
শিলচর (অসম), ৭ নভেম্বর (হি.স.) : শুক্রবার সকাল থেকেই দেশাত্মবোধে মুখর হয়ে ওঠেছে সমগ্র কাছাড় জেলা। ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জেলার স্কুল, সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে একযোগে মুখরিত হয়ে ওঠেছে কালজয়ী এই সংগীতে।
কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী এই উদ্যাপন শুরু হয় এক অনুপ্রেরণামূলক আবহে। তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের, আঞ্চলিক কার্যালয়, শিলচরের স্থায়ী লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ‘বন্দে মাতরম’ সংগীত বাজিয়ে সূচনা হয় দিনের কর্মসূচি। শিলচৰ শহরের নানা প্রান্তে ভেসে আসে সেই চেনা সুর, যা দেশাত্মবোধের আবহকে আরও প্রগাঢ় করে তুলে এবং গড়ে তুলে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানের পরিবেশ।
পরবর্তীতে জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে পরিপূর্ণভাবে আয়োজিত হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য, গণবণ্টন, ভোক্তা বিষয়ক, খনিজ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস, কাছাড়ের জেলাশাসক মৃদুল যাদব। এছাড়া ছিলেন প্রশাসনের বরিষ্ঠ আধিকারিকবৃন্দ, সরকারি কর্মচারী, শিল্পী ও অতিথিগণ।
সকাল ১০টায় একসঙ্গে মন্ত্রী কৌশিক রায়, বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস, জেলাশাসক মৃদুল যাদব এবং উপস্থিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কণ্ঠে একযোগে ধ্বনিত হয় ‘বন্দে মাতরম’। এর পর এলইডির পর্দায় প্রত্যক্ষ সম্প্রচার করা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মন্ত্রী কৌশিক রায় বলেন, ‘বন্দে মাতরম কেবল একটি গান নয়, এটি ভারতবর্ষের আত্মার হৃদস্পন্দন। ইতিহাসের পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ‘বঙ্গদর্শন’-এ প্রথম প্রকাশ করেন এই গান, যা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেল ভারতের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল।
ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস তাঁর ভাষণে বলেন, “‘বন্দে মাতরম’ আমাদের শিকড় ও আত্মত্যাগের অমর স্মারক। এই গান প্রতিটি ভারতীয়কে প্রেরণা জোগায় দেশগঠনের পথে নিবেদিত ও সৎভাবে কাজ করার জন্য। এটি আমাদের ঐক্যের বন্ধন, যা ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধে আমাদের একসূত্রে গাঁথে।”
সভার শুরুতে জেলাশাসক মৃদুল যাদব প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, আজকের দিনটি কাছাড়ের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা আমাদের সম্মিলিত গর্বকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, সাধারণ নাগরিক সকলের উপস্থিতি প্রমাণ করছে, দেশাত্মবোধ আজও কত জীবন্ত। স্বাধীনতা আন্দোলনের যে আবেগ একদিন ভারতীয়দের হৃদয় স্পন্দিত করেছিল, আজ তার প্রতিধ্বনি আবার শোনা গেছে।
উল্লেখ্য, আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০-তম পূর্তি উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী কর্মসূচি, যা চলবে ৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৭ নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। ভারতের ঐক্য ও অবিচল দেশাত্মবোধের প্রতীক এই গানই আগামী এক বছর ধরে দেশজুড়ে পালন করা হবে নানা রূপে।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অন্তরা সেন। তিনি সকল বিভাগ ও অংশগ্রহণকারীদের যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিপ্লব বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত ড. খালেদা সুলতানা আহমেদ, সহকারী আয়ুক্ত হেমাঙ্গ নবিস, ফুনলালঙ্গির চোরেই, অঞ্জলি কুমারী সহ কাছাড় জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস