গুয়াহাটি, ২৫ জুন (হি.স.) : প্রতি বছরের মতো এবারও অম্বুবাচি মহাযোগ উপলক্ষ্যে বিশ্বহিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর গুয়াহাটি মহানগর সমিতির উদ্যোগে ২১ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিখ্যাত শক্তিপীঠ কামাখ্যা ধামে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির চত্বর, কালিপুর এবং মালিগাঁও গ্রামদেবতা মন্দির চত্বরে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত স্বাস্থ্য শিবিরের সুবিধা নিচ্ছেন।
আজ স্বাস্থ্য শিবিরের শেষ দিন। ২১ জুন প্রাগজ্যোতিষ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ডা. বসন্তকুমার বৈশ্য স্বাস্থ্য শিবিরের উদ্বোধন করেছিলেন। শিবিরের উদ্বোধন করে ডা. বৈশ্য বলেন, ভক্তি করতে হলে সুস্বাস্থ্য থাকা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য রক্ষায় পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বহিন্দু পরিষদ আয়োজিত স্বাস্থ্য শিবিরের মাধ্যমে ভারত এবং বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হয়েছে। প্রতিবছর আয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা শিবিরের প্রশংসা করেছেন ডা. বসন্তকুমার বৈশ্য।
কামাখ্যা মন্দিরের প্রধান দলই কবীন্দ্রপ্রসাদ শর্মাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দেবালয় ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি জ্ঞান শর্মা এবং কোষাধ্যক্ষ বিভাস শর্মা। বিশ্বহিন্দু পরিষদের গুয়াহাটি মহানগর সমিতির সভাপতি সাবিন রাজখোয়া কর্তৃক পরিচালিত উদ্বোধনী শিবিরে ভিএইচপি-র আঞ্চলিক মাতৃশক্তির আহ্বায়ক তারাবতী শর্মা সহ গুয়াহাটি বিভাগের সম্পাদক চন্দন রাভা এবং মহানগর সমিতি ও প্রখণ্ডের কার্যকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুন কালিপুরে দ্বিতীয় শিবিরের উদ্বোধন করা হয়েছিল। ভিএইচপির কার্যকর্তা এবং বহু ভক্ত-পর্যটকদের উপস্থিতিতে শিবিরের উদ্বোধন করেছিলেন মহানগর সমিতির সভাপতি সাবিন রাজখোয়া। এছাড়া ২২ জুন সন্ধ্যায় ভিএইচপি-র উত্তরপূর্ব প্রান্ত সংগঠনমন্ত্রী ড. দীনেশ তিওয়ারি মালিগাঁও খণ্ডের সহযোগিতায় গ্রামদেবতা মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজিত তৃতীয় শিবিরের উদ্বোধন করেছেন৷
এই উপলক্ষ্যে ড. তিওয়ারি হিন্দুত্বের আচার-আচরণ, নীতি, ঐতিহ্য এবং মৌলিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন যা বহু শতাব্দী ধরে সনাতনীরা অনুসরণ করছেন। কামরূপ কামাখ্যা নামে পরিচিত বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্বাস কীভাবে প্রতি বছর নীলাচল পাহাড়ের প্রতি বিশ্বের মানুষকে আকৃষ্ট করে তা-ও সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে পাণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. নীলমোহন রায় কামাখ্যা দেবী ও কামাখ্যা শক্তিপীঠের ইতিহাস, নরকাসুরের কাহিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। স্বাগত বক্তব্যে ভিএইচপি-র জেলা সভাপতি সাবিন রাজখোয়া আত্মা, ঈশ্বর এবং মানবতার মূল্যবোধ সম্পর্কে তাঁর মতামত তুলে ধরে বক্তব্য পেশ করেছেন।
গুয়াহাটির নেমকেয়ার, মেডিসিটি, আয়ুর্বেদিক কলেজ, মাড়োয়ারি মেটারনিটি এবং স্বাগত হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সের পাশাপাশি চিকিৎসা কর্মীরা অবিরাম পরিষেবা প্রদান করছেন।
অন্যদিকে ওষুধ কোম্পানিগুলোও ভিএইচপি-র বিনামূ্ল্যের স্বাস্থ্য শিবিরে ওষুধ সরবরাহ করছে। প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার ভক্তের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নীলাচল পাহাড় শুধুমাত্র পর্যটকদের আকর্ষণস্থল নয়, বরং এটি লক্ষ লক্ষ ভক্ত-অনুরাগীদের মিলনস্থল এবং যোগ অনুশীলনের কেন্দ্র। তাই অম্বুবাচি মেলার পরিবর্তে এখন নাম দেওয়া হয়েছে অম্বুবাচি মহাযোগ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস