।। রাজীব দে ।।
ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : ঐতিহাসিকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। এই দেশে আবহমানকাল ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে দেশ স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কিছু স্বার্থান্বেষীর অপতৎপরতায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আগামী অক্টোবরে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সহ সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে জনসংখ্যায় স্বল্পতার অস্তিত্ব আছে, যদিও কমিশন লঘু বা গুরুর পরিবর্তে সম-নাগরিকতায় বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সবাইকে সমান নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও কেউ যদি অসহায় বোধ করেন, তা-হলে দেশের মানবাধিকার সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কোথাও বাড়িঘরে, কোথাও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে, কোথাও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে দুর্গাপূজা উদযাপন ঘিরে কোথাও কোথাও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্ৰে জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুটি মন্দিরে নির্মীয়মান দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙ্গা বাজারের গুড়পট্টি এলাকায় অবস্থিত ‘ভাঙ্গা বাজার সার্বজনীন হরি মন্দির’ এবং ভাঙ্গা থানার সামনে অবস্থিত ‘ভাঙ্গা সার্বজনীন কালী মন্দির’-এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের গৌরীপুরে দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুরের খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। কমিশন ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্ত করতে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছে।
কমিশন আসন্ন দুর্গাপূজায় সব মণ্ডপে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন মনে করে, সারা দেশব্যাপী বিশাল সংখ্যক (৩২,৬৬৬টি) পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলাকাভিত্তিক সক্ষমতা যাচাই করে উপযুক্ত করে তোলা বা সহযোগী শক্তি গঠনের মাধ্যমে দায়িত্ব প্রতিপালন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিতকরণ, পূজানুষ্ঠান নির্বিঘ্ন সম্পন্ন করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন, সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
কমিশন বিশ্বাস করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিপূর্ণরূপে বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস