দুৰ্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের মন্ত্ৰী অধ্যাপক লালনিলাওমাই ক্ষতিগ্ৰস্ত অঞ্চল পরিদৰ্শন করে মৃত পরিবারবর্গের জন্য চার (৪) লক্ষ টাকা করে এককালীন অর্থসাহায্য ঘোষণা করেছেন। রাজ্যজুড়ে চলছে উদ্ধার ও ত্রাণ বণ্টন এবং নিরীক্ষণ অভিযান।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস