যুবসমাজে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে, কেন্দ্রীয় সহায়তায় দুর্গাপুর এনআইটিতে 'স্পিক্ ম্যকে'র খ্যাতনামা শিল্পীদের নিয়ে ৫ দিনের কর্মশালা
দুর্গাপুর, ১৮ মার্চ (হি. স.) ভারতীয় সংস্কৃতিকে যুব সমাজে প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র সরকার। দ
যুবসমাজে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে, কেন্দ্রীয় সহায়তায় দুর্গাপুর এনআইটিতে 'স্পিক্ ম্যকে'র খ্যাতনামা শিল্পীদের নিয়ে ৫ দিনের কর্মশালা


দুর্গাপুর, ১৮ মার্চ (হি. স.) ভারতীয় সংস্কৃতিকে যুব সমাজে প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র সরকার। দেশের বিভিন্ন নামীদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খ্যাতনাম জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ, তথ্য সংস্কৃতি, ক্রিড়া ও যুবকল্যান মন্ত্রক। করোনা আবহের পর আবারও নতুন করে ওই তিন মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায় স্পিক ম্যাকের ত্বত্ত্ববধানে যুবসমাজে ভারতীয় সংস্কৃতির উৎসাহ দিতে শুরু হয়েছে কর্মশালা। সম্প্রতি এমনই এক মনজ্ঞ কর্মশালা চলছে দুর্গাপুর জাতীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় এনআইটিতে৷ সন্ধ্যায় সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে পড়ুয়াদের নিখরচায় প্রশিক্ষনের কর্মশালা। আর তাতেই উৎসাহ বাড়ছে যুবসমাজের মধ্যে।

প্রসঙ্গত, স্পিক ম্যাক মুলত হেরিটেজ ক্লাব। যার পুরো নাম সোসাইটি ফর দ্যা প্রোমোশন অফ ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল মিউজিক এন্ড কালচার অ্যামাঙ্গেস্ট ইয়ুথ। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন দিল্লী আইআইটির বরিষ্ঠ অধ্যাপক কিরন শেঠ। উদ্দেশ্য ছিল ক্লাসিকাল, লোকনৃত্য, ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে যুবসমাজকে উৎসাহি করা। ২০০৯ সালে তাঁর ওই অবদানের জন্য পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি শাখা তৈরী হয়। দেশের বিভিন্ন নামী দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খ্যাতনাম জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান ও কর্মশালা করা হয়। যার খরচ বহন করে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ, তথ্য সংস্কৃতি, ক্রিড়া ও যুবকল্যান মন্ত্রক। ২০১৪ সাল থেকে দুর্গাপুর এনআইটিতে এধরনের কর্মশালা শুরু হয়েছে। ওইসময় শুধু অনুষ্ঠান ও পড়ুয়াদের বিভিন্ন নৃত্যও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব হত। ২০১৯ সাল থেকে যুবসমাজের মধ্যে খ্যাতনাম শিল্পীদের দিয়ে নিখরচায় হাতে কলমে শেখানোর কর্মশালা শুরু হয়। করোনা আবহে এধরনের কর্মশালা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে এই কর্মশালা পুনরায় শুরু হয়। ওই বছর পটচিত্র তৈরী শেখানোর ওপর কর্মশালা হয়েছিল। চলতিবছর গত ১৫ মার্চ থেকে ৫ দিনের এই কর্মশালা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। এবারে কারু শিল্প ছৌনৃত্যের মুখোশ তৈরী ও ভারতনাট্যম নৃত্য প্রশিক্ষণের কর্মশালা রয়েছে। ছৌনৃত্যের মুখোশ তৈরী করা শেখাচ্ছেন পুরুলিয়ার বিখ্যাত শিল্পী জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ধর্মেন্দ্র সুত্রধর।

তিনি বিগত ৩২ বছর ধরে এই কারু শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রামায়ন, মহাভারত কিম্বা পৌরানিক কাহিনীর নানান চরিত্রের মুখোশ তৈরীর পাশাপাশি নিজস্ব কিছু সৃষ্টি মুখোশ তৈরী করেছেন। পরুবেশ দুষন, অসহায় কৃষক, নজরকাঠি, সৎ অসৎ সবই তাঁর নিজস্ব সৃষ্টি। ২০১৮ সালে মুসুর ডাল, বিউলি ডাল, চাল, ধান, পাঠ ও রং দিয়ে ঘটৎকচ্ তৈরী করে জাতীয় পুরস্কার সম্মানে নির্বাচিত হন। চলতি বছর কয়েকদিন আগেই ওই পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও রাজ্য সরকারের কারু শিল্প প্রতিযোগিতায় ২০১৫ সাল থেকে পর পর তিনবার প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৯-২০ সালে এমএসএমই থেকে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২২ সালে জিআই রেজিস্টার পায় তার শিল্পকলা। এনআইটিতে ধর্মেন্দ্রবাবুর প্রশিক্ষনে ৪০ জনের ওপর আসানসোল, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া, বীরভুম, কোলকাতা সহা রাজ্যের নানান প্রান্তের পড়ুয়া ও উৎসাহী যুক যুবতীরা অংশ নিয়েছে। পাঁচদিনের নির্দিষ্ট সময়ে দুর্গাপুর এনআইটির কমিউনিটি হলে প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিন প্রশিক্ষক তথা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ধর্মেন্দ্র সুত্রধর বলেন, খুব ভাল লাগছে। যেখানে দেশ বিদেশের প্রযুক্তি কারিগরি তৈরী হয়। সেখানে পড়ুয়াদের মধ্যে ছৌনৃত্যের মুখোশ তৈরী আগ্রহ দেখে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এই শিল্পরপ্ত করতে পারলে, যুবক যুবতীরা স্বনির্ভরতার আশা দেখবে। এছাড়াও ভারতনাট্যমের ওপর কর্মশালা রয়েছে। যার প্রশিক্ষক দুরদর্শন খ্যাত ভারতনাটম্য শিল্পী ডঃ লক্ষ্মী রামস্বামী। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অতিথী অধ্যাপিকা। ভারতনাট্যামের ওপর মাস্টারডিগ্রি পড়ুয়াদের জন্য একাধিক পাঠ্যবই লিখেছেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট পেয়েছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে সিনিয়র স্কলারসিপ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর নিজস্ব ভারতনাট্যম নৃত্য শেখানোর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নৃত্য শিখে দেশ বিদেশে নানান ডিগ্রি ও সম্মান পেয়েছেন। তামিলনাড়ুর সঙ্গীত নাট্য অ্যাকাডেমির 'কালাইমামনি' পুরস্কারও পেয়েছেন লক্ষ্মী রামস্বামী। সরকারের সহযোগিতায় দু হাজার বছর আগে 'সঙ্গম' পয়েট্রির ওপর গবেষনা করে নৃত্য উপস্থাপনা করেছেন। শাস্ত্রীয় বিষয় ছাড়াও নানান বিষয়ে গবেষনা করে নৃত্য উপস্থাপনা করেছেন তিনি। সঙ্গে এসেছেন তাঁর ছাত্রী যাজ্ঞসেনী চট্টোপাধ্যায়। গত ১৫ মার্চ থেকে দুর্গাপুর এনআইটিতে দেড়'শ পড়ুয়া প্রশিক্ষন দিচ্ছেন। এদিন ডঃ লক্ষ্মী রামস্বামী বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির নৃত্য শিল্পের প্রসার ঘটানোই মূল লক্ষ্য। তার জন্য কর্মশালা। এবারে নতুন, পুরোনো, যুবক যুবতী শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন কিছু নৃত্যের শিল্পকলা চর্চা ও তুলে ধরা হচ্ছে। প্রশিক্ষনের শেষদিনে এনআইটির অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের নৃত্য প্রদর্শনী সুযোগ থাকবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ দেখে খুব ভালো লাগছে। এনআইটির স্পিক ম্যাকের এই কর্মশালার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক জীতমূন্য চক্রবর্তী ও নীলাঞ্জন চট্টরাজ বলেন,এধরনেরব কর্মশালার উদ্দেশ্য, যুবসমাজ নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতি ও শিল্পকলার প্রসার ঘটানো। সমাজের সর্বস্তরের উৎসাহি যুবক যুবতীদের মধ্যে ক্লাসিকাল, লোকনৃত্য, কারুশিল্পের বিনামূল্যে প্রশিক্ষনের কর্মশালা রাখা হয়েছে। এছাড়াও তিনদিন সন্ধ্যায় সিতার, ফ্লুট, ওডিসি নৃত্য, ভারতনাট্যম, হিন্দুস্তানি ভোকালিস্টের ওপর মনজ্ঞ অনুষ্ঠান রয়েছে।

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব




 

 rajesh pande