গুয়াহাটি, ২২ জুন (হি.স.) : চারদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত বিখ্যাত শক্তিপীঠ কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা। শুরু হয়ে গেছে মা কামাখ্যার মহাঅম্বুবাচি যোগ। আজ রবিবার বেলা ০২-টা ৫৬ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে মা কামাখ্যার প্রবৃত্তি হয়েছে। নিবৃত্তি হবে ২৬ জুন বৃহস্পতিবার ভোররাত ০৩-টা ১৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে। নিবৃত্তি শেষে ভোরের দিকে নিত্যপূজার পর মন্দিরের দরজা ভক্ত-দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
অন্যবারের মতো এবারও অম্বুবাচি মেলা উপলক্ষ্যে দেশ-বিদেশের লাখো ভক্ত এসেছেন কামাখ্যা ধামে। সমস্ত নীলাচল পাহাড় লাল-গেরুয়া পোশাকে সজ্জিত সাধু-সন্ন্যাসীর ভিড়ে একাকার। এর মধ্যে রয়েছেন কালো পোশাক পরে তন্ত্র সাধক ও সাধিকা। যে দিকে চোখ যায় সে দিকে সশরীরে নানা দেব-দেবীর পদচারণা, ভক্তদের মাথা স্পর্শ করে আশীর্বাদ প্ৰদান বা নৃত্যের দৃশ্য। না, এঁরা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেননি। দেব-দেবীর সাজে সেজেছেন সাধু-সন্ন্যাসিনীরা। কেউ গায়ে ভস্ম মেখে শিব, তো কেউ নটরাজ, কেউ আবার কালী, নয়তো রাধা-কৃষ্ণ সেজে ভক্তদের আশিস দিচ্ছেন। আবার নিরালায় বহু তন্ত্রসাধক মগ্ন ধ্যানাসনে।
এদিকে অম্বুবাচি মহাযোগ উপলক্ষ্যে কামরূপ মেট্রো জেলার সাধারণ প্রশাসন এবং গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনারেট বেশ কিছু কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। লাখো ভক্তকুলের সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সব বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক পদস্থ আধিকারিক। চলমান অম্বুবাচির সময় কখন কীভাবে কামাখ্যা ধামে ভক্তকুল যাতায়াত, অবস্থান করতে পারবেন সে সম্পর্কে জারি করা হয়েছে নীতি-নিৰ্দেশনা।
কামাখ্যা ধামে ভক্ত ও পর্যটকদের সুরক্ষা এবং সুবিধার জন্য মহানগরের সাধারণ ও পুলিশ প্ৰশাসন এবং কামাখ্যা মন্দির পরিচালন সমিতি যুগ্মভাবে বিশেষ নীতি-নিৰ্দেশনা এবং সতৰ্কতা অবলম্বন করেছে। অম্বুবাচির নিবৃত্তির পর ২৬ এবং ২৭ জুন কেবল সৰ্বসাধারণ ভক্তদের জন্য মাকে দৰ্শনের সুবিধা থাকবে। এই দুদিন আলাদাভাবে কোনও ভিআইপি বা ভিভিআইপির ব্যবস্থা থাকবে না। মুখ্যমন্ত্ৰীকেও এই দিন কামাখ্যা ধামে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।
এছাড়া প্ৰশাসনের জারিকৃত নিৰ্দেশনা অনুযায়ী ভক্তরা আজ থেকে বুধবার পর্যন্ত ভোর ৫.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৬.০০টা পর্যন্ত নীলাচল পাহাড়ে উঠতে পারবেন। মন্দির দৰ্শন শেষ করে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যেতে হবে। কামাখ্যা ধাম চত্বরে কোনও ধরনের হুলস্থুল করা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, সর্বোপরি অপ্ৰীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা চলবে না। শান্তিপূৰ্ণভাবে অম্বুবাচি পালন এবং দৰ্শনে ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণকে সহযোগিতা করা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে গুয়াহাটি পুলিশ।
এবার বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের আশংকায় মহানগর প্ৰশাসন কর্তৃক চিহ্নিত ভূমিধস-প্ৰবণ এলাকাগুলিতে এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ জনতা তথা ভক্তকুলকে ওই সব এলাকাগুলিতে সতৰ্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানিয়েছে প্ৰশাসন। পাণ্ডুর দিক থেকে আগত রাস্তা বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে এই রাস্তা খোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে সুরক্ষার ক্ষেত্ৰে গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রচুর সংস্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভ ক্যামেরা, মোতায়েন করা হয়্ছে পৰ্যাপ্ত পুলিশ কর্মী।
পরিবহণের নিয়ম : ব্যক্তিগত গাড়ি পাহাড়ে উঠতে পারবে না। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মন্দির পর্যন্ত, শুধুমাত্র অনুমোদিত ফেরি যানবাহন চলাচল করবে এবং এ সব ফেরিতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ৰিটিক্যাল সাৰ্ভিস মেম্বারগণ যাতায়াত করতে পারবেন।
পাদুকা সংক্রান্ত নির্দেশিকা : কামাখ্যা গেটের ওপারে পাহাড়ের পাদদেশে স্যান্ডেল এবং জুতা নিষিদ্ধ।
বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য পরামর্শ : তাঁদের নিজস্ব সুরক্ষা এবং সুস্থতার জন্য প্রতিকূল আবহাওয়া ও বিপুল জনসংখ্যার দরুন এই সময় বৃদ্ধ এবং শিশুদের মন্দিরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
নিবৃত্তির পর মাতৃ দর্শন : ২৬ জুন যখন মন্দিরটি জনসাধারণের জন্য পুনরায় খুলে দেওয়া হবে, তখন সমস্ত ভক্তদের বংশী বাগান মাঠে জড়ো হতে হবে। এর পর স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁদের একটি সুশৃঙ্খল এবং সহজ দর্শন নিশ্চিত করতে সুসংগঠিত লাইনে নিয়ে যাবেন।
ট্র্যাফিক পরামর্শ : মন্দির এলাকা এবং আশপাশের প্রধান সড়কগুলিতে গুয়াহাটি ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তৃক জারিকৃত পৃথক ট্র্যাফিক বিধিনিষেধ এবং ডাইভারশন প্রযোজ্য হবে।
জরুরি যোগাযোগ : অম্বুবাচি মহাযোগের সময় জরুরি ভিত্তিতে সহায়তার প্রয়োজন হলে ১১২ নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত পূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ কোম্পানি, গুয়াহাটি পুর নিগম, পুলিশ, চিকিৎসকের দল, পরিবহণ, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, এনসিসি, স্কাউট অ্যান্ড গাইডস প্রভৃতি বিভাগের বহু কর্মকর্তা নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। মেলাকে সর্বাঙ্গসুন্দর ও নির্ঝঙ্ঝাট করতে সকল বিভাগের কর্তাদের সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন জেলাশাসক এবং অম্বুবাচি মহাযোগ পরিচালন সমিতির পদাধিকারীরা।
উল্লেখ্য, গত বছর অম্বুবাচির সময় কামাখ্যা ধানে ২৭ লক্ষের বেশি ভক্ত সমাগম হয়েছিল। এবারও গতবারের সংখ্যা অতিক্ৰম হতে পারে বলে মনে করছে প্ৰশাসন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস