নারদ পুরস্কার অসমিয়া শিশু সাহিত্যের জন্য অনুপ্ৰেরণা, বলেছেন ‘দেবর্ষি নারদ পুরস্কার’-প্ৰাপ্ত শান্তনু তামূলি
বিশেষভাবে সংবৰ্ধিত তিন তরুণ সাংবাদিক
গুয়াহাটি, ১ জুন (হি.স.) : দেশের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপপ্রচার চলছে, সে সবের বিরুদ্ধে লড়াই করা সাংবাদিক ও নাগরিকদের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজ ধ্বংসকারী এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সাংবাদিক ও নাগরিকদের প্ৰধান কৰ্তব্য। কেন না, আজ ঔপনিবেশিক, বাম মানসিকতায় ভারতের সাংবাদিকতা দিগভ্ৰান্ত, বলেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, দিল্লির এইচভি টিভির প্রধান সম্পাদক ড. হৰ্ষবৰ্ধন ত্ৰিপাঠী।
রবিবার বিকালে গুয়াহাটির বড়বাড়ি ভিআইপি রোডে অবস্থিত রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদর কাৰ্যালয় ‘সুদর্শনালয়’-এর ‘কৰ্মযোগী গৌরীশংকর প্রেক্ষাগৃহ’-এ বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্র গুয়াহাটি আয়োজিত ‘নারদ জয়ন্তী’র অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য পেশ করছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ড. হৰ্ষবৰ্ধন৷
‘আজকের সাংবাদিকতা এবং দেবর্ষি নারদের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক বিষয়ে ড. হৰ্ষবৰ্ধন ত্ৰিপাঠী সাংবাদিক এবং সমাজের নাগরিকদের মধ্যে চেতনা জাগ্রত করতে প্রাসঙ্গিক বহু তথ্য সংবলিত বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেন, দেবর্ষি নারদের কোনও অট্টালিকা ছিল না, দেবরাজ ইন্দ্ৰের রাজসভায় তাঁর জন্য কোনও আসনও ছিল না, রাজ-পৃষ্ঠপোষকতায় সাংবাদিকতাও করতেন না নারদ। অথচ এর বিপরীত ছবি দেখা যাচ্ছে আজকাল।
ড. ত্রিপাঠী বলেন, ইংরেজ শাসকের পথপ্রদর্শক হিসেবে সাম্প্রতিককালের সংবাদ জগত যে প্ৰচেষ্টা চালাচ্ছে তা উদ্বেগজনক৷ সাম্প্ৰতিক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশের বিরোধী এবং একাংশ সংবাদগোষ্ঠীর ভূমিকা হতাশাজনক৷ ধৰ্ম জিজ্ঞেস করে সংহার চালানো হয়েছে পহেলগামে। অথচ এ ঘটনাকে ইসলামিক সন্ত্ৰাসবাদ বলে সত্য কথা বলতে পারেননি একাংশ সাংবাদিক, কীসের ভয় তাঁদের? আমেরিকা, তুৰ্কি, চিনের কথিত বিশ্ববন্দিত অস্ত্ৰকে পাকিস্তানের আকাশ এবং মাটিতে ধ্বংসকারী ভারতীয় স্বদেশী প্ৰযুক্তির অস্ত্ৰকে ‘ঝুমলা’ বলে এক সময় সমালোচনা করেছিলেন ভারতের একাংশ রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক৷
তিনি বলেন, ভারতের প্ৰত্যেক বৰ্গ-সম্প্ৰদায়ের সমনীতির পরিপন্থী বামপন্থীর প্ৰভাবে দেশে আজ সাংবাদিকতা দিগভ্ৰান্ত৷ এই কঠিন সময় দেবৰ্ষি নারদের মতো সাম্প্ৰতিককালের সাংবাদিকদের নৈতিকতার প্ৰয়োজন৷
ড. ত্রিপাঠী বলেন, অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পের বিরুদ্ধাচরণকারীরা আশ্চর্যজনকভাবে চিনে এ ধরনের ক্যাম্পের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করছেন৷ গান্ধীজি, আম্বেদকরের প্ৰকৃত দৰ্শনকে বিকৃতকারী এ ধরনের নেতিবাচক সাংবাদিকতা ভারতীয় বীর-বীরাঙ্গনাদের অবজ্ঞা করতেও দেখা যায়। ফ্যাক নিউজ এবং ফ্যাক্ট চেক (সত্যানুসন্ধান)-এর কঠিন সময় সাংবাদিকদের নৈতিকভাবে শুদ্ধ হওয়া খুব জরুরি৷
তিনি বলেন, পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গিতে ঔপনিবেশিক মানসিকতার সাংবাদিকতাকে পুনরায় ভারতীয় মানসিকতায় ফিরিয়ে আনতে সফল হচ্ছে বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্ৰ৷
হর্ষবর্ধন বলেন, নিৰ্বাচনে জনতা যে সকল দলকে নাকচ করেন, সেই সব দলের প্ৰাৰ্থীদের নিৰ্বাচনী প্ৰক্ৰিয়াকে দোষারোপ করার বিষয়কে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেন একাংশ সাংবাদিক। তা মোটেও গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ নয়।
এদিকে এবারের ‘দেবর্ষি নারদ পুরস্কার’ প্ৰদান করা হয়েছে ‘মৌচাক’ এবং ‘নতুন আবিষ্কার’-এর সম্পাদক, বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক-সম্পাদক শান্তনু তামূলীকে৷ তাঁর হাতে একটি চেলেং চাদর, ফুলাম গামোছা, স্মারক, কয়েকটি পুস্তক, ভারতমাতার পটচিত্র, মানপত্ৰ এবং ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন ড. হৰ্ষবৰ্ধন ত্ৰিপাঠী৷
পুরস্কার নিয়ে শান্তনু তামূলী বলেন, ‘আমাকে প্ৰদত্ত দেবৰ্ষি নারদ পুরস্কার অসমিয়া শিশু সাহিত্যের জন্য অনুপ্ৰেরণা।’
অনুষ্ঠানের শুরু হয় ভারাতমাতার প্রতিমার সামনে প্রদীপ প্ৰজ্বলনের মাধ্যমে। এর পর বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্ৰ অসমের উপ-সভাপতি গুরুপ্ৰসাদ মেধি প্রধান অতিথি ড. হৰ্ষবৰ্ধন ত্ৰিপাঠীকে ফুলাম গামোছা, আৰ্নাই, শরাই, কয়েকটি পুস্তক দিয়ে সংবর্ধনা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন৷
‘দেবর্ষি নারদ জয়ন্তী’ অনুষ্ঠানে বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্ৰ অসমের পক্ষ থেকে ‘অসমীয়া খবর’ দৈনিক পত্রিকার জ্যেষ্ঠ উপ-সম্পাদক হিমাংশু পাঠক, ‘প্ৰাগ নিউজ’-এর ইনপুট এডিটর দিগন্ত শহরিয়া এবং ‘নিয়মীয়া বাৰ্তা’র স্টাফ রিপোৰ্টার খনীন ডেকাকে মানপত্ৰ, স্মারক, কয়েকটি পুস্কক, ফুলাম গামোছা, ভারতমাতার পটচিত্র দিয়ে বিশেষ সংবৰ্ধনা জানানো হয়েছে।
বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্ৰ অসমের সম্পাদক কিশোর শিবম প্ৰাস্তাবিক ভাষণ প্রদান করেছেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারদ শব্দের বাখ্যা এবং সংবাদ সাধনায় তাঁর গুরুত্ব বাখ্যা করেছেন৷ বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্ৰ অসমের সভাপতি ড. গৌরাঙ্গ শৰ্মা, রাষ্ট্ৰীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অসম ক্ষেত্ৰ প্ৰচারপ্ৰমুখ ড. সুনীল মোহান্তি, অসম প্ৰকাশন পরিষদের সচিব প্ৰমোদ কলিতা-সহ বহু গণ্যমান্য বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন আজকের ‘নারদ জয়ন্তী’র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন নব বুজরবরুয়া৷ অনুষ্ঠানে সমাপ্তি ঘটে শিল্পী শরত রাগের নারদ স্তোত্র এবং বন্দেমাতরম সংগীতের মাধ্যমে৷
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস
