নয়া ছক চিনের! ভারতীয় গাড়ি-সহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের নিয়ন্ত্রণে এবার বাংলাদেশে চিনা কোম্পানি
কিশোর সরকার ঢাকা, ২৭ এপ্রিল (হি.স.): ভারতকে রুখতে এবার কী তাহলে নতুন ছক কষছে চিন! অন্তত চিনের কোম্পা
এবার বাংলাদেশে চিনা কোম্পানি


কিশোর সরকার

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল (হি.স.): ভারতকে রুখতে এবার কী তাহলে নতুন ছক কষছে চিন! অন্তত চিনের কোম্পানির বাংলাদেশে অতি তৎপরতার পর এমনটাই মনে হচ্ছে। ভারতীয় গাড়ি-সহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে চিনা কোম্পানি। যৌথ ভাবে গাড়ি তৈরির কারখানা প্রস্তুত করতে চাইছে চিনা তিন কোম্পানি। আকিজ গ্রুপ ও এসিআই মটরস-সহ বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি কোম্পানি যৌথ কারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়েও এসেছে। মূল যন্ত্রাংশ চিনে তৈরি হলেও, এর পুরো অ্যাসেম্বেল হবে বাংলাদেশে।

ভারতের বাজারে চিনা কোম্পানির গাড়ি রফতানির ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা রয়েছে ভারতে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর চিনা কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও। তাই বিকল্প পন্থা হিসেবে বাংলাদেশে যৌথ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ভারতের গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি, মোবাইল তৈরির কারখানা-সহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে চিন। ভারত বিশ্বের দামী ব্রান্ডের মোবাইল সহ ইলেট্রনিক্স কোম্পানির পণ্য উৎপাদনে গিয়েছে। বৈদ্যতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা-সহ বিশ্বমানের নামিদামি অনেক কোম্পানি ভারতে যৌথ এবং একক মালিকানায় কারখানা তৈরি করছে। আবার অনেক কোম্পানি ভারতে কারখানা তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এতে চিনের অনেক পণ্যের বাজার ছোট হয়ে এসেছে।

বাংলাদেশে গাড়ি, মোবাইল, লিথিয়াম ব্যাটারা-সহ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার ছোট হলেও যৌথ মালিকানায় কারখানা তৈরি করে উৎপাদন করে ভারত-সহ পার্শ¦বর্তী দেশগুলিতে রফতানি করতে পারবে। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা।

চিনের তিনটি অটোমোবাইল কোম্পানির প্রতিনিধি-সহ আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের ১৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বিনিয়োগের আগ্রহ জানিয়ে গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে এসে ছিলেন। তারা বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এর মধ্যে চিনা কোম্পানি চেরি অটোমোবাইল বাংলাদেশে নিজেদের বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করে, আর জিয়াংহুয়েই অটোমোবাইল কোং লিমিটেড এবং ফোটন মটরস ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস প্রস্তুতকারক কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এছাড়া ফর্কলিফট উৎপাদনে বিশেষায়িত আরেকটি চিনা কোম্পানি–-হেলি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সাথে যৌথভাবে এদেশে একটি কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একইভাবে চিনের গোশান হাইটেক কোম্পানি লিমিটেড উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য একটি কারখানা স্থাপন করতে চায় বলে জানিয়েছে।

চিনা প্রতিনিধি দলটি গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশে আসে, গত ২৪ এপ্রিল তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। চিনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় বৈঠকে চেরি অটোমোবাইল কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ও লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপ সহ একাধিক কোম্পানি। চিনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিটিং করেছেন বাংলাদেশের এনার্জি প্যাক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ। তিনি বলেন, তারা চিনের জেএসি এবং হেলি কোম্পানির সঙ্গে রেফ্রিজারেটেড কাভার্ড ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান ও স্ট্রিট লাইট ম্যাইনটেনেন্স এর কাজে ব্যবহৃত ক্রেন-সহ স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল উৎপাদনে কাজ করছেন। হুমায়ুন রশিদ বলেন, চিনের আনহুই প্রাদেশিক সরকার চায় বাংলাদেশে তাদের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়ুক। চিনা কোম্পানির সঙ্গে আমরা ইলেকট্রিক বাস ও ইলেকট্রিক ট্রাক সংযোজন করবো। ইতোমধ্যে আমরা ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আরও ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশের এসিআই মটরসও চিনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহন উৎপাদন ও সংযোজন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চিনা কোম্পানিগুলোর সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশের ফোটন প্রি-ম্যানুফ্যাকচারিং করবে। এছাড়া, একটি চিনা কোম্পানি লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে আগ্রহী, এসিআই মটরস তাদের সাথে যৌথভাবে লিথিয়াম ব্যাটারিও উৎপাদন করবে। চিনা চেরি অটোমোবাইল কোম্পানির সাথে যৌথভাবে যাত্রীবাহী বাস উৎপাদনেও আগ্রহী।

বিসিসিসিআই এর মহাসচিব আল মামুন মৃধা বলেন, চিনের কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজতে এসেছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তারা চিনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন- জানান তিনি।

ব্যবসায়ী আল মামুন মৃধা জানান, আনহুই প্রদেশের একটি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত (এগ্রো প্রসেসিং) কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা প্রতিনিধিদলে ছিলেন। তারা বাংলাদেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। গত বছর বাংলাদেশে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সংযোজন কারখানা স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করে চিন। আগস্টে, ঢাকায় চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, চিনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি সংযোজন প্ল্যান্ট স্থাপন করলে– একটি সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশ করবে, এ থেকে বাংলাদেশও লাভবান হবে। বৈঠকে চিনের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়েই জিয়াওমিং। বাংলাদেশে চিনা দূতাবাসের বাণিজ্যিক কাউন্সেলর সং ইয়াং-ও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

হিন্দুস্থান সমাচার।




 

 rajesh pande