- 'শাস্ত্র সংরক্ষাণাগার ও গবেষণা কেন্দ্র'- এ প্রাচীন গ্রন্থগুলি সংরক্ষণের ঐতিহাসিক উদ্যোগ
বারাণসী, ২৯ জুন (হি.স.): ভারত তার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। কাশীর পবিত্র ভূমিতে দেশের প্রথম 'শাস্ত্র সংরক্ষাণাগার ও গবেষণা কেন্দ্র' উদ্বোধন করা হয়েছে। যার লক্ষ্য হল বেদ, উপনিষদ, পুরাণ এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থগুলিকে ডিজিটাল রূপ দেওয়া এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জ্ঞানের এই অমূল্য ভান্ডার পৌঁছে দেওয়া। এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ভারতকে 'জ্ঞান-ভিত্তিক বিশ্বনেতা' হিসেবে গড়ে তোলার দিকে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে, বহুভাষী সংবাদ সংস্থা 'হিন্দুস্থান সমাচার' মহারাষ্ট্রর উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নেয়। সেই সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি:
'শাস্ত্র সংরক্ষাণাগার ও গবেষণা কেন্দ্র'-এর মতো উদ্যোগের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে একনাথ শিন্ডে বলেন যে, একবিংশ শতাব্দীতে জ্ঞানের ভিত্তিতে ভারত বিশ্বনেতা হওয়ার ভাবনার উৎস হলো আমাদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই ধর্মগ্রন্থগুলিতে কেবল ধর্মীয় বিষয়বস্তুই নয়, বিজ্ঞান, দর্শন, জীবনধারা এবং সংস্কৃতির গভীরতাও রয়েছে। আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলি আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ। এগুলি জীবনধারা, বিজ্ঞান এবং দর্শনেরও একটি চমৎকার সংযোগ। আমরা যদি এগুলি সংরক্ষণ না করি, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম কখনওই জানতে পারবে না যে ভারত কী ছিল।
ডিজিটাইজেশনের গুরুত্ব এবং প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে শিন্ডে বলেন যে, কাশীতে দেশের প্রথম জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছে, যা কেবল গ্রন্থ সংরক্ষণের কেন্দ্রই হবে না বরং গবেষণা, অধ্যয়ন এবং তাদের ডিজিটাল রূপান্তরের প্রধান মাধ্যমও হয়ে উঠবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) মাধ্যমে এই জ্ঞানকে বিভিন্ন ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বাজেটে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিক্ষার জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বিশেষ ঘোষণা তারই প্রমাণ।
মহারাষ্ট্রর থানে জেলা থেকে এই অভিযান শুরু করার বিশেষ তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহারাষ্ট্রের থানে জেলা সাধু-সন্তদের ভূমি। থানের গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রাচ্যবিদ ডঃ বেদেকরের কাছে ৬০,০০০-এরও বেশি দুর্লভ গ্রন্থের সংগ্রহ রয়েছে। যা সংরক্ষণের বিষয় একটি বড় পদক্ষেপ। গুরু পূর্ণিমায় এখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযান শুরু হবে।
প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণের এই কাজে যুবদের ভূমিকার উপর জোর দিয়ে শিন্ডে বলেন, এই প্রচেষ্টায় যুবদের অংশগ্রহণ নির্ধারক হবে। যুবরা যদি আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মগ্রন্থ এবং স্থাপত্যের গভীরতা বুঝতে পারে, তাহলে তারা তা অন্যদের কাছেও পৌঁছে দিতে পারবে। এই কাজটি যে গতিতে করা দরকার, তার জন্য যুবসমাজের উৎসাহ এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হবে। ভারত যুবসমাজের দেশ, এই যুবসমাজই জ্ঞানের ক্ষেত্রে এটিকে নেতৃত্ব দিতে পারে। এই তরুণদের কর্তব্য হলো তাদের শক্তি দিয়ে দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়া এবং ভারতকে আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বনেতা হিসেবে গড়ে তোলা।
শিন্ডে এই পুণ্যকর্মে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) অবদানকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সংঘ কেবল এই গ্রন্থগুলিকে সংরক্ষণ করছে না, বরং প্রতিকূলতাকে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে দেশপ্রেম এবং সাংস্কৃতিক চেতনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই চেতনা দেশের যুবসমাজকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে সহায়ক প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, এই বছর সংঘের শতবর্ষ। এই শতবর্ষ একটি উপযুক্ত উপলক্ষ, যেখানে আমরা এই উদ্যোগ শুরু করছি। গুরু পূর্ণিমা থেকে শুরু হয়ে এই কাজটি দেশব্যাপী রূপ নেবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেদ ও উপনিষদের জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষানীতির আওতায় পাঠ্যক্রমে এই গ্রন্থগুলি থেকে কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শৈশবকাল থেকে ছোট ছোট বিষয়ের আকারে তথ্য দেওয়া হলে শিশুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা এবং জ্ঞান উভয়ই বৃদ্ধি করা সম্ভব। তিনি বলেন, ডিজিটাইজেশনের উদ্দেশ্য কেবল সংরক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিটি জেলায় এই কাজ করা উচিত যাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত হতে পারে।
প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষণ এবং প্রচারের এই পরিকল্পনাকে জাতীয় জাগরণের দিকে একটি পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করে একনাথ শিন্ডে বলেন যে এই উদ্যোগটি কেবল একটি সাধারণ সংরক্ষণাগার নির্মাণের চেয়ে অনেক বেশি। এটি ভারতীয় হিসেবে উৎপত্তি, এর চেতনা এবং এর বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা। যদি সরকার, সমাজ এবং যুবসমাজ এই দিকে একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে এটি কেবল অতীতের সংরক্ষণ হিসাবে প্রমাণিত হবে না, বরং ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণের দিকেও একটি পদক্ষেপ হিসাবে প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন যে, যেমন বলা হয় যে জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং এই প্রাচীন জ্ঞান ভারতকে আবার বিশ্বনেতা করে তুলবে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ