বক্সনগর (ত্রিপুরা), ১২ জুন (হি.স.) : মাসের পর মাস কাজ করেও মিলছে না একফোঁটা স্বস্তি। পেট চালাতে না পেরে অবশেষে থালা হাতে পথে বসতে বাধ্য হলেন সিপাহীজলা জেলার মেলাঘর পুর পরিষদের সাফাই কর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলাঘর পুর পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে—সাফাই কর্মীরা থালা হাতে বসে আছেন ‘ভিক্ষার’ ভঙ্গিমায়। অথচ তাদের দাবি ভিক্ষা নয়, তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য—পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন।
জানা গেছে, মেলাঘর পুর পরিষদের অধীনে কর্মরত সাফাই কর্মীরা পাঁচ মাস ধরে কোন বেতন পাননি। অথচ প্রতিদিন সকাল হলেই শহরের অলিগলি পরিচ্ছন্ন রাখতে এই কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম চোখে পড়ে। শহরের মানুষ যাতে সুস্থ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাঁচতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন তাঁরা কখনও নর্দমার পচা জল, কখনও আবর্জনার দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে। কিন্তু সেই পরিশ্রমের বিনিময়ে যা পাওয়ার কথা ছিল, সেটুকুও তাঁরা পাচ্ছেন না।
সাফাই কর্মীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে তাঁরা পুর পরিষদের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে বেতন পাওয়ার দাবি জানিয়ে এসেছেন। একাধিকবার আবেদন, অনুরোধ, দরবার করেও কোন কাজ হয়নি। শুধু আশ্বাস, কাজের কাজ কিছু নয়। জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে পড়েছে অনেকেরই। সন্তানদের পড়াশোনা, সংসারের খরচ, ঔষধ-পথ্য—সব কিছুই এখন থমকে গেছে।
এই অবস্থায়, বাধ্য হয়েই বৃহস্পতিবার তাঁরা অভিনব প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। থালা হাতে বসে পড়েছেন পুর পরিষদের কার্যালয়ের সামনে। দৃশ্যটা কেবল প্রতিবাদের নয়, যেন রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি এক নীরব আর্তনাদ। তাঁদের মুখে একটাই কথা—“আমরা ভিক্ষা চাই না, চাই আমাদের ন্যায্য পাওনা।”
স্থানীয়রা বলছেন, এমন দৃষ্টান্ত আগে কখনও দেখা যায়নি মেলাঘরে। একদিকে সাফাই কর্মীদের বেতন বন্ধ, অন্যদিকে পুর পরিষদ মাসে মাসে নাগরিকদের কাছ থেকে নির্দ্বিধায় খাজনা আদায় করে চলেছে। তাহলে কোথায় গেল সেই অর্থ?সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
প্রশ্ন উঠছে—এটা কি নিছক গাফিলতি, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে বড় কোন প্রশাসনিক অব্যবস্থা। এই অসহায় সাফাই কর্মীদের দাবি খুবই সাধারণ—তাদের কষ্টার্জিত মজুরি। কিন্তু সেটুকু পাওয়ার জন্যও তাঁদের থালা হাতে বসতে হচ্ছে। এই চিত্রই যেন নগ্ন করে দেয় প্রশাসনিক কাঠামোর এক নির্মম বাস্তবতা।সত্যি বলতে, যাঁদের ঘামে শহর পরিচ্ছন্ন থাকে, আজ তাঁদের চোখের জলে ধুয়ে যাচ্ছে মানবিকতার মুখ।
হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ