জলজীবন মিশন প্রকল্পের পাইপ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বকেয়া, দুর্গাপুরের বন্ধের মুখে পাইপ তৈরির কারখানা
দুর্গাপুর, ১৮ জুন (হি.স.): জলজীবন মিশন প্রকল্পের পাইপ বিক্রি করা হয়েছিল। প্রায় ১ বছর ধরে বকেয়া প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। বকেয়া পেমেন্ট না মেলায় দেনায় জর্জরিত পাইপ তৈরির কারখানা কর্তৃপক্ষ। আর্থিক সঙ্কটে সাড়ে ৪ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকদের মজুরী দিতে চ
জলজীবন মিশন প্রকল্পের পাইপ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বকেয়া, দুর্গাপুরের বন্ধের মুখে পাইপ তৈরির কারখানা


দুর্গাপুর, ১৮ জুন (হি.স.): জলজীবন মিশন প্রকল্পের পাইপ বিক্রি করা হয়েছিল। প্রায় ১ বছর ধরে বকেয়া প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। বকেয়া পেমেন্ট না মেলায় দেনায় জর্জরিত পাইপ তৈরির কারখানা কর্তৃপক্ষ। আর্থিক সঙ্কটে সাড়ে ৪ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকদের মজুরী দিতে চরম সঙ্কটে তারা। বন্ধের মুখে দুর্গাপুরে আরও একটি বেসরকারি পলিমার পাইপ তৈরির কারখানা। চরম অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে কারখানার ১২০ শ্রমিক। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আর এই বকেয়ার দরুন রাজ্যকে দুষে কড়া সমালোচনায় সরব বিজেপি।

প্রসঙ্গত, জলসঙ্কট রুখতে বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার। বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌ়ছে দিতে কেন্দ্র সরকার ২০১৯ সালে জলজীবন মিশন প্রকল্প চালু করেছিল।

জলজীবন মিশন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যগুলি হল প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল সরবরাহ করা। এই প্রকল্পের অধীনে জলের গুণমান নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে মানুষ দূষিত জল পানের কারণে অসুস্থ না হয়। জল জীবন মিশন প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল জল সংরক্ষণ করা। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জ করা এবং জলের অপচয় রোধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই প্রকল্পের অধীনে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হবে, যাতে তারা তাদের এলাকার জল সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারে। বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজটি করছে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় পাইপ পাতার কাজও হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে সেই কাজ সম্পুর্ন করার টার্গেট ছিল। সম্প্রতি, অনেক গ্রামে এখনও সেই কাজ না হওয়ায়, জলজীবন মিশন প্রকল্পের কাজে ২০২৮ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে চলছে সেই কাজ। আর সেই কাজের রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বরাত পাওয়া এজেন্সীকে পাইপ সরবরাহ করতো দুর্গাপুরের আরআইপি প্লটের একটি বেসরকারি পলিমার পাইপ তৈরির সংস্থা। অভিযোগ গত ৮ মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কাজ করা এজেন্সীর কাছে পলিমার পাইপ জোগান দেওয়ার দরুন বকেয়া প্রায় ৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। আর এই বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে দুর্গাপুরের ওই পলিমার সংস্থাটি। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে আধুনিকমানের মেশিন বসিয়ে বিপাকে পড়েছে। ঋণের টাকে পরিশোধ করতে মাথায় হাত পড়েছে। এমনকি বিদ্যুৎ বিল মেটাতে পারছে না বলে অভিযোগ ওই সংস্থার। একই সঙ্গে কারখার শ্রমিকদের মজুরী দিতে সঙ্কটে পড়েছে ওই সংস্থা। যার ফলে গত মার্চ মাস থেকে থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ। ওই বেসরকারি পাইপ তৈরির কারখানার চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুর স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রী এসোসিয়েশন সভাপতি গৌতম মিত্র বলেন, রাজ্যের বীরভুম, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলায় জলজীবন মিশন প্রকল্পের কাজে পাইপের জোগান দিয়েছি। গত ৮ মাস ধরে পাইপ জোগান দেওয়ার দরুন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে বীরভুম জেলায় ৬ টি এজেন্সীর কাছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা বকেয়া। দক্ষিন ২৪ পরগনায় ৫ টি এজেন্সীর কাছে প্রায় ৫৭ লক্ষ টাকা বকেয়া। ওই টাকা না পাওয়া চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছি। বিদ্যুৎ বিল মেটাতে পারছি না। দফতর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নোটিশ দিয়েছে। ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছি না। কিছুদিন আগে একটা জমি গচ্ছিত রেখে অ্যাকাউন্ট সচল রাখার আবেদন করেছি। তিনি আরও বলেন, মার্চ মাস থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষ শ্রমিকদের মাইনে দিতে না পারায় হাতছাড়া হচ্ছে। এখন এমনই পরিস্থিতি কারখানা বন্ধের মুখে। গোটা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে, রাজ্যের মুখ্য সচিব, মুখ্যমন্ত্রীর অফিস, রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী সকলকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখনও কোনো সদুত্তর উত্তর মেলেনি। এদিকে কারখানা বন্ধ হলে কাজ হারাবে ১২০ জন শ্রমিক। চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে ওই কারখানার শ্রমিকরা।দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘরুই বলেন, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে আর রাজ্য লুটে নিচ্ছে। মেলা- খেলায় খরচ করছে। রাজ্য সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে। কারখানার কাছে জিনিস কিনে বকেয়া মেটাচ্ছে না। ফলে বাংলার একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। এরজন্য দায়ী তৃণমূল সরকার আর মুখ্যমন্ত্রী। যদিও আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন,এটা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের এক্তিয়ার ভুক্ত নয়। তবুও অন্যভাবে যাতে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেটা দেখছি।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা




 

 rajesh pande