আলোচনা করে এসওপি-র ভিত্তিতে জল ছাড়ার নির্দেশ নিপকো-কে
লখিমপুর (অসম), ২ জুন (হি.স.) : গত সপ্তাহখানেক ধরে রাজ্যে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে উজান অসম এবং বরাক উপত্যকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় উজান অসমের লখিমপুর জেলায় ‘নর্থ-ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (নিপকো) হঠাৎ বাঁধ খুলে জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে।
বন্যা-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আজ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাজ্যের জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. রণোজ পেগু, রাজস্ব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি দফতরের মন্ত্রী কেশব মহন্ত প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে লখিমপুর জেলার সবচেয়ে বন্যা-বিধ্বস্ত আমতলায় গিয়েছেন।
আমতলায় মুষলধারা বৃষ্টির জলে ভিজে মুখ্যমন্ত্রী বন্যাদুর্গত আদিবাসী মহিলা-পুরুষ-শিশুদের জড়িয়ে ধরে কষ্ট লাঘবের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী। মুখ্যমন্ত্ৰীকে কাছে পেয়ে তাঁকে জড়িয়ে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কয়েকজন বৃদ্ধা-বালক। তাঁদের কান্নার চোখর দুকোণ ভিজেছে ড. শর্মার। দাঁড়িয়ে থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যকারিতা বা এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কী ধরনের তৎপরতা এবং আগাম সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত তা নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন। বৃষ্টিপাতের আগাম তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে আরও সতর্কতার সাথে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিপকো-আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ লখিমপুরে আমি নিপকো আধিকারিকদের বাঁধ থেকে জল ছাড়ার সময় বিদ্যমান এসওপি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছি। আচমকা জল ছেড়ে দেওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। হঠাৎ ও অস্থায়ীভাবে পানি ছেড়ে দেওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। লখিমপুরের বন্যা কবলিত এলাকাগুলির পর্যালোচনা করার সময়, ডঃ শর্মা বলেন যে আমাদের সরকার জনগণকে ত্রাণ প্রদানের জন্য মিশন মোডে কাজ করছে।’
লখিমপুরে বন্যা কবলিত এলাকাগুলির পর্যালোচনা করার সময় মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ‘আমার সরকার জনগণকে ত্রাণ প্রদানের জন্য মিশনমুডে কাজ করছে। অত্যাবশ্যক খাদ্যসামগ্ৰী, বই-খাতা, কাপড়চোপড়, বাসনপত্র ইত্যাদি সব জিনিস আমরা সরবরাহ করব এবং বন্যার জল কমে যাওয়ার পর আমার সরকার তাঁদের ঘরবাড়িও পুনর্নির্মাণ করবে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার অসমের জনগণের সুখ-দুঃখের প্রতিটি সময় সর্বদা পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সবাই যাতে ভালো থাকে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি আমরা। আমরা প্রতি মুহূর্তে জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধ। ভারী বৃষ্টিপাতের দরুন লখিমপুরের আমতলায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমাদের প্রশাসন জনসাধারণকে সাহায্য এবং সুরক্ষার জন্য ক্রমাগত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অবিলম্বে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করব। ভালো দিন অবশ্যই আসবে।’
লখিমপুরের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলছি, এই বন্যায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের সকলের জন্য আমরা অবশ্যই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করব। আমরা স্থানীয় নাগরিকদের দুর্দশা গভীরভাবে বুঝতে পারছি। সংবেদনশীল এই সময় আমরা সকলের সাথে উপস্থিত থাকা, তাঁদের পরিস্থিতি বোঝা, তাদের চাহিদা পূরণ করা এবং তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস