


মুখ্যমন্ত্রীর হাতে শুভারম্ভ ‘নিযুত মইনা ২.০’, ২০২৫-২৬ অৰ্থবৰ্ষে উপকৃত হবেন অসমের ৩,৫০,২৬৫ জন ছাত্ৰী
গুয়াহাটি, ২৭ অক্টোবর (হি.স.) : ‘প্ৰথম পত্নীর বর্তমানে দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে না। দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার পরিণতি হবে সাত বছরের কারাবাস। আজ এভাবেই কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা।
আজ সোমবার গুয়াহাটির সরুসজাইয়ে অৰ্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া ক্ৰীড়া প্ৰকল্পে আয়োজিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে অসংখ্য ছাত্রীর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা শুভারম্ভ করেছেন ‘নিযুত মইনা প্রকল্প’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ। কয়েকজন ছাত্ৰীর হাতে এই প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দকৃত টাকার চেক তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ২০২৫-২৬ অৰ্থবৰ্ষে এই প্ৰকল্পের অধীনে উপকৃত হবেন অসমের ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ২৬৫ জন ছাত্ৰী।
ছাত্রী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মূলত বাল্যবিবাহ রোধ করতে সরকার এই অভিলাষী প্রকল্পের প্রচলন করেছে। নিযুত মইনা প্রকল্প ১.০ চালু হওয়ার পর (প্ৰথম বছর) কোনও ছাত্ৰী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য শিক্ষাপ্ৰতিষ্ঠান ছাড়েননি। এখন থেকে অসমের কোনও ছাত্ৰীকে পড়াশোনা ছাড়তে দেওয়া হবে না। ছাত্ৰীদের মধ্যে এখন আত্মবিশ্বাস এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি।'
তিনি বলেন, ‘নিযুত মইনা প্রকল্প’-এর অধীনে গত অর্থবৰ্ষের মতো এবারও উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ছাত্ৰীদের প্রদান করা হবে আৰ্থিক সাহায্য। গত বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৩০২ জন ছাত্ৰী এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছিলেন। এবার ২০২৫-২৬ অৰ্থবৰ্ষে উপকৃত হবেন অসমের ৩,৫০,২৬৫ জন ছাত্ৰী।
ড. শৰ্মা জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্ৰীরা প্রতিমাসে ১,০০০ টাকা, স্নাতকের ছাত্ৰীরা প্ৰতিমাসে ১,২৫০ টাকা, স্নাতকোত্তরের ছাত্ৰীরা প্ৰতি মাসে পাবেন ২,৫০০ টাকা করে। তাছাড়া ২,৫০০ টাকা করে পাবেন বি.এড-এর শিক্ষার্থীরাও। আগামী ১০ মাস এই প্রকল্পের অধীনে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের দেওয়া হবে নির্ধারিত টাকা। অন্যদিকে ডিগ্ৰি পঞ্চম সেমিস্টার, পলিটেকনিক, আইটিআই-এর ছাত্ৰীরাও এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তিনি জানান, এ বছর মাধ্যমিকের ছাত্ৰছাত্ৰীদের দেওয়া হবে ৩০০ টাকা করে। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা পাবে ৩০০ টাকা করে। তাছাড়া আগামী ফেব্ৰুয়ারি মাসে ‘নিযুত মইনা প্রকল্প’-এর সঙ্গে সরকার দেবে উপহার, ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘বাল্যবিবাহের মতো ব্যাধি অসমের সমাজজীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। অসমে এমন বহু মা-বাবা কিংবা অভিভাবক আছেন যাঁরা ১২ বছর বয়সে নিজেদের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতেন। ১৪ বছর বয়সে তারা গর্ভধারণ করে মা হতেন। ২০ বছর বয়স পর্যন্ত তারা দুই থেকে তিন সন্তানের জননী হতেন। ধুবড়ি, মানকাচর, নগাঁও, মঙ্গলদৈ প্রভৃতি জেলায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাল্য বিবাহ বেড়েছিল। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে আমার সরকার খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। বহু বাবা-মা আৰ্থিকভাবে দুৰ্বলতার দরুন তাঁদের কন্যা সন্তানদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দিয়ে দিতেন।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ সব নানা বিষয় ভেবে রাজ্যের সব ছাত্ৰীর জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্ৰে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করেছি। নিযুত মইনা-র মাধ্যমে সব ছাত্ৰীর স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়িত করেছি। কোনও মেয়ে এখন অর্থের অভাবে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে না। এমন এক বিকশিত অসম আমি গড়ে তুলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন থেকে অসমের মেয়েদের জীবিকার সন্ধানে আর বহিঃরাজ্যে যেতে হবে না। অসমে বেশ কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। একটি সমতার অসম চাইছি আমি, যে অসমে মেয়েদের ঘরের লক্ষ্মী বলে ভাবা হয়।’
মুখ্যমন্ত্ৰী ড, শর্মা বলেন, ‘মহিলার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের ব্যাপারে আমার সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আমি কখনও মেনে নিতে পারি না, এক মেয়েকে বিয়ে করার পর সেই পুরুষটি দ্বিতীয়, তৃতীয় বিয়ে করবে। এ ব্যপারে এখন থেকে আরও কঠোর হবে সরকার। দ্বিতীয় বিয়ে করলে ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাবাসে থাকতে হবে। তিনি যে ধৰ্মেরই হোন না-কেন, শাস্তি পেতেই হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্য বহুজনের সঙ্গে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. রণোজ পেগু, রাজ্যসভার সদস্য ভুবনেশ্বর কলিতা, গুয়াহাটির সাংসদ (লোকসভা) বিজুলি কলিতা মেধি, বিধায়কগণ যথাক্রমে সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, অতুল বরা, হেমাঙ্গ ঠাকুরিয়া এবং দিগন্ত কলিতা প্রমুখ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উচ্চ পদস্থ আধিকারিকবৃন্দ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস