শিলচর (অসম), ২ জুলাই (হি.স.) : ‘মাদকাসক্তিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রাম হিসেবে দেখার সময় শেষ, এটি এক সামাজিক যুদ্ধের রূপ নিয়েছে।’ বলেছেন কাছাড়ের সহকারী আয়ুক্ত তথা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অঞ্জলি কুমারী।
আজ মঙ্গলবার সকালে বিপ্লবী উল্লাসকর বিদ্যাভবনে আয়োজিত সচেতনতামূলক সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে সমাজে ক্রমবর্ধমান মাদকপ্রবণতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন অঞ্জলি কুমারী। 'নেশামুক্ত ভারত অভিযান'-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত সভায় অংশগ্রহণ করেন মোট ২০৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৪০ জন ছিলেন মহিলা, তাঁরা সকলেই মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ এক সংকল্প নিয়েছেন।
সমাজকল্যাণ আধিকারিক অঞ্জলি কুমারী (এসিএস) তাঁর ভাষণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিশোর-কিশোরীরা বর্তমানে মাদকের প্রতি সবচেয়ে বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। এই সংকটের মোকাবিলায় পরিবার, বিদ্যালয়, প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত পদক্ষেপ অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি পৃথক পৃথকভাবে লড়াই করি, তাতে কোনও লাভ হবে না। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।’
আজকের অনুষ্ঠানটি কাছাড় জেলার সাধারণ প্রশাসন এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী উল্লাসকর বিদ্যাভবনের প্রধানশিক্ষিকা মনীষা দাশগুপ্ত, পোষণ এবং জেলা মহিলা ক্ষমতায়ন কেন্দ্রের আধিকারিক, জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মচারী এবং 'আর্ট অব লিভিং'-এর প্রশিক্ষিকা রেশমি পুরকায়স্থ।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. মিঠুন রায় মাদকাসক্তির মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে এক তথ্যবহুল বক্তব্য পেশ করেছেন। কীভাবে প্রাথমিক লক্ষণ, বন্ধুদের প্রভাব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবক্ষয় একটি কিশোরকে মাদকের দিকে ঠেলে দেয় সে সব বিষয়ে বহু তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়া অভিভাবক তথা পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বিদ্যালয়ের ভূমিকাকে আরও সংবেদনশীল ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রেশমি পুরকায়স্থ একটি ইন্টার্যাবকটিভ অধিবেশন পরিচালনা করে মোটিভেশনাল গল্প, মনোসংযোগ বৃদ্ধিকারী কার্যকলাপ এবং ডেস্কটপ যোগা-র সংমিশ্রণে অংশগ্রহণকারীদের মনের জোর বাড়ানোর কৌশল শিখিয়েছেন। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থাপনা তরুণদের মধ্যে খোলামেলা অংশগ্রহণ ও আত্মজিজ্ঞাসার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সকল অংশগ্রহণকারী মাদক বর্জন করবেন এবং তাঁদের পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দেবেন বলে শপথ নিয়েছেন। এই প্রতিজ্ঞা এক দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন, প্রত্যাশাপূর্ণ, দৃঢ় এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে কাছাড় জেলা প্রশাসন এক মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কেবল সচেতনতা নয়, বরং প্রতিরোধ এবং দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পথ দেখাচ্ছে। এক একটি সচেতনতা শিবির, এক একটি কণ্ঠস্বর এবং এক একটি শপথের মধ্য দিয়ে জেলাশাসক মৃদুল যাদব (আইএএস)-এর গতিশীল নেতৃত্বে এই আন্দোলন আরও গতিময় হয়ে উঠছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস