কেন্দ্রের যথেচ্ছ বিনিয়োগ সত্বেও উন্নয়নের সব পথ আটকে রেখেছে রাজ্য, কটাক্ষ রাহুলের
কলকাতা, ৬ ডিসেম্বর (হি.স.): কেন্দ্রের যথেচ্ছ বিনিয়োগ উন্নয়নের সব পথ আটকে রেখেছে রাজ্য, কটাক্ষ রাহুলের। “কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে নিতে উদারভাবে বিনিয়োগ করছে কিন্তু তৃণমূল সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় উন্নয়নের সব পথ আটকে রেখেছে।” রেল ও মেট্রো প্রকল
কেন্দ্রের যথেচ্ছ বিনিয়োগ সত্বেও উন্নয়নের সব পথ আটকে রেখেছে রাজ্য, কটাক্ষ রাহুলের


কলকাতা, ৬ ডিসেম্বর (হি.স.): কেন্দ্রের যথেচ্ছ বিনিয়োগ উন্নয়নের সব পথ আটকে রেখেছে রাজ্য, কটাক্ষ রাহুলের।

“কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে নিতে উদারভাবে বিনিয়োগ করছে কিন্তু তৃণমূল সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় উন্নয়নের সব পথ আটকে রেখেছে।” রেল ও মেট্রো প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদাসীনতা ও ব্যর্থতা নিয়ে শনিবার এই অভিযোগ করলেন বিজেপি-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন যে ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস সর্বত্র প্রচার করছে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনা করছে, অথচ রেলমন্ত্রী গতকাল রাজ্যসভায় যে লিখিত জবাব দিয়েছেন তা প্রমাণ করে যে প্রকৃত বঞ্চনার জন্য দায়ী রাজ্য সরকার নিজেই।

তিনি জানান, রেল ও মেট্রো প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গে মূল সমস্যাটি জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের ব্যর্থতা। রেলমন্ত্রী যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন রেল এবং মেট্রো প্রকল্পের জন্য মোট ৪ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমি প্রয়োজন হলেও রাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে রেলের হাতে তুলে দিয়েছে, যা প্রয়োজনের মাত্র ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৩ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমি দিতে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই জমির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রেল ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে রূপরেখা তৈরি করেছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এ কেমন উন্নয়নের সরকার, যে নিজের দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ।

এই প্রসঙ্গে প্রকল্পভিত্তিক উদাহরণ দিতে গিয়ে রাহুল সিনহা বলেন, নবদ্বীপ ঘাট থেকে নবদ্বীপ ধাম পর্যন্ত রেললাইন তৈরির জন্য রেল ইতিমধ্যেই ৫০ কোটি টাকা রাজ্যকে দিয়েছে, কিন্তু ১০৬ হেক্টর জমির এক ইঞ্চিও এখনো অধিগ্রহণ হয়নি। সাঁইথিয়া বাইপাস জমির অভাবে আটকে আছে। নলহাটি থেকে রানাঘাট তৃতীয় লাইন তৈরির জন্য ১৩ হেক্টর জমি দরকার হলেও রাজ্য জমি না দেওয়ায় প্রকল্প থমকে আছে।

কালিয়াগঞ্জ থেকে বুনিয়াদপুরে ১৬৭ হেক্টর জমি প্রয়োজন, কিন্তু প্রকল্প এক পাও এগোয়নি। ক্যানিং থেকে বাগানখালি প্রকল্পে ১৮ হেক্টর জমি না পাওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। আদ্রা থেকে রুকনি প্রকল্পে মাত্র ৫ হেক্টর জমি দরকার, তা-ও রাজ্য সরকার দিতে পারেনি।

কালীপাহাড়ি থেকে বখতনগর প্রকল্প, দোমোহনী থেকে চ্যাংড়াবান্ধা প্রকল্প, আনারা থেকে রুকনি ফ্লাইওভার এবং গৌরিনাথ ধাম থেকে পুরুলিয়া ফ্লাইওভার—সব ক্ষেত্রেই জমি না পাওয়ায় কাজ বন্ধ। চন্দনপুর থেকে শক্তিগড় ফোর্থ লাইন প্রকল্পও মাত্র ৫ হেক্টর জমির অভাবে শুরু করা যায়নি।

তিনি বলেন, তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর লাইনের কাজ প্রায় শেষ হলেও ভাবাদিঘির কাছে মাত্র ৯০০ মিটার জায়গায় একটি দিঘি থাকার কারণে ২০১৬ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত কাজ বন্ধ ছিল, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সম্প্রতি কাজ শুরু হলেও আট বছরের বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

রাহুল সিনহা জানান, যখন মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি এই প্রকল্পের জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন, কিন্তু কোনও কাজই হয়নি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় রেল দফতর আবার প্রকল্পটি হাতে নিলেও আজ পর্যন্ত রাজ্যের অনীহার কারণে কাজ এক পা-ও এগোয়নি।

উত্তরবঙ্গেও একই হাল। সেবক থেকে সিকিম পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটারের রেললাইন তৈরিতে ১৩৫ হেক্টর জমি দরকার, সিকিম অংশে পুরো জমি দিয়ে প্রকল্প সম্পূর্ণ হলেও সেবকে মাত্র ৭ হেক্টর জমি না দেওয়ায় কাজ বন্ধ।

মেট্রো প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত কাজ এগোলেও এসপ্ল্যানেড থেকে ইডেন গার্ডেন পর্যন্ত কাজ আটকে আছে শুধুমাত্র বি. সি. রায় মার্কেটের কারণে। রেল ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্যকে দিয়ে দিলেও রাজ্য সরকার জায়গা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেনি।

নিউ গড়িয়া থেকে দমদম ৩২ কিলোমিটার মেট্রো রুটেও চিংড়িহাটায় তিনটি পিলার বসানো সম্ভব হয়নি কারণ রাজ্য সরকার রাতে কয়েক ঘণ্টা সময় দিতে রাজি নয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ রাতে মাত্র ছয় রাত সময় চাইলে-ও রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি। ফলে বেলেঘাটা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সম্প্রসারণ আটকে আছে। দক্ষিণেশ্বর থেকে ব্যারাকপুর সম্প্রসারণের কাজ জমির কারণে শুরুই করা যায়নি।

নোয়াপাড়া থেকে বারাসাত পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণেও মাইকেল নগর থেকে বারাসাত পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের ব্যর্থতা প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে থামিয়ে রেখেছে।

রাহুল সিনহা বলেন, এই উদাহরণগুলোই প্রমাণ করে যে রাজ্য সরকার কেবল মুখে উন্নয়ন বলে, কাজে উন্নয়ন ঘটাতে কোনও আগ্রহ নেই। তিনি বলেন, রেলের বিনিয়োগের তথ্য আরও গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৪ হাজার ৩৮০ কোটি, যেখানে বিজেপি সরকারের সময়ে শুধু ২০২৫-২৬ সালেই কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে দিয়েছে ১৩ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা, যা আগের সরকারের তুলনায় তিনগুণ।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande