কুমারঘাট (ত্রিপুরা), ১৪ জানুয়ারি (হি.স.) : মঙ্গলবার পৌষ সংক্রান্তি। হিন্দু ধর্মের বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে একটি অন্যতম পার্বণ। শাস্ত্রমতে এইদিনে সূর্যদেব দক্ষীণ থেকে উত্তরে অগ্রসর হন। তাই এটিকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলা হয়। আর এই দিনেই শরশয্যায় মৃত্যু বরণ করেছিলেন মহাভারতের ভীষ্ম।
এই শুভ দিনে প্রতি বছরই বিভিন্ন জায়গায় পরিলক্ষিত হয় নগর কীর্তন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার ফটিকরায়ের রাজনগর গ্রামে নগর কীর্তন দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি কমিটির তরফ থেকে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পরিক্রমা করে সেই নগর কীর্তন। খোল, করতাল আর কাঁশরের যুগলবন্দিতে হরিনামে মাতেন সকলেই। কীর্তনে বের হয়ে এলাকার এক প্রবীণ ভক্ত জানালেন, যুগযুগ ধরেই পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে চলে আসছে এই নগর কীর্তন। সকলের মঙ্গল কামনাতেই আয়োজন করা হয় এই কীর্তনের। বর্তমান সময়ে এই কীর্তনকে ঘিরে যুব সমাজের মাঝেও চরম উৎসহ দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
বাড়ি বাড়ি নাম কীর্তনের সাথে দেওয়া হয় হরির লুটও। তিল্লাই, বাতাসা, কদমা, নারকেল সহ বিভিন্ন ফলমূল নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদনের পর তা লুট হিসেবে বিলিয়ে দেওয়া হয় ভক্তদের মাঝে। আর এই হরির লুট সংগ্রহেই ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে কে কার থেকে বেশি লুট ধরতে পারে বা লুটের নারকেলটা কে নেবে এনিয়ে হুড়ুহুড়ি পরে যায় কীর্তনের আসরে।
সংক্রান্তির এই কীর্তনে গ্রামের একটি মহিলা কীর্তনীয়া দলকেও দেখা যায় নগর কীর্তনে সামিল হতে। তাদের সঙ্গ দিয়েছেন পুরুষরাও। কীর্তন পরিচালনা থেকে লুট সংগ্রহ সবকিছুতেই উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে ছিলেন মহিলারা। সেখানে থাকা এক মহিলা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই এলাকায় শুরু হয়েছে হরিনামের ধুম। কীর্তনকে ঘিরে বেশ সাড়া মিলছে বলে জানালেন ওই মহিলা।
শুধু রাজনগর এলাকাতেই নয়। ফটিকরায় বিধানসভার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এদিন পরিক্রমা করে নগর কীর্তন। ইট পাথরে মোড়া শহরে ধর্মীয় সংষ্কৃতির চল আগের মতো না থাকলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো টিকে রয়েছে সেই পুরনো ঐতিহ্য। সংক্রান্তির নগর কীর্তনকে ঘিরে বেশ সাড়া পড়ে গ্রাম ত্রিপুরায়।
হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ