‘চিন যদি ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করে দেয় তা-হলে কী হবে?’ তথ্য দিয়ে মিথ ভেঙে পাকিস্তানি অপপ্রচারের জবাব অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্বের
গুয়াহাটি, ৩ জুন (হি.স.) : সিন্ধু নদীর জল চুক্তি নিয়ে বিরোধের পর পাকিস্তান আবারও চিনের কাঁধে চড়ে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। অসমের সংবাদ মাধ্যমে পাকিস্তানি অপপ্রচারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে নামেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শ
সোশ্যাল মিডিয়ায় পাকিস্তানি অপপ্রচারের জবাব মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্বের


গুয়াহাটি, ৩ জুন (হি.স.) : সিন্ধু নদীর জল চুক্তি নিয়ে বিরোধের পর পাকিস্তান আবারও চিনের কাঁধে চড়ে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। অসমের সংবাদ মাধ্যমে পাকিস্তানি অপপ্রচারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে নামেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি দায়িত্ব নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যাচারের খণ্ডন করে তথ্য দিয়ে যোগ্য জবাব দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা গত রাতে তাঁর সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ইংরেজি এবং অসমিয়া ভাষায় পৃথক পৃথক একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। দীৰ্ঘ পোস্টে মুখ্যমন্ত্ৰী লিখেছেন, চিন যদি ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করে দেয়, তবে তা ভারতের জন্য সহায়ক প্রমাণিত হবে। কারণ প্রতি বছর অসমে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। পাকিস্তানের নতুন এই ভীতি প্ৰদৰ্শনকারী প্রচারণার যোগ্য জবাব এভাবেই দিলেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত যখন থেকে একতরফাভাবে পুরাতন এবং সিন্ধু জল চুক্তি ভঙ্গ করেছে, তখন থেকেই পাকিস্তান ভারতে নতুন করে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে।

‘চিন যদি ব্রহ্মপুত্রের জল বন্ধ করে দেয় তা-হলে কী হবে?’ এই প্রশ্ন তুলে জবাবি পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন আমরা এই মিথকে ভয় দিয়ে নয়, বরং তথ্য এবং জাতীয় স্পষ্টতা দিয়ে ভেঙে ফেলি। ব্রহ্মপুত্র এমন একটি নদ (নদী নয়), যার ভারত থেকে উৎপত্তি – এর ঘাটতি হয় না। ব্রহ্মপুত্রের মোট জলপ্রবাহের মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চিনের। তাও বেশিরভাগই হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সীমিত বৃষ্টিপাতের কারণে। বাকি ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ জল ভারতেই উৎপত্তি হয়, যেমন অরুণাচল প্রদেশ, অসম, নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে প্রবল মৌসুমী বৃষ্টিপাত প্রধান উপনদী যেমন সুবনশিরি, লোহিত, কামেং, মানস, ধনশিরি, জিয়া-ভরালি, কপিলির মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রে প্রবাহিত হয়। এছাড়া মেঘালয়ের খাসি, গারো এবং জয়ন্তিয়া পাহাড়ের জল কৃষ্ণাই, দিগারু, কুলসি ইত্যাদি উপনদীর মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রে যায়।’

মুখ্যমন্ত্ৰী লিখেছেন, ‘ভারত-চিন সীমান্তে প্রবাহিত (তুতিং)২,০০০–৩,০০০ বর্গমিটার/সেকেন্ড। অসমের সমতল ভূমি যেমন গুয়াহাটিতে বর্ষাকালে প্রবাহিত হয় ১৫,০০০-২০,০০০ বর্গমিটার/সেকেন্ড। ভারতে প্রবেশের পর ব্রহ্মপুত্র নদ শক্তিশালী হয়। এটি একটি ভারতীয়, বৃষ্টিনির্ভর নদী ব্যবস্থা, যা কোনও একক উৎসের ওপর নির্ভরশীল নয়।’

তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের জানা উচিত, চিন যদি কখনও ব্রহ্মপুত্রের জল কমিয়ে দেয় (যা এখন পর্যন্ত কোনও প্ল্যাটফর্মে বলা হয়নি বা ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি), তা-হলে তা ভারতের জন্য সহায়ক হতে পারে। কারণ প্রতি বছর অসমের ভয়াবহ বন্যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।’

‘৭৪ বছর ধরে সিন্ধু জল চুক্তির বলে অপরিসীম সুবিধা ভোগকারী পাকিস্তান এখন উদ্বিগ্ন, কারণ ভারত তার জল অধিকারের বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, ব্রহ্মপুত্র কোনও একক উৎসের ওপর ভিত্তি করে নয়, এটি আমাদের ভূগোল, আমাদের বর্ষা এবং আমাদের সভ্যতাগত শক্তি দ্বারা পুষ্ট।’ লিখেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা।

তথ্যের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী ড. শৰ্মা কেবল পাকিস্তানের ভয় দেখানোর কৌশলই ব্যর্থ করে দেননি, বরং চিনকে উপযুক্ত জবাবও দিয়েছেন, যাতে তারা ব্রহ্মপুত্র ইস্যুতে ভারতকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande